মায়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯৪ জনে দাঁড়িয়েছে, আহত ১ হাজার ৬৭০ জন, বার্মার জুন্টা প্রশাসন শনিবার এই খবর জানিয়েছে।
শুক্রবার মায়ানমারে পরপর ভূমিকম্পে ৬৯৪ জন নিহত এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর শনিবার সকালে ভারত থেকে প্রায় ১৫ টনের ত্রাণসামগ্রী, যার মধ্যে রয়েছে প্রস্তুত খাবার, ত্রিপল সহ অন্যান্য সামগ্রী রয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে পরপর বেশ কয়েক বার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে বার্মা, থাইল্যান্ড সহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। দুই দেশের বেশ কিছু শহরে অসংখ্য বহুতল, সেতু, ওভারব্রিজ ধসে পড়েছে। তছনছ হয়ে গিয়েছে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককের বেশ কিছু অংশ। শুক্রবার রাত পর্যন্ত বার্মায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৪৪। গুরুতর আহত ৭৩২। থাইল্যান্ডে মৃতের সংখ্যা ৮ হলেও, অন্তত ১১৭ জনের কোনও খোঁজ মিলছে না। মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯৪ জনে দাঁড়িয়েছে, আহত ১ হাজার ৬৭০ জন, বার্মার জুন্টা প্রশাসন শনিবার সকালে এই খবর জানিয়েছে।
ব্যাঙ্ককের বেশ কিছু নির্মীয়মাণ বহুতল ধসে পড়েছে তার নিচে শতাধিক নির্মাণ শ্রমিক আটকে পড়েছেন বলে খবর।
জোড়া এই ভূমিকম্পের তীব্রতা রিখটার স্কেলে ধরা পড়েছে ৭.৭ ও ৬.৪। মার্কিন সংস্থা এই হিসাব দিলেও ভারতের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি’ জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে প্রথম কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৫ এবং দ্বিতীয়টির ৭। দু’টি কম্পনের ক্ষেত্রেই উৎপত্তিস্থল ছিল মাটির ১০ কিলোমিটার নিচে। ভারতের উত্তর পূর্ব অংশ সহ বাংলাদেশ ও চীনের দক্ষিণ পশ্চিম অংশের বিস্তীর্ণ এলাকায় কম্পন অনুভূত হয়েছে।
ভূমিকম্প পরবর্তী কম্পন বা ‘আফটার শকের’ সম্ভাবনা নিয়ে আতঙ্কে সাধারণ মানুষ। কারণ দু’বারের পর আরও বেশ কয়েকবার কেঁপে উঠেছে বিস্তীর্ণ এলাকার মাটি। স্থানীয়দের মতে, অন্তত ছ’বার কেঁপেছে মাটি ভয়ে ঘর ছাড়া হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। ইতিমধ্যে বার্মার জুন্টা প্রশাসন দেশে ভূমিকম্প কবলিত ছয়টি প্রদেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছে। গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে এদেশে বিদ্রোহীদের দখলে থাকা অঞ্চলগুলিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিস্থিতি কেমন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। সেই সমস্ত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানোর সম্ভাবনা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মহল। জরুরি পরিস্থিতিতে শুক্রবার বার্মার জাতীয় বিমান সংস্থা বেশ কয়েকটি উড়ান বাতিল করেছে। সরকারি তথ্য সূত্রে জানা গেছে, ভূমিকম্পের কারণে বার্মার পাঁচ শহরে অসংখ্য বহুতল ধসে পড়েছে, অন্তত দু’টি সেতু ভেঙে গিয়েছে এবং একটি জাতীয় সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধসে পড়া বহুতলের তলায় চাপা পড়ে রয়েছেন বহু মানুষ।
বার্মার মান্দালয় শহরকেই এই জোড়া ভূমিকম্পের মধ্যে প্রথমটির উৎকেন্দ্র বলে মনে করা হচ্ছে। দ্বিতীয়টির উৎকেন্দ্র বার্মার লকসকের ১৫১ কিলোমিটার পশ্চিমে। মান্দালয়ে ভূমিকম্পের প্রভাব ভয়াবহ। মান্দালয়ের থেকে অন্তত ৯০০ কিলোমিটার দূরে হওয়া সত্ত্বেও, থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে। শহরে ট্রেন, মেট্রো সহ অন্যান্য পরিবহণ ব্যবস্থা জরুরি ভিত্তিতে স্থগিত রেখেছে এদেশের সরকার। উল্লেখযোগ্যভাবে ভূমিকম্পের ফলে ব্যাঙ্ককে ভেঙে পড়েছে এক নির্মীয়মাণ বহুতল। তার ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে অনেক নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যুর আশঙ্কা । এখনও অনেকের খোঁজ পাওয়া যায়নি। থাইল্যান্ডের উপপ্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ধ্বংসস্তূপে অন্তত ৮১ জনের চাপা পড়ে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এখনও পর্যন্ত এই অঞ্চলে উদ্ধারকাজ চলছে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ অনুমান করেছে যে, ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। এদিকে, ভূমিকম্পের পর আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।
Comments :0