মণ্ডা মিঠাই / নতুনপাতা
ইতিহাস, নাটক ও সঙ্গীতে জাগরূক চেতনাবোধ: দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের কীর্তি
অরিজিৎ মিত্র
যিনি ইতিহাসের ধুলোমাখা পৃষ্ঠায় প্রাণ সঞ্চার করেছেন নাটকের ভাষায়, যিনি সুরের রূপে বাঙালির হৃদয়ে জাগিয়ে তুলেছেন মাতৃভূমির প্রেম—তিনি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়। কেবল নাট্যকার বা গীতিকার নয়, তিনি ছিলেন এক চেতনাবোধের অগ্রদূত, যিনি নিজের সৃষ্টির দ্বারা বাংলাকে দিয়েছিলেন সাহস, ভাষা ও গর্বের আত্মপ্রকাশ।
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সাহিত্যজগৎ ছিল বিচিত্র অথচ সুসংহত—ইতিহাস, সমাজ, রাজনীতি ও দেশপ্রেম এক সূক্ষ্ম সুরে বাঁধা পড়েছে তাঁর নাটক ও গানে। তাঁর রচনায় ইতিহাস যেন নিছক তথ্য নয়—তা হয়ে উঠেছে জীবন্ত চরিত্রের বর্ণমালা, যার মধ্যে রয়েছে গৌরব, বেদনা, সংগ্রাম ও জয়গাথা। তাঁর "চন্দ্রগুপ্ত", "মেবার পতন", কিংবা "রানা প্রতাপ সিংহ" কেবল নাটক নয়—তা ছিল বাঙালির গৌরবের অতীতকে নতুন করে জানার এক সেতু।
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সঙ্গীত, বিশেষত দেশাত্মবোধক গান, আজও প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে দোলা দেয়। "ধনধান্যে পুষ্পে ভরা" যেন বাংলা মাটির আত্মা, তাঁর সুরের প্রতিটি ছন্দে মিশে আছে বাংলার গন্ধ, বাংলার প্রাণ। তাঁর গান শুধু শিল্প নয়, তা এক জাতীয় চেতনার রণহুঙ্কার—যা কালের ব্যবধান পেরিয়ে আজও প্রাসঙ্গিক।
দ্বিজেন্দ্রলাল ছিলেন ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত, তবুও তাঁর হৃদয় ছিল মাতৃভূমির প্রতি নিবেদিত। তিনি পশ্চিমের শিক্ষা গ্রহণ করেও মননে ছিলেন পূর্বের সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। তাঁর কলমে ফুটে উঠেছে স্বাধীনতা, তারুণ্য ও আত্মবিশ্বাসের ছায়া।
একবিংশ শতাব্দীর তরুণ প্রজন্মের কাছে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় শুধু এক অতীত চরিত্র নন—তিনি একজন পথপ্রদর্শক, যিনি ইতিহাস ও সংস্কৃতির মাঝে এক আশ্চর্য সেতুবন্ধন ঘটিয়ে গেছেন। তিনি শিখিয়েছেন কিভাবে শিল্প হতে পারে প্রতিবাদ, এবং গান কিভাবে হতে পারে জাগরণের অস্ত্র।
দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ছিলেন বাংলার এক আলোকদ্রষ্টা, যিনি কলম ও সুরে গাঁথা রেখেছেন জাতির আত্মপরিচয়। তাঁর নাটকে যেমন ইতিহাসের হৃদয় আছে, তেমনি গানে আছে জনতার আশা আর আবেগ। তিনি কেবল এক সাহিত্যিক নন—তিনি বাংলার ইতিহাসের চেতনায় দীপ্ত এক অমর নাম।
নবম শ্রেণী, কল্যাণ নগর বিদ্যাপীঠ খড়দহ, কল্যাণ নগর খড়দহ উত্তর ২৪ পরগনা
Comments :0