Prakash Karat

‘পশ্চিমবঙ্গে হৃত জমি পুনরুদ্ধারে এগচ্ছে পার্টি

জাতীয়

’‘লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখেই গড়ে উঠেছিল ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ। কিন্তু এখন ধর্মনিরপেক্ষ বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে বৃহত্তর মঞ্চ গড়ে তোলা প্রয়োজন। ভোট রাজনীতির জাঁতাকলে আটকে না থেকে বৃহত্তর ভাবনার ভিত্তিতে এগিয়ে চলা প্রয়োজন ওই মঞ্চের।’’ সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে একথা বলেছেন সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য ও কো-অর্ডিনেটর প্রকাশ কারাত। এরই পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে কারাত বলেছেন, ‘‘ওই রাজ্যে হৃত জমি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে এগচ্ছে সিপিআই(এম)।’’ পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি’র বিরুদ্ধে ‘বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তিকে’ ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াসও চালাবে পার্টি বলে জানান কারাত।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের ভূমিকা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে কারাত বলেছেন, ‘‘লোকসভা ভোট মিটে যাওয়ার পর জাতীয় স্তরে ওই মঞ্চ কোনও আলোচনাতেই বসেনি। আসলে ওই মঞ্চের দলগুলির নিজেদের রাজ্যে আবার নিজস্ব সমীকরণ রয়েছে। তবে একথা ঠিক, ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ গঠন এবং সামগ্রিকভাবে না হলেও কয়েকটি রাজ্যে বিরোধী দলগুলির মধ্যে সমন্বয় গড়ে ওঠার ফলে লোকসভায় বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। আবার এর পরেই কতগুলি রাজ্যে বিধানসভা ভোট হয়। বিরোধীদের সবচেয়ে বড় বিপর্যয় হয় মহারাষ্ট্রে। ওই রাজ্যে বিরোধী মহাবিকাশ আঘাড়ি লোকসভা ভোটে ভালো ফল করার ফলে বিজেপি’র আসন সংখ্যা বিপুল হ্রাস পায়। অথচ এর ঠিক উলটো ফল হলো বিধানসভা নির্বাচনে।’’
আবার ওই ফলাফলের ভিত্তিতে কোনও সমাধান সূত্রে আসতে রাজি নন যে তাঁরা, সেকথা ঝাড়খণ্ড নির্বাচনের ফল উল্লেখ করে জানান কারাত। এপ্রসঙ্গে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য জানান, ‘‘বিভিন্ন রাজ্যের পরিস্থিতির মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। যেমন ঝাড়খণ্ডে বিরোধীদের অধিকাংশই ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের শরিক, তারা বিজেপি-কে হারাতে সক্ষম হয়েছে। আসলে বিধানসভা নির্বাচনগুলির ফলাফলের ভিত্তিতে সাধারণভাবে বলা যেতে পারে, বিজেপি তাদের হারানো জমি পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে। তবে আমি মনে করি, এর সঙ্গে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চকে সরাসরি দোষারোপ করা যায় না। কারণ ওই মঞ্চ গড়েই উঠেছিল লোকসভা ভোটের নিরিখে।’’ এরই পাশাপাশি ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে কারাত বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটের পর কীভাবে এগিয়ে চলা হবে এমন কোনও আলোচনা কিংবা ভাবনাচিন্তা ছিল না ওই মঞ্চের। ধর্মনিরপেক্ষ বিরোধী দলগুলির মধ্যে বৃহত্তর মঞ্চ কিংবা ঐক্য গড়ে ওঠা জরুরি। তবে সেই সময় রাজ্যভিত্তিক নির্বাচনের জন্য গড়ে তোলা হয়নি ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চকে। ফলে আগামী দিনে বৃহত্তর বিরোধী ঐক্য কিংবা মঞ্চকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে? আমার মনে হয়, মঞ্চের সমস্ত দল একসঙ্গে বসে আলোচনা করা উচিত। তাহলেই একটা সংগঠিত আকার নেবে।’’
কারাত জানান যে, ‘‘বিহার এবং তামিলনাডুতে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ রয়েছে। আবার উলটোদিকে, এটা মনে করার কোনও কারণ নেই যে, পশ্চিমবঙ্গে সিপিআই(এম) হাত ধরবে তৃণমূল কংগ্রেসের কিংবা দিল্লিতে আপ’র সঙ্গে সমঝোতা হবে কংগ্রেসের।’’ তিনি বলেন, ‘‘লোকসভা পরবর্তী সময়ে এখন মূল চ্যালেঞ্জ হলো, ওই মঞ্চ কি শুধুই নির্বাচনী সমঝোতা? তাহলে এক নির্বাচন থেকে আরেক নির্বাচনে ফারাক হবে। বিধানসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই সমঝোতা জটিল আকার নেবে। মঞ্চের অনেক শরিকই বিধানসভায় নিজেদের মধ্যে আসন সমঝোতায় যেতে রাজি হবে না। ফলে আমি মনে করি, বিরোধী মঞ্চ কখনোই নির্বাচনভিত্তিক হওয়া উচিত নয়। বরং বিরোধী ঐক্যের ভাবনা চালিয়ে যাওয়া উচিত, কারণ আমরা সবাই মোদী সরকার এবং বিজেপি’র বিরোধিতার লক্ষ্যে একজোট হয়েছিলাম।’’ সেই নরেন্দ্র মোদী সরকার এখনও কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন এবং বিজেপি-ই প্রধান শক্তি সেই সরকারের। সেই প্রসঙ্গ টেনে কারাত বলেছেন, ‘‘এখনও বিরোধীরা যদি দেশের গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো রক্ষার ক্ষেত্রে উদ্বিগ্ন হয়, তাহলে ধর্মনিরপেক্ষ বিরোধী দলগুলিকেও বৃহৎ আকারে ভাবতে হবে। আমার ধারণা, একমাত্র সেক্ষেত্রেই অভিন্ন পথের সন্ধান মিলবে। সেই মৌলিক ভাবনার দিকে নজর দেওয়া উচিত। তার পরেই সামনে দিকে এগিয়ে যাওয়া যাবে। শুধু নির্বাচনভিত্তিক ভাবলে রাজ্যে রাজ্যে জটিলতা দেখা দেবে। মূল ভাবনাই মুখ থুবড়ে পড়বে। ফলে ভাবতে হবে বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই।’’
কারাত একথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্যে কী? মোদী সরকার এবং তার নীতির বিকল্প তুলে ধরা। ফলে আমাদের সেই ভাবনার ভিত্তিতেই এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চকে।’’
আগামী দিনে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের কী আকার নেওয়া উচিত কিংবা কীভাবে এগিয়ে চলা প্রয়োজন নিয়ে সংবাদসংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিস্তারিতভাবে যেমন জানিয়েছেন কারাত, তেমনই পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি নিয়েও আলোকপাত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে হারানো রাজনৈতিক জমি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে এগচ্ছে সিপিআই(এম)।’’ এরই সঙ্গে তিনি জানান, ‘‘তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি’র বিরুদ্ধে বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তিকে এক ছাতার তলায় আনারও চেষ্টা করবে পার্টি।’’ তিনি এও বলেন, ‘‘সিপিআই(এম) ওই রাজ্য ভিত্তি হারিয়েছে বলেই ভোটের নিরিখে শক্তি হ্রাস পেয়েছে।’’ হারানো জমি ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে কারাত সাম্প্রতিককালে আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসক-পড়ুয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার বিরুদ্ধে আন্দোলন সহ তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিপুল সাড়া মেলার দিকটি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘‘শুধু আমাদের পার্টির কথা বলছি না, সমস্ত বাম ও প্রগতিশীল শক্তি ওই আন্দোলনে ব্যাপকভাবে অংশ নেয়। এই প্রশ্নে অগ্রণী ভূমিকা নেয় তরুণ প্রজন্মই। ফলে আমরা যাদের সমর্থন হারিয়েছি তাদের মধ্যে ফের প্রভাব বিস্তারের উদ্যোগ নিচ্ছি। বিশেষত গ্রামীণ গরিবদের মধ্যে কাজ করার দিকটি আমরা উপলব্ধি করছি ভীষণভাবে। ওটাই আমাদের মূল ভিত্তি ছিল। সেইমতো পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কিছু অগ্রগতিও হয়েছে।’’ তিনি এও জানান, ‘‘নির্বাচনে প্রতিফলিত না হলেও সাংগঠনিক দিক থেকে সিপিআই(এম) ঘুরে দাঁড়াচ্ছে এবং সুসংগঠিত হচ্ছে।’’
২০২৬ বিধানসভা ভোটে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস একসঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে জানতে চাওয়া হলে কারাত বলেন, ‘‘গত নির্বাচনে দুই দল আসন সমঝোতার ভিত্তিতে লড়েছিল। আগামী নির্বাচনে তা আবার বাস্তবায়িত হবে কী না আমার জানা নেই। তবে এখনও সেই পর্যায় পৌঁছায়নি এবং এই নিয়ে কোনও আলোচনাও হয়নি।’’ এরই সঙ্গে তিনি জানান, ‘‘তবে বিধানসভা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি-কে পরাস্ত করার লক্ষ্যে আমরা সর্বতোভাবে উদ্যোগ নিচ্ছি। দুই দলকেই পরাস্ত করতে বদ্ধপরিকর। আশা করি, সমস্ত বাম ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে নিয়ে বিকল্প গড়ে তুলতে পারবো আমরা।’’
কেরালা প্রসঙ্গে কারাত জানান, ‘‘পর পর দ্বিতীয় বার জয়ী হয়ে নজির গড়েছে এলডিএফ। এখন লক্ষ্য হলো, দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন। নতুন কেরালা বা ‘নব কেরালা’ গড়াই লক্ষ্য। যা মাঝারি আকারের উন্নত রাষ্ট্রের মতো আন্তর্জাতিক মানের স্তরে পৌঁছাবে। কেরালার উন্নতি ঘটছে, এটা মানুষেরও উপলব্ধিতে এসেছে। ফলে আশা করি, তাঁরা আগামী ভোটে ফের এলডিএফ’র ওপরেই ভরসা রাখবেন।’’
 

Comments :0

Login to leave a comment