রাজ্যজুড়ে মানুষ যখন অধিকারের দাবিতে ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নামছেন, তখন তৃণমূল এবং বিজেপি পুরনো কায়দায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাঁধাতে চাইছে বলে সতর্ক করলেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
রামনবমীর নামে হাওড়ার শিবপুরে যে অশান্তির ঘটনা ঘটেছে তার জন্য স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকেই দায়ী করে তিনি বলেছেন, তৃণমূল এবং বিজেপি’র বিরুদ্ধে মানুষ যখন ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নামছেন, তখন ফের পুরানো সাম্প্রদায়িক কায়দায় তৃণমূল বনাম বিজেপি’র মেরুকরণ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সাম্প্রদায়িক আগুন জ্বালিয়ে মেরুকরণ ফেরাতে চায় ওরা। নইলে শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলন ঠেকাতে যেখানে লাঠি, গ্যাস, রোবোকপ নিয়ে পুলিশের বাহিনী নামানো হয়েছিল সেখানে দাঙ্গাবাজদের ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন? এটা তো পুলিশ মন্ত্রীর ব্যর্থতা!
এদিন সেলিম বলেছেন, হাওড়ায় যেখানে সাম্প্রদায়িক অশান্তির ঘটনা ঘটেছে সেখানে আমরা ২এপ্রিল বিকেল চারটেয় শান্তিমিছিল করবো। দাঙ্গাবাজ তৃণমূল বিজেপি’কে বাদ দিয়ে শান্তির জন্য সবাইকে আমরা এই কর্মসূচিতে আহবান জানাচ্ছি, হাতে হাত ধরে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ থাকুন। চুরি দুর্নীতির বিরুদ্ধে, হকের দাবিতে গণআন্দোলনের ঐক্য যাতে ধর্মের নামে কেউ ভাঙতে না পারে তা দেখা সবার কর্তব্য।
ঠিক কোনও রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে শিবপুরে রামনবমীর নামে সাম্প্রদায়িক অশান্তি ঘটানো হয়েছে সেই দিকে সাংবাদিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেছেন, যখন শাসকদলের নেতাদের ঘর থেকে টাকার পাহাড় বের হচ্ছে, শিক্ষক কর্মচারীরা প্রাপ্যের দাবিতে, বেকাররা কাজের দাবিতে, কৃষকরা ফসলের দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন, তৃণমূলকে ‘চোর’ বলছেন তখন সেই ব্রিটিশ আমলের পুরানো কায়দায় ধর্মের নামে হাঙ্গামা বাঁধানো হচ্ছে। মানুষ যতো জাগছে, তৃণমূলের ততো ভয়ে কাঁপছে এবং বাঁচার জন্য তৃণমূল বনাম বিজেপি’র রাজনৈতিক মেরুকরণ ফিরিয়ে আনতে ধর্মীয় বিভাজন করার চেষ্টা করছে।
শিবপুর সহ রাজ্যের বেশ কিছু জায়গায় তৃণমূল এবং বিজেপি মিলিতভাবেই রামনবমীতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করেছে বলে অভিযোগ করে সেলিম বলেছেন, বাংলায় বারো মাসে তেরো পার্বন, উৎসব হতেই পারে। নিজের নিজের উপাসনা স্থলে বা অনুষ্ঠান স্থলে ধর্মীয় উৎসবেও কারো আপত্তি নেই। কিন্তু আরএসএস বিশ্বহিন্দু পরিষদ, বজরং দল যেভাবে অন্যের উপাসনাস্থলের দিকে ধেয়ে গেছে তা পুলিশ আটকায়নি কেন? আমাদের রাজ্যে এই পরিবেশ আগে ছিল না।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি নিজেই মন্তব্য করেছেন যে পুলিশের গাফিলতিতে শিবপুরের অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সেলিম পালটা প্রশ্ন তুলেছেন, পুলিশের মন্ত্রীটা কে? পুলিশ ফেল, আর পুলিশ মন্ত্রী পাশ? পুলিশের গাফিলতি মানে তিনিই তো দায়ী। যে পুলিশ তৃণমূলের নেতাদের কথা ছাড়া এক পা নড়ে না, সেই পুলিশ মিছিলের রুট বদল কার কথায় করতে দিয়েছে? যে ঘটনাস্থলে গতবছরও অশান্তি হয়েছে সেইস্থানে কেন ধর্মীয় উসকানিমূলক মিছিলকে আটকায়নি পুলিশ? ইনটেলিজেন্স রিপোর্ট ছিল না?
আসলে গোটা ঘটনাকে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, রাজনৈতিক অভিসন্ধি হিসাবেই ব্যাখ্যা করেছেন সেলিম। তিনি বলেছেন, পুলিশকে দোষ দেওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী বলুন, তাঁর দলের লোকেরা কেন বিজেপি’র নেতাদের সঙ্গে রামনবমীর মিছিলের নামে দাঙ্গাবাজদের কর্মসূচিতে শামিল হয়েছিল? চোরকে চুরি করতে বলে সাহুকারকে জাগতে বলছেন মুখ্যমন্ত্রী! আগে থেকে সব জানতেন বলেই ঐদিন নবান্ন ছেড়ে গঙ্গার উলটো পাড়ে তামাশায় বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পঞ্চায়েত নির্বাচনে আগে রাজ্যে দাঙ্গা বাঁধাতে চায় তৃণমূল-বিজেপি।
কীসের থেকে নজর ঘোরাতে চায় তৃণমূল-বিজেপি? সেলিম বলেছেন, আদালতে সিবিআই বকা খাচ্ছে, মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছে চোর তাড়াতে। মুখ্যমন্ত্রী নজর ঘোরাতে ধরনার নামে তামাশা করছেন। কেন্দ্রের কাছে দাবি জানাতে ওঁর দলের সাংসদরা সংসদে কী করছিলেন? কেন্দ্রের কাছে দাবি জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে যান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে, অর্থ মন্ত্রীর কাছে যান, জাতীয় উন্নয়ন কমিশন, ইন্টিগ্রেশন কমিশনে যান। প্রাপ্য নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন। এসব না করে যেখানে দুর্গা কার্নিভাল করেছেন সেখানে দুর্গা প্রতিমা সরিয়ে নিজে বসে গেছেন কেন? কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে ধরনা বলে সেখানে রাজ্যের কর্মচারী শিক্ষকদের চোর বলে গালি দিলেন কেন?
চুরির দাগ মুছতে না পেরে অন্যদের গায়েও কালি লাগানোর যে চেষ্টা তৃণমূল করছে সেই সম্পর্কে সেলিম বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী অনেকবার বলেছেন সিপিআই(এম)’র ফাইল খুলবেন, আমরাও চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছি খুলুন। উনি নিজেদের অপরাধ ঢাকতে অন্যদের অপরাধী সাজানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমরা বামপন্থীরা কোনও তদন্তে ভয় পাই না, যে কোনও তদন্তের মুখোমুখি হতে আমরা রাজি।
সাংবাদিকদের কাছ থেকে তৃণমূলের নেতাদের মানহানির হুমকি শুনে সেলিম বলেছেন, যাদের মান নেই তাদের আবার মানহানি কীসের! আমরা এসব মামলায় ভয় পাই না। অজিত পাঁজা, মুকুল রায়, অভিষেক ব্যানার্জি, কেডি সিং আমাকে মামলার কাগজ পাঠিয়েছিল, কিন্তু কেউ মামলা করতে সাহস পায়নি।
পঞ্চায়েত নির্বাচন সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেন, আমরা চাই নির্বাচন কমিশন ভোট লুট রোখার যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে নির্বাচন করাক। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মানুষের দুয়ারে যাওয়ার ক্ষমতা তৃণমূলের নেই, তাই সরকারি কর্মীদের দুয়ারে সরকার বলে পাঠানো হচ্ছে। শুভেন্দু অধিকারী আর মমতা ব্যানার্জি তাই এখন পঞ্চায়েত নির্বাচন করাতেই চাইছেন না।
Comments :0