সঙ্কট বাড়ছে আলুচাষিদের। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া উপায় থাকছে না। কৃষকদের অভিযোগ সরকার তাদের পাশে নেই। সীমান্ত সিল করে প্রকারন্তরে আলুচাষিদের সঙ্কটের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে। কৃষকরা যখন অসহায় তখন রাজ্যের সরকার চোখ বন্ধ করে আছে। আলুচাষিদের প্রশ্ন, এত আলু নিয়ে তারা কি করবেন! উত্তর প্রদেশের পরেই দেশে আলুর উৎপাদনে দ্বিতীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। ১.২৬ কোটি টন আলু উৎপাদন হয় রাজ্যে।
এতদিন রাজ্যের চাহিদা মেটার পরেও রপ্তানি করা হতো আসাম, বিহার, ঝাড়খণ্ড সহ বিভিন্ন রাজ্যে। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে রাজ্যের আলুর বড় ক্রেতা ছিল বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটানও। ধানের পরেই রাজ্যের কৃষকদের কাছে আলুই লাভজনক ফসল। চাষও তাই আরও বেড়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ফলনও হয়েছে ভালো। হলে কি হবে? দাম নেই। রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে রাজ্যের। তাই গত একবছর আলু কিনতে ক্রেতাদের উৎসাহ নেই। পড়ে রয়েছে জমিতেই। বৃষ্টির মরশুম এলে সঙ্কট আরও বাড়বে। লাভজনক দাম না পাওয়ায় হিমঘরে আপাতত মজুত করে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্তই নিচ্ছেন কৃষকরা। এছাড়া কোনও উপায়ও নেই তাদের সামনে।
তাদের ক্ষোভ বাড়ার যথেষ্ট কারণ আছে। বীজ, সারের দাম বাড়ে। কীটনাশকের দাম বাড়ে। ডিজেলের দাম বৃদ্ধি হয়। প্রতিবছর বাড়ে উৎপাদনের খরচ। সেই অনুপাতে বাড়ে না কেবল ফসলের দাম। সরকার চোখ বন্ধ করে আছে। আমাদের রাজ্যে বেশি আলু চাষ হয় হুগলী বর্ধমান জেলায়। বেশি হিমঘরও রয়েছে এই জেলায়। তারপরেও আলু রাখার জায়গা হচ্ছে না। বাইরের রাজ্যে রপ্তানির বাধা তুলে না নিলে পচে পচে নষ্ট হবে। একথা তো ঠিক, রপ্তানিই যদি করতে না পারেন তাহলে আলু কিনে ব্যবসায়ীরা করবেন কি? তাই আগ্রহ কম।
হুগলী জেলায় সাধারণত ৮৫-৯০ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়। কৃষি দপ্তর সূত্রে খবর, গতবার প্রায় ৪ লক্ষ ৬৭ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল। আলু উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ১ কোটি টন। এবার প্রায় ৫ লক্ষ ১২ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ বেশি জমিতে আলু চাষ হচ্ছে। চাষ বেড়েছে পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং কোচবিহার সহ উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে।
বিঘাপ্রতি গড়ে পঞ্চাশ কেজির বস্তা ধরলে ৭০-৮০ বস্তা আলুর ফলন হয়েছে। সরকার ৯০০ টাকা কুইন্টাল দরে দাম বেঁধে দিয়েছে। একবিঘা আলু চাষে খরচ ত্রিশ হাজার টাকা। বিক্রি করে সেই খরচ উঠছে না।
আলু ব্যবসায়ীরাও একমত, বিক্রির বাধা না তোলা হলে মরবেন আলুচাষিরাই। এখনো পর্যন্ত যা খবর যেভাবে হিমঘরে আলু মজুত করা হচ্ছে তাতে গতবারের তুলনায় দেড় থেকে দুই কোটি বস্তা আলু বেশি মজুত হবে। এবার কিন্তু হিমঘরে অধিকাংশ আলুই মজুত করছেন চাষিরা। কিন্তু তা কতদিন? ফলন বেশি হলেদাম আরও কমবে। কিছুদিন পর চাষিরা তাদের ঋণ শোধ করতে, অন্য চাষ করতে আলুর বন্ড কমদামে বিক্রি করতে বাধ্য হবেন। তখন লাভের গুড় খাবে সেই ব্যবসায়ীরাই। রাজ্য সরকার দ্রুত রপ্তানিতে বাধা তুলে না নিলে বড় বিপদ আলুচাষিদের সামনে। এই খামখেয়ালিপানায় ভিন রাজ্যের ব্যবসায়ীরা বেশি দাম পাবে বাংলার আলুচাষিরা মরবে। অথচ রাজ্য সরকারের কোনও হেলদোল নেই।
Editorial
লাভজনক দাম দিতে হবে

×
Comments :0