rg kar

আগামী মাসে অভয়ার বিচারের দাবিতে তীব্র প্রতিবাদের ডাক বিভিন্ন সংগঠনের

রাজ্য কলকাতা

অভয়া ধর্ষণ ও হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলন আরও জোরদার ও শক্তিশালী হয়ে উঠছে। আগামী ৯ আগস্ট ধর্ষক, নির্যাতনকারী, লুটেরা ও তাদের মদতদাতা, রক্ষাকারীদের বাংলা ছাড়া করার ডাক দিলো অভয়া মঞ্চ। ওই দিন ‘কালীঘাট চলো’- কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রাজ্য ও দেশজুড়ে ব্যাপক সংগ্রামের আহ্বান জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরস, জয়েন্ট প্ল্যাটফরম অব ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট সহ অভয়া মঞ্চর অন্তর্গত বিভিন্ন সংগঠন। তার আগে ৮ আগস্ট রাতে নৃশংস ভাবে অভয়া নির্যাতন ও হত্যার সময়কে স্মরণ করে রাত জেগে মশাল মিছিল ও সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে শ্যামবাজারে। একইভাবে, ১৪ আগস্ট মধ্য রাতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে ‘রাত জাগো’ কর্মসূচি নিয়েছে সমস্ত সংগঠন। এছাড়াও ১ আগস্ট সিবিআই-র ‘সেটিং তত্ত্ব’ ও নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সিজিও কমপ্লেক্স অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে। ঝাড়ু হাতে সিবিআই দপ্তরে তালা লাগিয়ে দেওয়ার ডাক দেওয়া হয়েছে অভয়া মঞ্চের তরফে। 
শুক্রবার মৌলালি যুব কেন্দ্রে অভয়া মঞ্চের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক কনভেনশনে বিভিন্ন কর্মসূচির কথা ঘোষণা করে মঞ্চের আহ্বায়করা বলেন, পুলিশ কোনোভাবে কোনও কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে আইনের আশ্রয় নেওয়া হবে। পুলিশের ফতোয়া মানা হবে না। এদিন ‘অভয়া আন্দোলনের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ভাবনা’ শীর্ষক এই কনভেনশন পরিচালনা করেন অসিত ভট্টাচার্য, সৌম্য দত্ত, ডাঃ হীরালাল কোনার, সীমা মুখোপাধ্যায়, নন্দা মুখার্জি, স্বাতী চক্রবর্তী, ইলোরা দেবনাথ-কে নিয়ে গঠিত এক সভাপতিমণ্ডলী। কনভেনশনে উপস্থিত ছিলেন অভয়া মঞ্চর যুগ্ম আহ্বায়ক ডাঃ পুন্যব্রত গুন, ডাঃ তমোনাশ চৌধুরি, মণীষা আদক, এএইচএসডি’র সাধারণ সম্পাদক ডাঃ উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায়, যুগ্ম সম্পাদক ডাঃ সুবর্ণ গোস্বামী, ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের পক্ষে ডাঃ দেবাশিস হালদার সহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। প্রস্তাব পেশ করেন মনীষা আদক। 
কনভেনশনের শুরুতে আর জি কর হাসপাতালে অভয়ার ধর্ষণ ও হত্যার বিরুদ্ধে কীভাবে গোটা রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ সংগঠিত হয়েছে, সেই সম্পর্কিত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। কনভেনশনে বক্তব্য রাখেন ডাঃ তমোনাশ চৌধুরি, ডাঃ দেবাশিস হালদার। এছাড়াও প্রস্তাবের সমর্থনে বক্তব্য রাখেন রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ গুপ্ত চৌধুরি, পঞ্চায়েত যৌথ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সন্দীপ রায়, ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ ফেডারেশন, পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে সৃজিত সেনগুপ্ত, ভারতের গণতান্ত্রিক মহিলা সংগঠনের পক্ষে সমিতা হর চৌধুরি, ডাব্লুবিএমএসআরইউ সাধারণ সম্পাদক বাসব রায়চৌধুরি, সেন্ট্রাল কো-অর্ডিনেশন কমিটির পক্ষে রূপক মুখার্জি প্রমুখ। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ বস্তি উন্নয়ন সমিতি, এসএফআই, ডিওয়াইএফআই’র নেতৃবৃন্দ কনভেনশনে বক্তব্য রেখেছেন। এদিন কনভেনশনে বক্তব্য রেখেছেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। বর্তমানের অপশাসনের বিরুদ্ধে কিভাবে আরও জোরালো লড়াই আন্দেলন ও প্রতিবাদ গড়ে তোলা সম্ভব, সে কথাই বক্তাদের বক্তব্যে উঠে এসেছে। 
ডাঃ তমোনাশ চৌধুরি আগামী কর্মসূচির ঘোষণা করে বলেন, অভয়ার মা বাবার যন্ত্রণাকে আমরা ভুলতে পারি না। এই অপরিসীম যন্ত্রণার মধ্যেও তাঁদের লড়াইয়ের কথা আমরা ভুলবো না। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল অভয়ার ঘটনায় মুখে আস্ফালন করেছে ঠিকই কিন্তু বাস্তবে কোনও কাজে এগোয়নি। সিবিআই’র বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই যেখানে, সেখানে তারা চুপ করে থেকেছে। আমরা আমাদের দাবিগুলি নিয়ে রাস্তায় আছি। সেখান থেকেই সমস্ত কর্মসূচি পালন করব। আমাদের দাবি, ধর্ষক, দুষ্কৃতী ও খুনিদের মদতদাতা শাসককে বাংলা ছাড়তে হবে। সিবিআই’কে অবিলম্বে ন্যায্য বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। অভয়া'র মূল হত্যাকারীদের অবিলম্বে উপযুক্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী ও তৎকালীন কলকাতা পুলিশ কমিশনারকে সিবিআই তদন্তের আওতায় আনতে হবে। অবিলম্বে রাজ্যজুড়ে ভয় মুক্ত রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ সুনিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতিবাজ ও লুটেরাদের জেলে ভরতে হবে। ৯ আগস্ট আমরা কালীঘাট অভিযান করব। অভয়া মঞ্চের আন্দোলনকে বানচাল করার চেষ্টা হলে প্রতিবাদের ঢেউ আরও বেশি করে আছড়ে পড়বে। 
বক্তব্য রাখতে গিয়ে ডাঃ দেবাশিস হালদার বলেন, কীভাবে কলেজগুলিতে দুর্বৃত্তায়ন চলছে তা এখন সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। কিভাবে বিচার ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চলে তাও স্পষ্ট। কিন্তু আমরা তো আগামী ৮ আগস্ট মধ্য রাতের সেই ভয়ঙ্কর ঘটনা মনে করে শান্তিতে থাকতে পারবো না। তাই ওই মধ্য রাতেই রাস্তায় নামবো প্রতিবাদে, আমাদের লক্ষ্য অভয়ার ন্যায় বিচার। অভয়া মঞ্চের সমস্ত কর্মসূচিতে শামিল হবে ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট। জেলাগুলিতেও আলাদা ভাবে কর্মসূচি চলবে। এদিন কনভেনশনে প্রস্তাবের পক্ষে বিভিন্ন বক্তারা বলেন, জনগণের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা চলছে বিভিন্নভাবে। সংবিধান রক্ষা কিংবা সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলন আর ন্যায় বিচারের দাবিতে আন্দোলন এক সূত্রেই গাঁথা। ঐক্যবদ্ধ ভাবে আরও বেশি করে রাস্তায় নামতে হবে। যে নির্লজ্জ, মিথ্যাচারিতার ভূমিকা সরকার নিয়েছে, যেভাবে অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়ে চলেছে, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আগুনকে আরও বেশি করে ছড়িয়ে দিতে হবে। আর কোনও আর জি কর কাণ্ড বা কসবা কাণ্ড আমরা চাই না।

Comments :0

Login to leave a comment