সোমবার আরও একবার চাঁদের মাটিতে নামল বিক্রম। এদিন সকালে একটি সফল হপ টেস্টের পর চন্দ্রযান ৩-এর ল্যান্ডার বিক্রমকে ঘুমোতে পাঠানো হয়েছে। ইসরোর দাবি, অভিযানের লক্ষ্যকে ছাপিয়ে গিয়ে সফল হয়েছে বিক্রম। এখন তার পেলোডগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এবার বিক্রম ঘুমোবে। আগেই ঘুমোতে গিয়েছিল রোভার প্রজ্ঞান। আর এবার ঘুমাতে গেল ল্যান্ডার বিক্রম।
এদিন চাঁদের মাটিতে লাফিয়ে উঠেছিল বিক্রম। এরপর দ্বিতীয়বারের জন্য সফল অবতরণ করে সেটি। সোমবার সকালে সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ একটি ভিডিও পোস্ট করে ইসরো জানিয়েছে, চাঁদের মাটি থেকে শূন্যে ওড়ানো হয় বিক্রমকে। চন্দ্রযান ৩-এর ল্যান্ডারের সঙ্গে থাকা ইঞ্জিনটিকে চালু করা হয়। এরপর সেই ল্যান্ডারকে প্রায় ৪০ সেন্টিমিটার উচ্চতায় ওড়ানো হয়। লাফ দিয়ে আগের জায়গায় থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার দূরে সফল ভাবে অবতরণ করে বিক্রম। এই পরীক্ষা সফল হওয়া বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ইসরো জানিয়েছে, নিজের মিশনের লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে গিয়ে সফল হয়েছে চন্দ্রযান ৩-এর ল্যান্ডার বিক্রম। ভারতের মহাকাশ বিজ্ঞান গবেষণা সংস্থা (ইসরো)-র তরফে জানানো হয়েছে, সফল ভাবে ‘হপ টেস্ট’ সম্পন্ন করেছে বিক্রম। অর্থাৎ, চাঁদের মাটি থেকে লাফিয়ে উঠে দ্বিতীয়বারের জন্য সফল ভাবে সফট ল্যান্ডিং করল বিক্রম। এই সাফল্যের সুদূরপ্রসারিত তাৎপর্য রয়েছে বলে আভাস দিয়েছে ইসরো।
সোমবার সকাল ৮টা নাগাদ বিক্রমকে স্লিপ মোডে পাঠানো হলো। স্লিপ মোডে পাঠানোর আগে নতুন অবস্থানে ল্যান্ডারের পেলোড চেস্ট, রম্ভা-এলপি ও ইলসাগুলি ইন-সিটু পরীক্ষা করে যাচাই করে নেওয়া হয়। সেইসব পরীক্ষায় প্রাপ্ত ডেটা ইতিমধ্যেই ইসরোয় পৌঁছেও গেছে। ইসরো সূত্রের খবর, এদিন হপ টেস্ট করার আগে ল্যান্ডারের পেলোড ও র্যা ম্পটিকে ভাঁজ করে পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে নিয়েছিল বিক্রম। তারপর ইঞ্জিন চালু করে চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে লাফিয়ে উঠে যায়। তারপর আবার সফট ল্যান্ডিং করে নেমে আসে বিক্রম। এই সফল হপ টেস্টের পরই বিক্রম ও প্রজ্ঞানের পেলোডগুলির পাওয়ার অফ করে দেওয়া হয়। আপাতত তারা ঘুমিয়ে পড়ল। এবার চাঁদের ওই দক্ষিণ গোলার্ধের আবার সূর্যের আলো এসে পড়লে জেগে উঠতে পারে বিক্রম-প্রজ্ঞান। ইসরো জানিয়েছে, সৌর শক্তি শেষ হয়ে গেলে এবং ব্যাটারি নিঃশেষ হয়ে গেলে প্রজ্ঞানের পাশে ঘুমিয়ে পড়বে বিক্রমও। তবে ইসরোর আশা, ‘২২ সেপ্টেম্বর নাগাদ ফের ওরা দু’জন জেগে উঠতেও পারে।’
ইসরোর বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, গত ২৩ আগস্ট চাঁদের মাটি স্পর্শ করেছিল চন্দ্রযান ৩-এর ল্যান্ডার বিক্রম। তারপর থেকে সেই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল সেটি। এদিন হফ টেস্টের পরে খানিকটা বদল হয়ে যে অবস্থানের আজ দ্বিতীয়বার নেমেছে বিক্রম, ভবিষ্যতেও সেই এলাকাতেই দাঁড়িয়ে থাকবে সে। এরই মাঝে ঘুমের সময় হয়ে এসেছে বিক্রমের। তবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অন্ধকার নেমে আসার আগে অক্লান্ত ভাবে নিজের কাজ করে গিয়েছে বিক্রম। শুধু তাই নয়। ইসরো জানিয়েছে, অভিযানের লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে গিয়ে কাজ করেছে বিক্রম।
বিক্রমে রয়েছে ‘চন্দ্র সারফেস থার্মো-ফিজিকাল এক্সপেরিমেন্ট’ বা চেস্ট নামক একটি পেলোড। যা চাঁদের তাপমাত্রা খতিয়ে দেখেছে। তাছাড়া বিক্রমে রয়েছে লুনার সেসমিক অ্যাক্টিভিটি প্রোব বা ইলসা নামক একটি পেলোড। এই ইলসা-র সেন্সর মহাজাগতিক গতিবিধির ওপর লক্ষ্য রেখেছে। এছাড়া বিক্রমে রয়েছে লেজার রেট্রোরিফ্লেক্টর অ্যারে, রেডিও অ্যানাটমি অফ মুন বাউন্ড হাইপারসেনসিটিভ আয়নস্ফিয়ার অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ার বা ‘রম্ভা’। রম্ভা চাঁদের মাটিতে থাকা প্লাজমার ঘনত্ব মেপেছে। বিক্রমের সব যন্ত্রই সঠিক ভাবে কাজ করেছে এখনও পর্যন্ত।
এই আবহে বিক্রমের ‘হপ এক্সপেরিমেন্ট’ নিয়ে ইসরোর তরফে জানানো হয়েছে, ভবিষ্যতে চাঁদে মানব অভিযান করলে তার সাফল্যের জন্য এই পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া এরপরে যদি চাঁদে মহাকাশযান পাঠিয়ে তা ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হয়, তার জন্যও এই পরীক্ষা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। বিক্রমের ক্যামেরা থেকেই এই ‘হপ টেস্টের’ একটি ভিডিও পোস্ট করেছে ইসরো।
বিজ্ঞানীদের কথায়, চাঁদের শীঘ্রই রাত নামবে। আর তা নামলেই চন্দ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা মাইনাস ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যাবে। ওই ভয়ানক ঠান্ডায় পাওয়ার অন করা থাকলেও পেলোডগুলি কোনও কাজ করতে পারবে না। সেই কারণেই পেলোডগুলি সুইচ অফ করে দেওয়া হয়েছে। ইসরো সূত্রে খবর, আবার কাজ করার জন্য অনুকূল অবস্থার পরেই সেগুলি আবার চালু করা হবে।
১৮দিন পরে পেলোডগুলি ফের সুইচ-অন করা হলে, ইসরো সেই একই পরীক্ষাগুলি পরিচালনা করবে যা গত কয়েকদিন ধরে চন্দ্রপৃষ্ঠে করা হয়েছে। ইসরো সূত্রে খবর, এই চক্রটি প্রতি ১০ থেকে ১৪ দিন অন্তর পুনরাবৃত্তি করা হবে যতক্ষণ না পেলোড চাঁদে কাজ করতে সক্ষম হয়। এক বর্ষীয়ান বিজ্ঞানীর কথায়, আজ হপ টেস্টে দেখা গেছে যে, ১৪দিন পর ইঞ্জিনগুলি আবার গুলি চালানো যেতে পারে।
ISRO
লাফঝাঁপ শেষে বিক্রমও গেল ঘুমোতে, আশায় ইসরো
×
Comments :0