বোরো ধান চাষের খরচ গত এক বছরে এক টাকাও নাকি বাড়েনি রাজ্যের ৭টি জেলায়! যেখানে বেড়েছে, সামান্য বেড়েছে।
এমনই মনে করছে রাজ্যের তৃণমূল সরকার। চাষের খরচ কমিয়ে দেখা, সার সহ কৃষি উপকরণের খরচ বাড়েনি বলে মনে করার এই নীতি মূলত কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের। মমতা ব্যানার্জি চলছেন সেই মোদীর রাস্তাতেই।
এর প্রভাবে কৃষক এবং খেতমজুর, উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেই আশঙ্কা। কৃষকের আবার লোকসানের আশঙ্কা। তার লক্ষ্য থাকবে খরচ কমানোর দিকে। সার, রাসয়ানিক, জলের মতো উপকরণে খরচ কমানোর বিশেষ কোনও পথ তাঁর সামনে নেই। ফলে খেতমজুরের শ্রমদিবস কমতে পারে। খেতমজুরের কাজ কমতে পারে। প্রসঙ্গত, চলতি মাসে নাবার্ডের রিপোর্ট জানাচ্ছে, সারা দেশে অক্টোবরে গ্রামে যে কাজ হয়েছে, তা গত চার বছরে যে কোনও অক্টোবরের তুলনায় সর্বনিম্ন। সেই ধারা পশ্চিমবঙ্গেও আছে। রাজ্য সরকারের কৃষি সংক্রান্ত হিসাবে তা খেতমজুর আরও মার খেতে পারেন।
যে ৭টি জেলায় গত বছরের তুলনায় চাষের খরচ বাড়েনি, সেই জেলাগুলি হলো— হুগলী, উত্তর ২৪ পরগনা, পশ্চিম বর্ধমান, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর, জলপাইগুড়ি এবং ঝাড়গ্রাম। এর মধ্যে ঝাড়গ্রাম বাদে প্রতিটি জেলাতেই অনেক জমিতে বোরো ধান চাষ হয়। রাজ্যের কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত আর্থিক বছরে হুগলীতে প্রতি হেক্টরে বোরো ধান চাষ করতে কৃষকের খরচ ধরা হয়েছিল ৭৬,৮১৭ টাকা। এবারও তাই ধরা হয়েছে। রাজ্যে এক হেক্টর মানে ৭.৪৭ বিঘা। অর্থাৎ হুগলীতে প্রতি বিঘা কৃষকের বোরো ধান চাষ করতে খরচ হবে ১০,২৮৩ টাকা। যদিও কৃষকদের দাবি, এক বিঘায় বোরো ধান চাষ করতে কৃষকের খরচ আরও বেশিই হবে। হুগলীর হরিপালের এক কৃষকের কথায়, ‘‘এবারে বিঘা পিছু অন্তত আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা খরচ বাড়বে। তেমনই মনে হচ্ছে। চাষের খরচ কখনও এক থাকে? সরকারের মন্ত্রীরা কী কিছুই জানে না?’’
পূর্ব বর্ধমানের ক্ষেত্রে গতবছরের মতই হেক্টর পিছু খরচ সরকার ধরেছে ৯৮,৯২৪ টাকা। অর্থাৎ বিঘা পিছু প্রায় ১৩,২৪৩ টাকা। সেই হিসাবে প্রতি বিঘায় পশ্চিম মেদিনীপুরে ১৫,৮৭১ টাকা, জলপাইগুড়িতে ১২,৭৯৪ টাকা, উত্তর ২৪ পরগনায় ১৫,২১০ টাকা, পশ্চিম বর্ধমানে ১৩,২৪২ টাকা, ঝাড়গ্রামে ১৫,৮৭১ টাকা বিঘা পিছু বোরো ধান চাষের খরচ ধরা হয়েছে। গত বছরও এই জেলাগুলিতে বোরো ধানের এমন খরচই নির্দিষ্ট হয়েছিল রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে।
সারা ভারত কৃষকসভার পূর্ব বর্ধমান জেলার সম্পাদক সমর ঘোষের কথায়, ‘‘সারের দাম কি গতবছরের মতো আছে? জল ক্যানালে ঠিক মতো থাকবে নাকি সাব মার্সিবল থেকে জল কিনতে হবে, সরকার জানে? পোকার আক্রমণ বাড়লে রাসায়নিক দিতে হবে। তার দাম কমেনি। কোনও জিনিসের দাম এক নেই। তাহলে কৃষকের চাষের খরচ এক থাকবে কী করে? এটা সরকার চলছে?’’
কিছু জেলায় গতবছরের থেকে ধান চাষের খরচ এই রবি মরশুমে বাড়বে বলে সরকার মনে করেছে। কিন্তু কতটা? উদাহরণ মুর্শিদাবাদ। গতবছর হেক্টরপিছু বোরো চাষের খরচ ধরা হয়েছিল ৯৮,৭২৬টাকা। এবার ধরা হয়েছে ১,০০,১৩৪ টাকা। অর্থাৎ হেক্টর পিছু কৃষকের ১৪১২ টাকা খরচ বাড়বে বলে সরকার মনে করছে। তা একর পিছু কত? ৫৬৪ টাকা ৮০ পয়সা। বিঘা পিছু? ১৯০ টাকা!
নদীয়ায় পরিমাণ আরও কম। গত বছরের থেকে এই জেলায় বোরো ধান চাষের খরচ বিঘা পিছু ১৬৫ টাকা বাড়বে বলে সরকার নির্ধারণ করেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বিঘা পিছু ৭৬২ টাকা, কোচবিহারে ১৫৬০ টাকা খরচ বাড়বে বলে সরকার মনে করেছে।
রবি চাষে খরচের হিসাব সম্প্রতি প্রকাশ করেছে রাজ্যের কৃষি দপ্তর। মূলত শস্য বিমার জন্য এই হিসাব বছরে দুবার প্রকাশ করা হয়। একবার খরিফ চাষের সময়। অন্যবার বোরো ধান সহ অন্যান্য রবি শস্য চাষের সময়। রাজ্য সরকারের নির্ধারিত চাষের খরচের উপর ভিত্তি করে ক্ষতিপূরণ পান কৃষক, যদি দুর্যোগে চাষের ক্ষতি হয়। রাজ্য সরকারের গতবারের রবি চাষের সময়কালের নির্দেশিকা এবং এবারের নির্দেশিকার তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে ৭টি জেলায় বোরো ধানের চাষের খরচ বাড়েনি বলে সরকার মনে করছে।
West Bengal Government Policy
চাষের খরচ নিয়ে মোদীর নীতিতে নবান্ন
×
Comments :0