অনিন্দিতা দত্ত : শিলিগুড়ি
বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ান হবার লক্ষ্য নিয়েই এবার মাঠে নেমেছিলাম। লিগ পর্যায়ে টানা তিনটি ম্যাচে হারের পরও আমরা সরে আসিনি। আমরা প্রতিটি টিম মেম্বার সেই খারাপ সময়ে একসাথে থেকেছি। কি করে কামব্যাক করতে হবে সেই চেষ্টা চালিয়েছি। হার্ড ওয়ার্ক করেছি। লক্ষ্য স্থির ছিলো। নিষ্ঠা, কঠোর পরিশ্রম, শৃঙ্খলাকে পাথেয় করেই জয় এসেছে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান হয়েছি। বিশ্বকাপ জয় করে শুক্রবার শিলিগুড়িতে ফিরে একথা বললেন রিচা ঘোষ।
আবেগে ভাসল গোটা শিলিগুড়ি শহর। শহর জুড়ে উৎসবের মেজাজ। এদিন সকাল থেকেই বিশ্বজয়ী সোনার মেয়েকে অভ্যর্থনা জানাতে বাগডোগরা বিমান বন্দরের বাইরে ভিড় উপছে পড়েছিলো। বিভিন্ন ক্রিকেট প্রেমী অ্যাসোসিয়েশন থেকে শুরু করে বহু সাধারণ মানুষ বিমানবন্দরে ভিড় জমিয়েছিলেন সোনার মেয়েকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য। প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার পরে নয়াদিল্লি থেকে শিলিগুড়িতে বাগডোগরা বিমানবন্দরে প্রায় বেলা ১২টা নাগাদ নামেন রিচা ঘোষ। ফুলে মোড়া হুড খোলা জিপে চাপিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন তিনি। পথের দুই ধারে হাজারো মানুষ তাঁকে দেখার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। রিচাকে হুটার বাজিয়ে করিডোর করে নিয়ে আসে পুলিশ। এদিন সকাল থেকেই সাজো সাজো রব সুভাষপল্লীর ঘোষ বাড়িতে। গোটা বাড়ি ফুল ও আলোক সজ্জায় সেজে উঠেছে। বাড়ির বাইরে বাজনা বাজছে। বাগডোগরা বিমান বন্দর থেকে সুভাষপল্লীতে নিজের বাড়িতে পৌঁছাতেই শহবাসীদের অভিনন্দন আর ভালোবাসায় ভাসলেন রিচা। বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের মাঝেই নিজের বাড়িতে পৌঁছালেন তিনি। সবাই বিশ্বজয়ী রিচাকে দেখে আনন্দে আত্মহারা। বাড়ির সামনে উচ্ছ্বসিত অনুরাগীরা নাচের তালে মেতে উঠলেন। বহু খুদে অনুরাগীরাও হাজির হয়েছিলো। টিকা পরিয়ে, হাতে রাখী বেঁধে তাকে বরন করে নিলেন এলাকা বাসিন্দারা।
বাড়ির সামনে তখন প্রতিবেশীদের চেনা মুখের ভিড়। সেই পাঁচ বছর বয়স থেকে সুভাষপল্লীর রাস্তা ধরেই প্রতিদিন কোচিং সেন্টারে যাওয়া শুরু। সেই রাস্তার চেহারা যেন পালটে গেছে আজ। রাস্তা যেন আজ ওর অপেক্ষায়। সেই রাস্তা ধরেই বাড়িতে পৌঁছালো বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় ক্রিকেট মহিলা দলের তারকা উইকেট কিপার ব্যাটার রিচা ঘোষ। শিলিগুড়ি ১৯নম্বর ওয়ার্ডে সুভাষপল্লীর বাড়িতে গিয়ে রিচাকে অভিনন্দন জানালেন শিলিগুড়ির প্রাক্তন মেয়র ও বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য। সঙ্গে ওয়ার্ড কাউন্সিলার মৌসুমী হাজরা, যুব নেতা সৌরাশীষ রায়। অশোক ভট্টাচার্য বলেছেন, বাড়িতে গিয়ে রিচাকে অভিনন্দন জানিয়েছি। শুধুমাত্র শিলিগুড়ির নয়, রাজ্য তথা গোটা দেশের গর্ব রিচা ঘোষ। আগামী দিনে রিচা ওর খেলার ধারাকে আরো উন্নত করুক এই কামনা করছি। অনেক উচ্চ পর্যায়ে দেখতে চাই রিচাকে। অনেকদিন পরে আমার সাথে দেখা করে রিচা ভীষন খুশি হয়েছে।
রিচাকে অভিনন্দন জানালেন শিলিগুড়ির প্রাক্তন মেয়র ও বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য।
শিলিগুড়িতে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এদিন রিচা বলেছেন, সবসময় আমাকে সাপোর্ট করেছে ভারতীয় দলের হিরো ঝুলন গোস্বামী। আমার সাফল্যে সব সময় আমার পরিবার সাহায্য করেছে। বাবা মায়ের অবদান সবচাইতে বেশী। দেশের জার্সিতে খেলার স্বপ্ন ছিলো। বিশ্বকাপ জয়ের ইচ্ছে ছিলো। মানুষের ভালোবাসায় আমি আপ্লুত। আমার মনের মধ্যেই ছিলো কোয়ালিফাই করলে কেউ আটকাতে পারবে না। বিশ্বকাপ জয়ের পেছনে অনেক হার্ড ওয়ার্ক রয়েছে। ছোটবেলা খেলা যখন শুরু করেছিলাম, তখন ছেলেদের সাথেই খেলতাম। তেমন কিছুই বুঝতাম না। প্রথম যখন জেলা দলে সুযোগ পাই, তখন থেকে স্বপ্ন দেখা শুরু হয় ভারতের হয়ে খেলার। এরপর অনুর্দ্ধ ১৯বিশ্বকাপ জয়, ডব্লিউ পি এল জয় আর এবার বিশ্বকাপ জয়। দারুন এক অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।
শিলিগুড়ি শহরের পরিকাঠামো বিষয়ে আক্ষেপের সুরে বিশ্বকাপ জয়ী রিচা বলেছেন, শুধু ক্রিকেটের জন্য নয়, সমস্ত খেলার জন্যই শহরে একটি স্টেডিয়ামের প্রয়োজন। এখানে পরিকাঠামোর আরো অনেক বেশী উন্নতির প্রয়োজন। আমার কোচরা সবসময় আমার পাশে থেকেছেন। আমাকে কোলকাতায় গিয়ে অনুশীলন করতে হয়েছে। বাবা আমাকে কলকাতায় নিয়ে যেত। তা নাহলে সাফল্য আসত না। রিচা বলেছেন, পরবর্তী লক্ষ্য টি—২০বিশ্বকাপ জয়। আঙুলে চোট নিয়ে জয়। মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম। সবাই পাশে ছিলো। দলগত পারফরম্যান্সেই জয় এসেছে। অনেকবার বিশ্বকাপ জিততে পারিনি। এবার পেরেছি। এবার নিশ্চয়ই অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘটবে। শিলিগুড়ি কেন গোটা দেশে মহিলা ক্রিকেটে এবার জোয়ার আসবে। অনেক মহিলা ক্রিকেট খেলবে। আমাদের খেলাও সবাই দেখবে। ক্রিকেটের পাশাপাশি অন্যান্য খেলারও উন্নতি হোক এটাই আমি চাই। যে কোন খেলাতেই আরও বেশী করে মহিলারা এগিয়ে আসুক সেই বার্তাই এদিন দিয়েছেন রিচা।
Comments :0