Zioism

গণহত্যায় জায়নবাদের গৌরব

সম্পাদকীয় বিভাগ


মানব সভ্যতার ইতিহাসে হিংস্রতা, বর্বরতা, পৈশাচিকতা গণহত্যার অজস্র উদাহরণ আছে। ইতিহাসের সে সব ধ্বংসকাণ্ড ও নরমেধ কাণ্ডকেও যেন ম্লান করে দিয়েছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের স্নেহচ্ছায়ায় লালিত পালিত ও অর্থ-অস্ত্রে পুষ্ট ইজরায়েলের প্যালেস্তাইন অধিবাসীদের নিকেশ অভিযান। গাজায় কোনও যুদ্ধ হচ্ছে না। হচ্ছে গাজা দখলে লোলুপ ইজরায়েলের নরমেধ যজ্ঞ। যুদ্ধ হয় দু’পক্ষের মধ্যে। দু’বছর আগে ইজরা‍‌য়েলের বিরুদ্ধে অতিমাত্রায় দুর্বল হামাস যোদ্ধারা ছিল। অনেক আগেই তারা কার্যত অস্থিত্বহীন হয়ে পড়েছে। এখন প্রতিদিন চলছে হত্যা আর হত্যা। নিরীহ নিরপরাধ অসহায় মানুষ প্রধানত শিশু ও নারী হত্যা। যুদ্ধবাজ খুনি শাসক বা রাষ্ট্রনায়করা তাদের যে কোনও নিকেশ অভিযানের জন্য অজুহাত চায়। এক্ষেত্রে হামাস যোদ্ধাদের সন্ত্রাসবাদী হিসাবে চিহ্নিত করে তাদের নির্মূল ও নিঃশেষ করার কথা বলছে। বাস্তবে কয়েক শত হামাস যোদ্ধাকে খুন করার নাম করে ইতিমধ্যে ৭৫ হাজারেরও বেশি সাধারণ প্যালেস্তাইনিকে খুন করেছে। আহত বা পঙ্গু করেছে দু’লক্ষের কাছাকাছি। ইজরায়েল যদি গাজায় যুদ্ধ করত তাহলে পালটা প্রত্যাঘাত হতো ইজরায়েলেও। গত দেড় বছরেরও বেশি সময়ে একটি পটকাও গাজা থেকে ইজরায়েলের দিকে যায়নি। তাই একে কোনও অবস্থাতেই যুদ্ধ বলা যায় না, বলা ভালো একতরফা গণহত্যা ও ধ্বংসলীলা। একটা জনগোষ্ঠী এবং তাদের পিতৃভূমিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ হচ্ছে। দু’পক্ষই আক্রমণ পালটা আক্রমণ করছে। কিছুদিন আগে ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ হয়েছে। কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলেনি। থেমে গেছে কয়েকদিনের মধ্যেই। পাক-ভারত যুদ্ধও থেমে গেছে চারদিনের মাথায়। কিন্তু গাজায় ইজরায়েলের যুদ্ধ থামে না। যতদিন আমেরিকা অর্থ-অস্ত্র দিয়ে ইজরায়েলকে মদত দিয়ে যাবে ইজরায়েলও নারী-শিশু মহানন্দে খুন করে যাবে।
হামাসের আচমকা হামলার বদলা নেওয়া যদি ইজরায়েলের উদ্দেশ্য হতো তাহলে সেই এক মাসেই পূরণ হয়ে গেছে। এখন ইজরায়েলের লক্ষ্য বদলে গেছে। মানুষ খুন করতে করতে তাদের রক্তের নেশা ধরে গেছে। নরহত্যাই এখন তাদের পৈশাচিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। ইজরায়েলের এখন একমাত্র লক্ষ্য সম্পূর্ণ গাজা ভূখণ্ড দখল করা। গাজায় ২২লক্ষ প্যালেস্তাইনির বাস। গাজা থেকে তাদের যে কোনও উপায়ে হোক নিশ্চিহ্ন করতে হবে। একাজ দু’ভাবে হতে পারে। এক গাজা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া। দুই, গণহারে হত্যা করে মনুষ্যহীন করা। ইজরায়েল দু’টো পথই খোলা রেখেছে। প্রতিদিন বোমা-ক্ষেপণাস্ত্রে ধ্বংস করা হচ্ছে বাড়িঘর, রাস্তা-ঘাট, স্কুল, হাসপাতাল ইত্যাদি কাঠামো। মানুষের রুজি, বেঁচে থাকার যাবতীয় রসদ ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। সাথে পাইকিরি হারে খুন করা হচ্ছে মানুষ। গাজায় যুদ্ধের পরিণতিতে মানুষ মরছে না। পরিকল্পনা করে, টার্গেট করে সচেতনভাবে গণহত্যা করা হচ্ছে। খাদ্যের অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও পরিষেবার জোগান ধ্বংস করা হয়েছে। দুর্ভিক্ষ অনিবার্য করার জন্য। বল, জ্বালানি, ওষুধ, চিকিৎসা বন্ধ করা হয়েছে। বাইরে থেকে এমনকি রাষ্ট্রসঙ্ঘের পাঠানো ত্রাণ প্রবেশ নিষিদ্ধ। ত্রাণে লাইনে দাঁড়ানো নারী-শিশুকে গুলি করে মারা হচ্ছে।
সবচেয়ে যে ভয়ঙ্কর সেটা হলো সাংবাদিক হত্যা। গত দু’বছরে ২৭৮ জন সাংবাদিককে হত্যা করেছে ইজরায়েল। গাজায় নরপিশাচ ইজরায়েলের গণহত্যার ছবি বর্বরতার ছবি যে সাংবাদিকরা গোটা দুনিয়ার সামনে পৌঁছে দিচ্ছেন তাদের পরিকল্পনা করে খুন করা হচ্ছে। যাতে দুনিয়ার মানবিক সমাজের চোখের আড়ালে অন্ধকারে গাজাকে মানুষহীন করে ফেলতে পারে। এই একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও মানুষ এমন নররক্ত লোলুপ হতে পারে ইজরায়েল সেটা প্রমাণ করে দিচ্ছে।

Comments :0

Login to leave a comment