তদন্তে দীর্ঘসূত্রিতা করছে ইডি-সিবিআই। একাধিকবার আদালতের পর্যবেক্ষণেও উঠে এসেছে সেই কথা। বুধবার পুরদস্তুর সেই গাফিলতির সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করলেন তৃণমূল নেতা অভিষেক ব্যানার্জি।
বুধবার লিপস অ্যান্ড বাউন্ড সংস্থার সঙ্গে স্কুল নিয়োগ দুর্নীতির যোগসূত্র খুঁজতে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে অভিষেক’কে ডেকে পাঠান ইডি’র তদন্তকারীরা। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে শুরু করে টানা ৯ ঘন্টা জেরা চলে অভিষেকের। জেরা শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন অভিষেক ব্যানার্জি।
অভিষেক বলেছেন, ৯ বছর ধরে সারদা কেলেঙ্কারির তদন্ত চলছে। এখনও বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়নি। একজনও টাকা ফেরত পাননি। ২০১৬ সালের নারদকান্ডেরও তদন্ত শেষ করতে পারেনি সিবিআই। স্কুল নিয়োগ কান্ডের বিচার প্রক্রিয়া কী ২০৩৪-৩৬ সালে গিয়ে শুরু হবে?
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি এরাজ্যের একাধিক দুর্নীতির তদন্ত করছে। প্রতিটি তদন্তই আদালতের নির্দেশে হচ্ছে। অন্যান্য বিরোধী শাসিত রাজ্যে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে ইডি-সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। স্বাভাবিক ভাবেই বাংলার সঙ্গে অন্যান্য জায়গাগুলির ঘটনা গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। যদিও অভিষেক ব্যানার্জি সেটাই করার চেষ্টা করেছেন।
অভিষেকের বক্তব্য, বিরোধী রাজনৈতিক বিন্যাস ইন্ডিয়া গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে তৃণমূল। তাই ‘ইন্ডিয়া’-র বৈঠকের দিনেই তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, একদিন আগে পরেও তাঁকে ডেকে পাঠানো যেত। বৈঠকের দিনেই তাঁকে ডাকা হয়েছে, যাতে তিনি বৈঠকে যোগ দিতে না পারেন। বিজেপি এর মাধ্যমে বিরোধী ঐক্যকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, বিজেপি এবং তৃণমূল বোঝাপড়া করে অভিষেককে এই কথা বলার সুযোগ করে দিলে আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই।
অভিষেকের বক্তব্য, ইডি-সিবিআই আগে থেকেই তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে ফেলেছে। এখন চেষ্টা চলছে কীভাবে তাঁকে ফাঁদে ফেলা যায়। তাই কয়লা পাচার, গরু পাচার এবং শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে একই প্রশ্ন তাঁকে করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থা কী পরিষেবা দেয়া, বা কী পণ্য বিক্রি করে তা সম্পর্কে কোনও তথ্য নেউ। কিন্তু তারপরেও বিপুল মুনাফার মুখ দেখে এই সংস্থা। সাংবাদিকদের সামনে নির্দোষ হওয়ার জোরালো দাবি করলেও, এই বিষয়ে কোনও তথ্য দিতে শোনা যায়নি অভিষেককে।
কলকাতা হাইকোর্ট একাধিকবার অভিষেক সম্পর্কে বিরুপ মন্তব্য করেছে। সেই বিচারপতিদের প্রচ্ছন্ন চ্যালেঞ্জ করে অভিষেক বলেছেন, ইডি সম্ভব হলে আমার বয়ান আদালতের সামনে জানাক। আমি প্রথম দিন থেকে এক কথা বলে আসছি। আমার বক্তব্যের কোনও নড়চড় হয়নি।
ইডি এবং সিবিআই’র ঢিমেতালে চলা তদন্তের বিরুদ্ধে চলতি সপ্তাহে সুর চড়িয়েছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি তদন্তে গতি আনতে এবং অভিষেককে হেফাজতে নিয়ে জেরার দাবিতে ৫ অক্টোবর সিজিও কমপ্লেক্স অভিযানের ডাক দিয়েছেন।
Comments :0