Editorial

সংঘর্ষ বিরতির প্রহসন

সম্পাদকীয় বিভাগ

মুহুর্মুহু ভাষ্য ও অবস্থান বদলে বিশ্বে যার জুড়ি নেই এবং এক মুখে দু’রকম কথা বলায় যিনি সিদ্ধহস্ত সেই মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে প্যালেস্তাইনে ইজরায়েলি গণহত্যা বন্ধ করার জন্য যে সমঝোতা চুক্তি হয়েছে তার কার্যকারিতা নিয়ে নানা মহলে সন্দেহ দানা বেঁধেছিল গোড়াতেই। এখন সেই সন্দেহই বাস্তব রূপ পেতে শুরু করেছে। কাগজে কলমে সংঘর্ষ বিরতির সমঝোতা চুক্তির পরও ইজরায়েলের আগ্রাসী চরিত্র বদলায়নি, কাটেনি গণহত্যার নেশাও। যথারীতি নানা অজুহাত খাড়া করে ইজরায়েলি সেনারা গুলি চালিয়ে, কামান দেগে এমনকি আকাশ পথে বিমান ও ড্রোন হামলা চালিয়ে নিরপরাধ মানুষকে খুন করে যাচ্ছে। ওদিকে ওয়াশিংটনে বসে ট্রাম্প ও হামাস ইজরায়েল সংঘর্ষ বিরতির নায়ক হিসেবে নিজের কৃতিত্ব প্রচার করে যাচ্ছেন। আর ইজরায়েলি সরকারের অতি দক্ষিণপন্থী যুদ্ধবাজ মন্ত্রীরা ফের যুদ্ধে ফেরার জোরালো দাবি করে চলেছে। এই অবস্থায় গাজায় যুদ্ধ বন্ধের নামে যা চলছে তা প্রহসন ছাড়া আর কিছু নয়।
গত ৯ আগস্ট ট্রাম্প ঢাক-ঢোল পিটিয়ে প্রথম যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করেন। হামাস সেই বিবৃতিকে মান্যতা দিলেও ইজরায়েল গণহত্যা থেকে হাত গুটিয়ে নেয়নি। তারপর থেকে ইজরায়েল এক হাজার সাতাত্তর প্যালেস্তিনীকে খুন করেছে। কায়রোতে ট্রাম্পের উপস্থিতিতে এবং অন্যান্য দেশের নেতাদের উপস্থিতিতে দু’পক্ষের মধ্যে যে সমঝোতা হয় তারপর গত এক সপ্তাহে ৯৭জনকে খুন করেছে ইজরায়েল। আর গত ৪৮ ঘণ্টায় ভূমি ও আকাশ থেকে হামলা চালিয়ে খুন করেছে ৫৭জনকে। সব মিলিয়ে ৭০ হাজার খুন করেও নেতানিয়াহুর রক্ত পিপাসা মেটেনি।
গাজা যুদ্ধ বন্ধ করার ঘোষণা করে ট্রাম্প নোবেল শান্তি পুরস্কার পাবার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। দাবি করেন রাষ্ট্রপতি হবার পর ৮ মাসে ৮টি যুদ্ধ বন্ধ করে তিনি নাকি বিশ্ব রেকর্ড করেছেন। মজার ব্যাপার হলো গাজায় যে ইজরায়েলী গণহত্যা তার প্রধান মদতদাতা কিন্তু ট্রাম্পই। আমেরিকার অর্থ, সমর্থন এবং কূটনৈতিক সহায়তা ছাড়া ইজরায়েলের পক্ষে একদিনও যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। নিজেই যে যুদ্ধের মদতদাতা সেই যুদ্ধ থামানোর কৃতিত্ব দাবি করছেন ট্রাম্প। হাসির নাটকই বটে। একইভাবে মুখে নানা সময় নানা কথা বললেও ইউক্রেন যুদ্ধে ইউক্রেনকে অস্ত্র, অর্থ, সমর্থনও দিয়ে যাচ্ছে আমেরিকা। আসলে ইউক্রেন যুদ্ধই হোক বা গাজা যুদ্ধ পেছনে জড়িয়ে আছে আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ। সেজন্য গাজা গণহত্যায় ইজরায়েলের বিরুদ্ধে একটি শব্দও ট্রাম্প ব্যয় করেননি। ভুলেও গাজায় স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধ তথা পশ্চিম এশিয়ায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ভুল করেও স্বাধীন প্যালেস্তাইন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা উচ্চারণ করছেন না। ইজরায়েল এবং আমেরিকা চায় মানচিত্র থেকে প্যালেস্তাইনের বিলোপ ঘটাতে। সমগ্র প্যালেস্তাইনকে ইজরায়েলের দখলে আনাই মূল লক্ষ্য। তাই সমঝোতা যাই হোক, প্রচার যাই হোক ইজরায়েল তার লক্ষ্যপূরণে অবিচল আছে। পাশে আছে আমেরিকা।

Comments :0

Login to leave a comment