Manoj Pant

পুলিশের লাঠিচার্জে চাকরিহারাদের ওপরই দোষ চাপালো নবান্ন

রাজ্য

সমালোচনার মুখে পড়ে নবান্ন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে বাধ্য হলেন রাজ্যের মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ। এদিন কসবা ডিআই অফিস ঘেরাওকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয় পরিস্থিতি। মাটিতে ফেলে মারধর করা হয় চাকরিহারা শিক্ষক শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীদের। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় দেখা গিয়েছে উর্দিধারী পুলিশ একজন শিক্ষককে লাথি মারছেন। ঘাড় ধাক্কা দিচ্ছেন।
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে ঘটনাকে ‘অবাঞ্ছিত’ বলেছেন মুখ্য সচিব। কিন্তু দায় আন্দোলনকারীদের ওপর চাপান মনোজ পন্থ। তিনি বলেন, ‘‘আইন মেনে চলতে হবে। কোনও নাগরিক আইন নিজের হাতে নিতে পারেন না।’’
মুখ্যসচিবের কথায়, ‘‘কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। ডিআই অফিসে শিক্ষকদের বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। ৭ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রী নেতাজি ইন্ডোর থেকে জানানো সরকার চাকরিহারাদের পাশে আছে এবং চেষ্টা করছে এর সমাধান খোঁজার। মানবিক দিক থেকে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছিলেন। তারপরও এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। আমরা চাইছি না এই ধরনের ঘটনা ঘটুক।’’
একই সুরে বিক্ষোভকে দায়ী করছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও। কিন্তু প্রশাসনের কোনও স্তর থেকে বলা হয়নি যে অযোগ্যদের চিহ্নিত করে বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। চাকরিহারাদের বিক্ষোভে তৃণমূল সরকার এবং প্রশাসনের এই ভূমিকাতেই ক্ষোভ সবচেয়ে বেশি। টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের চাকরি দেওয়ার বাতিল হয়েছে প্যানেল। এমনকি এসএসসি পুড়িয়ে দিয়েছে ওএমআর শিট, বাছাইয়ের সুযোগ না রাখার চেষ্টায়। যে কারণে কাজ হারিয়েছেন যোগ্য শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীরা। 
লাথি মারার ঘটনা প্রসঙ্গে কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘‘গোটা বিষয়ের ফুটেজ দেখা হচ্ছে। কেন পুলিশকে এই কাজ করতে বাধ্য হলো তাও দেখা হচ্ছে। তবে লাথি মারার ঘটনা কাম্য নয়। গোটা বিষয়ের রিপোর্ট ডিসিপি-রা দেবেন।’’
মুখ্যসচিব বলেন, ‘‘মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টের আবেদন করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টে মানবিক দিক থেকে সিদ্ধান্ত নেবে। সরকার রিভিউ পিটিশন করবে সুপ্রিম কোর্টে।’’
তিনি বলেন, ‘‘এর মধ্যে যে ঘটনা ঘটেছে তা কাম্য নয়। সরকার পাশে আছে। যেই কষ্টের মধ্যে তাঁরা আছে তা সরকার বুঝতে পারছে। সবারই পরিবার আছে। সব মাথায় রেখে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’’ এর পর কার্যত হুঁশিয়ারির সুরে তিনি বলেন, ‘‘আমরা বলতে চাই এমন কোন ঘটনা যেন না ঘটে যাতে তাদের কোন আইনি সমস্যার মুখে পড়তে হয়। শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে আপনারা কাজ করুন। আইনের মধ্যে দিয়ে সমাধান খোঁজার চেষ্টা চলছে।’’ 
কসবার ঘটনার প্রসঙ্গে মুখ্য সচিব বলেন, ‘‘আজকে যে ঘটনা ঘটেছে তাতে সরকারি সম্পত্তি ক্ষয়ক্ষতির চেষ্টা করা হয়েছে। পুলিশ বাধ্য হয়ে লাঠি চার্জ করেছে পরিস্থিতি সামাল দিতে। শিক্ষক শিক্ষিকারা ছাত্রছাত্রীদের তৈরি করেন, তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা সম্মান আছে। আশা রাখছি ওঁরা সরকারের ওপর ভরসা রাখবেন আশা রাখবেন।’’
মনোজ ভার্মা বলেন, ‘‘কসবা ডিআই অফিসে হঠাৎ করে কয়েকজন ঢোকার চেষ্টা করেন। আমাদের ছয় জন আহত হয়েছে। শিক্ষক শিক্ষিকারা যদি কোনও কর্মসূচি নিতে চায় তাহলে পুলিশ তার ব্যবস্থা করবে যদি তারা আগে থেকে জানিয়ে রাখে। কসবার কর্মসূচিতে পুলিশের কাছে কোন অনুমতি নেওয়া হয়নি। প্রাথমিক ভাবে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।’’
আন্দোলনকারীদের দাবি তারা শান্তিপূর্ণ ভাবেই বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। পুলিশের ব্যারিকেডের অপর দিকে বসেই তারা বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। ব্যারিকেড ভাঙতে গেলে পুলিশ তাঁদের দিকে তেড়ে আসেন। তাঁরা ব্যারিকেড টপকে ডিআই অফিসে ঢুকে স্মারকলিপি দিতে গেলে ভিতরে ঢুকে লাঠি চালাতে থাকে পুলিশ। নির্বিচারে চলে লাঠিচার্জ। আহত হন অনেকে। একজনের পা ভেঙে গিয়েছে।
এই ঘটনার প্রসঙ্গে প্রথম থেকেই কলকাতা পুলিশ আন্দোলনকারীদের নিশানা করেছে। বলা হয়েছে, আন্দোলনকারীদের হামলায় কয়েকজন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে আন্দোলনকারীদের ওপরই পুলিশ অত্যাচার চালিয়েছে। রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগে লাগাতার দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে কোনও বিক্ষোভে এই ভূমিকাই নিয়ে গিয়েছে তৃণমূল সরকারের পুলিশ।

Comments :0

Login to leave a comment