ত্রিপুরার চড়িলামে পুলিশের সামনে ৭৫ বছর বয়সী সিপিআই(এম) কর্মী শহীদ মিঞাঁকে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে খুন করল বিজেপি কর্মী সমর্থকরা। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে ত্রিপুরা জুড়ে। এদিনের ঘটনার প্রেক্ষিতে সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরো সদস্য মানিক সরকার জানিয়েছেন, ত্রিপুরা রাজ্যের অর্থমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মার প্ররোচনায় এদিনের ঘটনা ঘটেছে। এদিনের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটি। শহীদ মিঁঞার হত্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার ত্রিপুরা জুড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে সিপিআই(এম)।
দীর্ঘদিন পরে চড়িলাম আঞ্চলিক কমিটির অফিস খোলার উদ্যোগ নেন সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ। ২০১৮ সাল থেকে এই অফিস অবরুদ্ধ করে রেখেছে বিজেপি। বারবার এই অফিস আক্রান্ত হয়েছে। এই কর্মসূচির আগাম অনুমতিও নেওয়া হয়েছিল সিপাহিজলা জেলা এবং বিশালগড় মহকুমা পুলিশের থেকে।
বুধবার সকালে সেই কর্মসূচির জন্য চড়িলাম আঞ্চলিক কমিটির দপ্তরের সামনে জড়ো হন সিপিআই(এম) নেতাকর্মীরা। সেই সময় তাঁদের চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে বিজেপি’র সশস্ত্র বাহিনী। জমায়েত লক্ষ করে ঢিল, পাথর এবং বোল্ডারের অংশ ছোঁড়া শুরু হয়। জমায়েতের ছড়িয়ে থাকা অংশের মানুষকে রাস্তায় ফেলে যথেচ্ছ মারধর করা হয়। সেই তান্ডবের মুখে পড়ে প্রাণ হারান শহীদ মিঁঞা। সিপিআই(এম) ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির ফেসবুক পেজের একটি ভিডিও অনুযায়ী, শহীদ মিঁঞার মুখ কার্যত থেঁতলে দেওয়া হয়। পাশবিক আক্রোশে তাঁর দাঁত, চোয়াল এবং কপালের হাড় ভেঙে দেয় বিজেপি আশ্রিত সমাজবিরোধীরা। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তিনি প্রাণ হারান। আহত পার্টি কর্মীদের উদ্ধার করে মূলত আগরতলা জিবি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ জিবি হাসপাতালে পৌঁছন ত্রিপুরার বিরোধী দলনেতা তথা সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরো সদস্য মানিক সরকার। তিনি আক্রান্তদের শারিরীক অবস্থার বিষয়ে খোঁজখবর নেন। সাংবাদিকদের মানিক সরকার জানান, বুধবার চড়িলাম ব্লকে গণডেপুটেশনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনের সহযোগিতায় ব্লক অফিস চত্ত্বরের দখল নিয়েছিল বিজেপি। প্ররোচনা এড়াতে চড়িলাম পার্টি অফিসের সামনে জমায়েত করেন সিপিআই(এম) কর্মীরা। কিন্তু সেই জমায়েতেও হামলা চালানো হয়। পাঁচজন সিপিআই(এম) কর্মীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকিদেরও আঘাত গুরুতর।
এদিনের ঘটনার প্রেক্ষিতে সিপিআই(এম) ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচনের ফলপ্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই চড়িলাম বিধানসভা সহ গোটা বিশালগড় মহকুমা জুড়েই সন্ত্রাসের রাজত্ব ফেঁদে বসেছে বিজেপি। সিপিআই(এম) করা একপ্রকার নিষিদ্ধ। চড়িলাম পার্টি অফিসও গায়ের জোরে বন্ধ করে দেয় বিজেপি। বুধবার এলাকার মানুষকে নিয়ে দীর্ঘদিন বাদে সেই অফিস খোলেন সিপিআই(এম) কর্মী সমর্থকরা। কিন্তু সকাল থেকেই পার্টি অফিসের সামনে পালটা সশস্ত্র জমায়েত করেছিল বিজেপি। পুলিশের সামনেই সবটা হয়েছে। আগামী দিনে ত্রিপুরার মানুষ এই গুন্ডারাজের উচিত শিক্ষা দেবেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, একাধিকবার বোমাও ছুঁড়েছে বিজেপি আশ্রিত সমাজবিরোধীরা। এদিনের কর্মসূচির নেতৃত্বে ছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিশালগড়ের বর্তমান বিধায়ক ভানুলাল সাহা। এদিন তিনিও রক্তাক্ত হন। সিপিআই(এম) কর্মী ‘সন্দেহে’ সাধারণ পথচারীদেরও মারধর করেছে বিজেপি’র বাহিনী। ঘটনাস্থলে উপস্থিত সংবাদমাধ্যের কর্মীদেরও মাটিতে ফেলে মারার অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে।
সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দের তরফে বারংবার প্রশাসনের কাছে আক্রান্তদের উদ্ধারের আবেদন জানানো হয়। অভিযোগ, ঘটনাস্থলে পুলিশকর্মীরা উপস্থিত থাকলেও কোনও সাহায্য মেলেনি। এরপরে পালটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে শুরু করেন সিপিআই(এম) কর্মীরা। স্থানীয় মানুষ এবং চড়িলাম বাজারের ব্যবসায়ীরাও তাঁদের পাশে এসে দাঁড়ান। সেই সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে এলাকা ছেড়ে চম্পট দেয় বিজেপি’র বাহিনী। তারপর পার্টির উদ্যোগে আহতদের হাসপাতালে স্থানান্তিরত করার কাজ শুরু হয়। এদিনের ঘটনায় ১২ জনের বেশি পার্টি কর্মী গুরুতর জখম হয়েছে বলে সিপিআই(এম) সূত্রে খবর।
এদিনের হামলার জন্য সরাসরি ত্রিপুরার উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মাকে দায়ী করেছেন জিতেন্দ্র চৌধুরী। তাঁকে ‘আসল গুন্ডা’ বলেন জিতেন্দ্র চৌধুরী। প্রসঙ্গত, এদিনের ঘটনাস্থল জিষ্ণু দেববর্মার বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। জিতেন্দ্র চৌধুরীর অভিযোগ, জিষ্ণু দেববর্মার মদতপুষ্ট দুষ্কৃতীদের নেতৃত্বে এদিনের ঘটনা ঘটেছে।
Comments :0