আগামী ২০ এপ্রিল মেহনতী জনতার ব্রিগেড সমাবেশে, জনসমুদ্রে ভাসবে কলকাতার রাজপথ। রবিবার ব্রিগেড সমাবেশকে কেন্দ্র করে পদযাত্রা হয় বর্ধমানে। প্রতিটি বাড়িতে নিয়মিত বিশুদ্ধ পানীয় জল পৌঁছতে হবে। প্রিপেইড স্মার্ট মিটার বাতিল করো এই স্লোগান দিয়ে এদিন ব্রিগেড যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। ২০ এপ্রিল ব্রিগেড সমাবেশকে কেন্দ্র করে পদযাত্রা নীলপুর শালবাগান বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু হয়ে প্রভাত সংঘ হয়ে কুমোর পাড়া, বাজার, শান্তিপাড়া, সেন্টজেভিয়ার্স স্কুল হয়ে ১২ ও ১৩ নং ওয়ার্ড পরিক্রমা করে।
রবিবার ব্রিগেডের সমর্থনে কাটোয়ায় বিড়ি-শ্রমিকদের নিয়ে চলছে বৈঠকি সভা। এক এক করে সভায় এসে বসছেন মহিলা বিড়ি শ্রমিকেরা। সভার বক্তা বিড়ি শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা সাধন দাস। তিনি বলেন, ২০২৩ সালে শেষ মজুরি বেড়েছিল প্রতি হাজারে ২০ টাকা। তারপর থেকে জিনিসের দাম বেড়েছে কত গুণ! কিন্তু শ্রমিকদের মজুরি বাড়েনি। রাজ্য সরকার ঘোষিত মজুরি ২৬৯ টাকা, প্রতি হাজারে আমরা পাই মাত্র ১৮০ টাকা। অনেকে আবার তাও পান না। বিধানসভা, লোকসভায়, বড় বড় মঞ্চে, টিভিতে, বড় বড় ভাষণ চলে, কত কূটকচালি। কিন্তু মজুরির কথা বলার কেউ নেই, লাল ঝান্ডা ছাড়া। বিড়ি শিল্প থেকে কর বসিয়ে আগে সরকারের আয় ছিল ৩০০ কোটি টাকা। তার বেশির ভাগটাই তখন শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে খরচ করা হতো, শ্রমিকদের জন্য ৫টি সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের মাধ্যমে। আর এখন ২৮ শতাংশ জিএসটি বসিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের আয় ২৫০০ কোটি টাকা। এখন রাজ্য এবং কেন্দ্র সরকার মিলে ট্যাক্স বাবদ প্রায় ৮ গুণের বেশি টাকা আয় করলেও বন্ধ শ্রমিকদের জন্য সমস্ত রকম সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প। বেশ কয়েক বছর ধরে মিলছে না বিড়ি শ্রমিকদের পরিচিতি পত্রও। কাটোয়া মহকুমা সহ পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রায় ৪৫ হাজার বিড়ি শ্রমিকদের সংগঠিত করে বর্ধিত মজুরি আদায় করতে হবে। বিড়ি শ্রমিকদের ঘাম ঝরানো বিড়ি শিল্প থেকে আদায়কৃত ট্যাক্সের টাকায় সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে সরকারের কাছ থেকে। বয়সকালে নানান পেশাগত অসুখে ভোগেন বিড়ি শ্রমিকেরা, তাদের জন্য বিনা খরচে সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থা পুনরায় চালু করতে হবে। এই জন্যই চাই শ্রমজীবীদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। গ্রামের চাষিদের তৈরি ফসলের দাম নেই, ১০০ দিনের কাজ নেই, শ্রমিকের বাঁচার মতো মজুরি নেই। এই বঞ্চনা আর অনটনের দিন বদলাতে হবে। দেশ এবং রাজ্যের রাজনৈতিক ভারসাম্যের পরিবর্তন ঘটাতে হবে শ্রমজীবীদের পক্ষে। দেশ বাঁচাতে, রাজ্যে বদল আনতে, ধর্ম আর জাতপাতের নকল যুদ্ধকে বদলাতে হবে রুটি রুজির লড়াইয়ে। চারিদিকে যেন লুটেরাদের মোচ্ছব চলছে। কৃষক, খেতমজুর আর শ্রমিকদের জোটবদ্ধ শক্তিই পারে এই নৈরাজ্যের অবসান ঘটিয়ে খেটে খাওয়া মানুষের জন্য নতুন দিনের সন্ধান দিতে। গ্রাম শহরের জীবন জীবিকার এই ছোট ছোট লড়াই আন্দোলনের ঢেউ গিয়ে আছড়ে পড়বে আগামী ২০ এপ্রিল ব্রিগেড সমাবেশে, মেহনতী জনতার জনসমুদ্রে।
ব্রিগেড সমাবেশে সমর্থনে এদিন শ্রীরামপুর নগা মোড় থেকে মিল্কি বাদামতলা পর্যন্ত বিরাট মিছিল হয়। মেহনতী মানুষের ব্রিগেড সফল করার আহবান জানিয়ে জাঙ্গীপাড়ার অমল সিংহরায় ভবনের প্রণব সরকার কক্ষে কৃষক, খেতমজুর ও শ্রমিক সংগঠনের যৌথ কনভেনশন হয়। দেবকুমার কোঙার সলিল চৌধুরীর 'শপথ' কবিতা পাঠের মধ্য দিয়ে কনভেনশন শুরু হয়। কনভেনশনে বক্তব্য রাখেন সিআইটিইউ হুগলী জেলা সাধারণ সম্পাদক তীর্থঙ্কর রায়, খেতমজুর নেতা স্বপন বটব্যাল ও কৃষক নেতা রজতাভ রায়।
শ্রমিক স্বার্থবিরোধী শ্রম কোড বাতিলের দাবিতে আগামী ২০ মে সাধারণ ধর্মঘটের সমর্থনে রবিবার মগরা শহীদ স্মৃতি ভবনে সিআইটিইউ- কৃষক সভা ও খেতমজুর সংগঠনের পক্ষ থেকে কনভেনশন হয়। কনভেনশনে প্রস্তাব উত্থাপন করেন বাবলু ঘোষ। প্রস্তাবের সমর্থনে বক্তব্য রাখেন শ্রমিক নেতা মনোদীপ ঘোষ, তরুণ ঘোষ সহ জহর সেনগুপ্ত, তপন সাধুখাঁ ও তারা বিবি । মনোদীপ ঘোষ ব্রিগেড সমাবেশ ও সাধারণ ধর্মঘটের দাবিগুলো ব্যাখা করেন। সভা পরিচালনা করেন স্বপন দে,গুরুপদ ঘোষ ও তপন সাধুখাঁকে নিয়ে গঠিত সভাপতিমণ্ডলী।
রবিবার বাগনানে ব্রিগেড সমাবেশের সমাবেশের সমর্থনে পদযাত্রা হয়। বাগনান ১ ব্লকের কল্যানপুর অঞ্চল এলাকায় এই পদযাত্রা হয়। কল্যানপুর অঞ্চল থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে আমতা বিধানসভা এলাকার পানিত্রাস গ্রাম হয়ে শেষ হয় বিরামপুর পোলে। মোট ১০টি বুথ এলাকার পানিত্রাসের ৪টি বুথ, বড়াবাড়, গোবিন্দপুরের ২টি বুথ, বিরামপুরের ৩টি বুথে ১০কিলোমিটার পদযাত্রা হয়। শুরুতে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন কৃষকসভার জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য ভাস্কর রায়। ছিলেন বাগনান এলাকার সিআইটিইউ নেতা শ্যাম অধিকারী, খেতমজুর ইউনিয়নের সেলিমুদদিন আহমেদ, মহঃ ওলিদ, বিমল মাইতি প্রমুখ শ্রমজীবী নেতৃত্ব।
Comments :0