বাংলার একটি অত্যন্ত পরিচিত প্রবাদ ‘নাচতে না জানলে উঠোনের দোষ’। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সরকারের হলো এখন অনেকটা সেরকম। ক্রমাগত তাঁর সরকারের ব্যর্থতা, অপদার্থতা বাড়তে থাকায় তিনি এখন সবকিছুর মধ্যেই বিরোধীদের ষড়যন্ত্র দেখছেন। বিরোধীদের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে নিজের অসহায়তা ঢেকে পার পেতে চাইছেন। তা না হলে তার নিজের খাস তালুক রাজ্যের সর্বশ্রেষ্ঠ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল এসএসকেএম-এ ডাক্তারের ইউনিফর্ম পরা জনৈক বহিরাগত এক নাবালিকা রোগীকে ধর্ষণ করার পর তিনি এই ঘটনার পেছনে বিরোধীদের ষড়যন্ত্র খুঁজতে নামতেন না। যদিও অভিযুক্তের সঙ্গে তার দলের নেতাদের ঘনিষ্ঠতার কথা কারও অজানা নয়। অপরাধীরা অপরাধ করবে, বিরোধীরা বিরোধিতা করবে। তারজন্য সরকার ন্যাকা কান্না কেঁদে দায় সারতে পারে না। হাসপাতালে পুলিশ আছে, কড়া নিরাপত্তা আছে, আছে নজরদারির ব্যবস্থা। তারপরও যে কেউ এসে যা খুশি করে যাবে। তাহলে সরকারের কাজ কি ঘোড়ার ঘাস কাটা। তাছাড়া হাসপাতালে সাম্প্রতিককালে বিশেষ করে আরজি করে তরুণী ডাক্তারের ধর্ষণ-খুনের পর যে সব ভয়াবহ ঘটনা ঘটে চলেছে তার প্রায় প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের রয়েছে প্রশাসনিক ও শাসক যোগ। আরজি করে পুলিশের শীর্ষস্তরের ঘনিষ্ঠ সিভিক পুলিশ ধর্ষক-খুনি। অভিযোগ রয়েছে হাপাতাল অধ্যক্ষ, পুলিশ অফিসার সহ আরও অনেকের বিরুদ্ধে। তথ্য প্রমাণ লোপাটে যুক্ত পুলিশ কর্তা ও শাসক নেতারা। উলুবেড়িয়ায় অভিযুক্ত হোমগার্ড। দুর্গাপুর, বীরভূমে অভিযুক্তরা শাসক ঘনিষ্ঠ। মুখ্যমন্ত্রীর উচিত বিরোধীদের ষড়যন্ত্র খোঁজার আগে নিজের দলের ও সরকারের মধ্যে তার বিরুদ্ধে সক্রিয় ষড়যন্ত্রীদের খোঁজা যদি সত্যিই কোনও ষড়যন্ত্র হয়ে থাকে।
আসলে ষড়যন্ত্র একটি পিঠ বাঁচানোর অবান্তর কৌশল। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও সেটা জানেন। অপরাধীদের প্রশ্রয় দিতে দিতে এমন এক রাজনৈতিক ইকোসিস্টেম তিনি তৈরি করেছেন যেখানে অপরাধীদের সাজা দেবার বদলে উৎসাহিত করা হয়। কারণ এই অপরাধীরাই ভোটের সময় সন্ত্রাস-ভোট লুট করে তৃণমূলকে জয়ী করে। তার বিনিময়ে বাকি সময় যথেচ্ছ অপরাধের অবাধ ছাড়পত্র মেলে। অপরাধী ধর্ষক হোক, খুনি হোক, তোলাবাজ হোক, এলাকার মাতব্বর বা দাদা হোক পুলিশ তাদের সুরক্ষা দিয়ে যাবে।
আরজি করের ঘটনার পর কত নির্দেশ কত পদক্ষেপ বাস্তবে সব ভোঁ-ভা। সকলেই জানেন ওসব কথার কথা। লোকভোলানোর জন্য বলতে হয়। আদতে তার কিছুই হবে না। বলেছিলেন মহিলা পুলিশ বাড়বে। বাড়েনি। সিসি ক্যামেরা পর্যাপ্ত বসেনি। নজরদারির কিছুই হয়নি। হয়নি বলেই একের পর এক হাসপাতালে ঘটনা ঘটে চলেছে। অপরাধীরা জানে দলের ছাতা মাথায় আছে। পুলিশ ঠিক বাঁচিয়ে দেবে। অতএব অপরাধে ভয় কিসের। এসএসকেএম’র পরও একগুচ্ছ নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছেন। তার যে কিছুই হবে না বলাই বাহুল্য। কিছুদিন পর আর একটি হাসপাতালে অনুরূপ ভয়ঙ্কর কিছু ঘটে গেলেও অবাক হবার কিছু থাকবে না। এটাই তৃণমূলী শাসনের বৈশিষ্ট্য।
Editorial
ষড়যন্ত্রের ভুত দেখে অপদার্থরা
×
Comments :0