Editorial

ট্রাম্পই মোদীর সহায়

সম্পাদকীয় বিভাগ

দেশের সম্মান-মর্যাদা কি মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বন্ধক দিয়ে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী? গুরুতর এই প্রশ্ন এবং উদ্বেগের কথা সাম্প্রতিক সময়ে নানা মহল থেকে উঠতে শুরু করেছে ট্রাম্পকে কেন্দ্র করে মোদী সরকারের ঢাকঢাক গুড়গুড় আচরণে। স্বাধীনচেতা এবং আত্মসম্মানে ভরপুর ভারতবাসী বুঝতেই পারছেন না ট্রাম্পের সম্মানহানিকর আচরণে এবং মন্তব্যে প্রধানমন্ত্রী কেন স্পষ্ট বিরোধিতা বা প্রতিবাদ না করে মৌনব্রত পালন করছেন। সরকারের পক্ষ থেকে আমলা অথবা সিকি-আধুলি মন্ত্রীরা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পালটা কিছু বলার চেষ্টা করলেও সরাসরি ট্রাম্পের নাম করছেন না। অথচ ট্রাম্প দিনের পর দিন ভারতের সিদ্ধান্ত, নীতিগত অবস্থান নিজের মতো করে ঘোষণা করছেন এবং একই কথা একাধিকবার বলে চলেছেন মোদী সরকারকে পাত্তা না দিয়ে। ট্রাম্পের কাছে মোদীদের কীসের এত দায়বদ্ধতা যে ভারতের নীতিগত অবস্থান সম্পর্কে তিনি নিজের খুশিমতো মন্তব্য করে গেলেও মোদীদের নীরবে তা হজম করতে হবে!
মোদী সরকারকে পাত্তা না দিয়ে ভারতকে বারবার অসম্মান করার এই পর্ব শুরু হয়েছে পহেলগাম-উত্তর ভারত-পাকিস্তান সামরিক সংঘাতের সময় থেকে। তার আগে অবশ্য ভারতীয় পণ্যের উপর অস্বাভাবিক হারে শুল্ক চাপানোর পর্ব শুরু হয়। তখন থেকেই আশ্চর্যজনকভাবে মোদী সরকারের নীরবতা দৃশ্যমান। চীনসহ অন্যান্য অনেক দেশ আমেরিকার বিরুদ্ধে পালটা পদক্ষেপ নিলেও মোদীরা আবেদন নিবেদন আর কাকুতি-মিনতির পথ বেছে নেন। শেষে ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ এবং রাশিয়া থেকে তেল কেনার শাস্তি হিসাবে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশসহ মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপান ট্রাম্প। ব্রাজিল ছাড়া আর কোনও দে‍‌শের বিরুদ্ধে এত উচ্চ হারে শুল্ক চাপানো না হলেও মোদীরা প্রকাশ্যে ট্রাম্পের বিরোধিতা করে কোনও শব্দ ব্যয় করেননি।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন আচমকা হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে ওয়াশিংটন থেকে ট্রাম্প ঘোষণা করে দিলেন তাঁর মধ্যস্থতায় পাক-ভারত যুদ্ধ বিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর বেশ কয়েক ঘণ্টা পরে ভারতবাসী ভারত সরকারের কাছ থেকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানতে পারেন। তারপর থেকে গত কয়েক মাসে ৫০ বারেরও বেশি দুনিয়ার সামনে ট্রাম্প স্বগর্বে দাবি করেছেন পাক-ভারত যুদ্ধ বন্ধ করার আসল কারিগর তিনিই। পাকিস্তান প্রকাশ্যে ট্রাম্পের দাবিতে শিলমোহর দিলে ভারত ইনিয়েবিনিয়ে আমেরিকা ও ট্রাম্পের নাম উহ্য রেখে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের কথা অস্বীকার করে। যদিও মোদী একবারের জন্যও সরাসরি ট্রাম্পের দাবির বিরোধিতা বা প্রতিবাদ করেননি।
কয়েকদিন আগে ট্রাম্প এক ধাপ এগিয়ে ঘোষণা করেন মোদী নাকি তাঁকে বলেছেন রাশিয়া থেকে ভারত তেল কেনা বন্ধ করে দেবে। সরাসরি মোদীকে টেনে এমন গুরুতর সিদ্ধান্তের কথা ট্রাম্প প্রকাশ্যে ঘোষণার পরও মোদী কোনও কথা বলেননি। আসলে মোদী সরকার ভারতের ভবিষ্যৎকে এমনভাবে আমেরিকার সঙ্গে জড়িয়ে ফেলেছে যে ট্রাম্পের বা আমেরিকার বিরুদ্ধে কথা বলার সৎসাহসটুকুও হারিয়ে ফেলেছে। ট্রাম্প যা খুশি তাই করলেও ট্রাম্পকে চটাতে পারছেন না মোদীরা। ট্রাম্পের হাত ছাড়লে ধরার মতো হাত থাকছে চীনের। কিন্তু চীনের সঙ্গে সদ্ভাব নৈব নৈব চ। অতএব ট্রাম্পের লাথি ঝাঁটা খেতেও আপত্তি নেই।

Comments :0

Login to leave a comment