চিন্ময় কর- ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর
ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ৯টি ব্লক জুড়ে হাতির তান্ডব। গত সাত দিন ধরে চলছে এই তান্ডব অভিযোগ কৃষকদের। কখনও ভোর রাতে, কখনও আবার সন্ধ্যায় ধানের জমি, সবজি চাষের জমিতে হাতির তান্ডব চলছে। আর রাতের অন্ধকারে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে গরীব সাধারণ মানুষের ঘর ভেঙে ধান চাল শুঁড়ে তুলে নিয়ে জঙ্গলে আশ্রয় নিচ্ছে। প্রসাশন, বনদপ্তর নির্বিকার। এলাকায় হাতির পাল ঢুকেছে আপনার সতর্কে থাকুন এবং জঙ্গলের রাস্তায় যাবেন না এমন মাইক প্রচার করে বনদপ্তরের রেঞ্জ ও বীট দপ্তর গুলো দায়সারা দায়িত্ব পালন করা ছাড়া হাতি তাড়ানোর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় ব্যাপক ক্ষতিতে সর্বশান্ত কৃষকেরা।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সদর ব্লকের মনিদহ, চাঁদড়া, ধেড়ুয়া, শালবনী ব্লকের পীড়াকাটা, চন্দনকাষ্ঠ, কলসিভাঙা সহ গড়বেতা ও গোয়ালতোড় এই ব্লক গুলির একাধিক মৌজায় ২৫-থেকে ৩৫টি হাতির পাল ধানের জমি, সবজি জমির ফসল সাবাড় করে কৃষকদের সর্বশান্ত করার ঘটনা সাত দিন ধরে চলছে এমনটাই অভিযোগ কৃষকদের। তাদের বক্তব্য হাতির পালের সঙ্গে একাধিক শাবক থাকায় এলাকা না ছেড়ে জঙ্গলে স্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়ে ভোর হলেই এবং সন্ধ্যার মুখে চাষের জমিতে নেমে ফসল নষ্ট করছে।
একদিকে অতিবৃষ্টি, ওপর দিকে বন্যায় ধান সবজি চাষের জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হলেও, সেই ক্ষতিপূরণ এবারে কৃষকরা পাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ। এরপরও যেটুকু ফসল জমিতে এখনো রয়েছে সেখানেই হাতির পালের তান্ডব চলছে। স্থানীয়দের অভিযোগ তৃণমূলের রাজত্বে ধ্বংস হচ্ছে জঙ্গল, হচ্ছে লুঠও। সেই কারণে শতকরা ২৩ ভাগ জঙ্গলের পরিমান কমেছে। জঙ্গলের খাবার সঙ্কট হওয়ায় হাতির পাল চাষের জমিতে ও লোকাকয়ে ডুকে পড়ে তান্ডব চালাচ্ছে। ঘটনায় গ্রামের মানুষ আতঙ্কিত। ঘর বাড়ি ছেড়ে মানুষ অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
ঝাড়গ্রাম জেলার ঝাড়গ্রাম, গিধনী, জামবনী, সাঁকরাইল, মানিকপাড়া এমন ব্লক গুলির একাধিক মৌজায় একই ভাবে হাতির পালের তান্ডব চলছে। দুই জেলা মিলিয়ে ২৫০টির বেশি হাতির পাল একাধিক দলে ভাগ হয়ে তান্ডব চালিয়ে কৃষকদের সর্বশান্ত করে চলেছে।
ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের জামবনি রেঞ্জের ভালুকা বিটের অন্তর্গত কানিমুহুলি এলাকায় রাতে একটি মুদির দোকানে হানা দিয়ে দোকান ভেঙে প্যাকেট জাত খাবার শুঁড় দিয়ে টেনে সাবাড় করার ঘটনা ঘটে। মাটির ঘরের ওই দোকানটি একাংশ প্রায় ভেঙে দেয় হাতির পাল। ঝাড়গ্রাম রেঞ্জের পুকুরিয়া বিটের পিঁপড়ির জঙ্গল এলাকায় মেলা থেকে ফেরার পথে সামনে পড়ে হাতির পাল। স্কুটির আলো হাতির দিকে পড়তেই ধেয়ে আসে। আর হাতির হাত থেকে প্রাণে বাঁচতে রাস্তার উপর স্কুটি ফেলে জঙ্গলের ভিতরে কালর্ভাটের নিচে লুকিয়ে প্রাণে বাঁচেন তিন জন। হাতির পাল সেই স্কুটিটি পা দিয়ে দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে দেয় এমন ঘটনাও ঘটেছে।
Comments :0