দলদাসত্ব করতে গিয়ে কলকাতা পুলিশ কি তাদের দায়িত্ব কর্তব্য এবং সংবেদনশীলতা শাসক দলের কাছে বন্ধক দিয়ে রেখেছে? পুলিশ কি ভুলে গেছে ভারত একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশ। সংবিধান সব নাগরিককে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের বিরোধিতা করার, প্রতিবাদ করার, শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ দেখাবার, মিছিল করার, আন্দোলন করার অধিকার দিয়েছে। পুলিশ কি জানে না সংবিধানের নির্দেশ মাথায় রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা তাদের কাজ। অপরাধীকে চিহ্নিত করে উপযুক্ত সাজা দেবার দায় পুলিশের ঠিকই তাই বলে সকলকে অপরাধী ঠাওড়ানো পেশার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা।
নির্বাচনে যেকোনও দল ক্ষমতায় আসতে পারে। সরকারের নির্দেশ পুলিশ অবশ্যই পালন করবে, তবে শাসক দলের নির্দেশ নয়। সর্বোপরি পুলিশকে এই সত্য আত্মস্থ করেই উর্দি ধারণ করতে হয় যে তারা সংবিধানের দাস, আইনের দাস, কিন্তু শাসক দলের দাস নয়। বাস্তবে কলকাতা পুলিশ এবং রাজ্য পুলিশের আচরণে পদে পদে প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে, সংবিধান বা আইন নয়, দলদাসত্বেই অনুরাগ বেশি। বছরের পর বছর দলদাসত্বের হীনমন্যতা তাদের এমনভাবে গ্রাস করেছে যে এখন আর বিরোধী দলনে শাসকের নির্দেশের অপেক্ষায় থাকতে হয় না। সরকার বিরোধিতার আঁচ পেলেই তা দমনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বিরোধী দমনের নৃশংসতা ও বর্বরতায় শাসক গুন্ডা ও দলদাস পুলিশের মধ্যে তেমন কোনও পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে আক্রান্তরাই মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার আর আক্রমণকারীরা বুক ফুলিয়ে চলে।
দলদাসত্বের জোয়াল কাঁধে নিয়ে পুলিশ যে শুধু তাদের কর্তব্যজ্ঞান হারিয়েছে তা নয়, ন্যূনতম ভদ্রতা, সভ্যতা, মানবিক আচরণ, সংবেদনশীলতাও লোপাট হয়ে গেছে। হারিয়েছে যুক্তিবোধ, বাক্সংযম ও পরিমিতিবোধও। আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীদের প্রতিবাদ দমনে কলকাতা পুলিশ যে আচরণ করেছে তাকে কদর্য বললেও কম বলা হয়। ভাবা যায় একজন মহিলা প্রতিবাদীর উপর হিংস্র বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়েও ক্ষান্ত হয়নি, একশো পুলিশ দূর থেকে তীর বেগে ছুটে এসে তাকে কামড়ে দিয়েছে। পুলিশের কামড়ে ক্ষতবিক্ষত আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করলেও তাকে হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজন মনে করেনি। উলটে থানার লক-আপে ধৃত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে পুলিশ আধিকারিক বলছেন, মারা গেলে নাকি পুলিশ দায়িত্ব নেবে। তেমনি আন্দোলনকারীকে পুলিশের কামড়ানোকে বৈধতা দিতে পুলিশ কর্তা যুক্তি দিয়েছেন ঐ পুলিশ কর্মীকেও নাকি কামড়ানো হয়েছিল। কতটা অধঃপতিত হলে এমন যুক্তি খাড়া করা যায় এই ঘটনা থেকে পরিষ্কার। অর্থাৎ কলকাতা পুলিশ জানাচ্ছে পুলিশকে কামড়ালে পুলিশও পালটা কামড়াবে। বলা মুশকিল কলকাতা পুলিশে কামড়ানোর প্রশিক্ষণ চালু হয়েছে কি না। তবে এরাজ্যের পুলিশ যে আর পুলিশ নেই, ইতিমধ্যেই দলদাস হয়ে গেছে সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।
Comments :0