হ্যাম বা অ্যামেচার রেডিও বললেই মনে আসে কঠিন পরিস্থিতিতে যোগাযোগ স্থাপনের কথা। প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঝড়-বৃষ্টি, বন্যাতে যখন মোবাইল নেটওয়ার্ক কাজ করে না, সে সময় হ্যাম রেডিও (HAM Radio) অপারেটররাই সরকারের থেকেও বেশি মানুষের সাহায্যে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ‘যোগাযোগ’ কথাটা শুনতে হালকা বলে মনে হলেও নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা সরকারের বিভিন্ন অংশে পৌছে দেয় 'হ্যাম'।
সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষের জন্য ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া বা তাদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসার মতোও উল্লেখযোগ্য কাজগুলো করে থাকে হ্যাম রেডিও অপারেটর উত্তরাখন্ড বিপর্যয়, কেরালা বন্যা, বুলবুল, ফনি, আমফান সহ নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে হ্যাম অপারেটরা উল্লেখ যোগ্য ভাবে বার্তা বাহকের কাজ করেন। সঙ্গে গঙ্গাসাগর, কুম্ভ মেলা তো রয়েছেই। সেখানেও পুলিশ, বিপর্যয়-মোকাবিলা দপ্তরের সঙ্গে সমঝোতা করে কাজ করে যান তাঁরা।
লকডাউনে মোবাইল নেটওয়ার্ক কাজ করলেও অসুধ, চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্যায় পড়েন সাধারণ মানুষ। বহু দুরদুরান্ত থেকে শুধু রেডিও’ যোগাযোগের মাধ্যমেও ওষুধ পৌঁছে দিয়েছেন।সদ্য শেষ হওয়া গঙ্গা সাগর মেলাতেও অন্যবারের মতোই কাজ করে গেছেন হ্যাম রেডিও ওপারেটরা। তবে ২০২৩’র গঙ্গাসাগর মেলায় অন্য সব কাজের সঙ্গে বিশেষ কিছু প্রোগ্রাম করেন। গঙ্গাসাগর মেলা প্রসঙ্গে বিশ্ব বাসীর কাছে বার্তা পৌঁছে দেন। সাগরদ্বীপের কথাও পৃথিবীকে শোনান তাঁরা।
এই প্রোগ্রাম গুলোকে বিশেষ নামেও ব্যখ্যা করেন। তবে সাগর দ্বীপ, সাগর সৈকত বা কপিল মুনির আশ্রমের বার্তা বিশ্বের কাছে এই বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তুলে ধরলেন কেন? সে কথা জানতে চাইলে পশ্চিমবঙ্গ রেডিও ক্লাবের কর্মকর্তা অম্বরিশ নাগ বিশ্বাস বলেন ওই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের কর্ম সংস্থানের জন্য। তিনি জানান সারা বছরে এই সাগরদ্বীপে পর্যটক প্রায় আসেই না। যা মানুষ আসেন শুধু এই গঙ্গাসাগরের সময়। সাগর মেলা শেষ, এঁদের রোজগারের পথও বন্ধ। যা উপার্জন হয় এই মেলাকে ঘিরেই। আয় রোজগারের জন্য বছরের অন্যান্য সময় যুবকেরা চলে যান বাইরে। অম্বরীশ নাগ বিশ্বাসের আরও দাবি গঙ্গাসাগর মেলার বাইরে সাগরদ্বীপের ঐতিহ্য তুলে ধরে দেশ বিদেশের পর্যটকদের টানতেই এই প্রয়াস।
এই বিশেষ অণুষ্ঠান গুলোর জন্য ভারত সরকারের কাছ থেকে একটি নির্দিষ্ট ‘AT2WBRC’ কল সাইনও পান অম্বরিশ নাগ বিশ্বাস। ১৯৬৪ সালে আইল্যান্ড অন দ্যা এয়ার বা আইওটিএ (IOTA) নামে একটি প্রোগ্রাম শুরু করেন এক দল অ্যামেচার রেডিও অপারেটরা। তাদের কাজ ছিল কোন অজানা দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, কিভাবে সেখানে যাওয়া যায় সেই বার্তা বিশ্ববাসীকে জানানো। পরবর্তী সময় ব্রিটেনের রেডিও সোসাইটি সেই উদ্যোগকে অনুমোদন দেয়। গঙ্গাসাগর মেলায় গিয়ে আইওটিএ’র মাধ্যমে সাগরদ্বীপের সমস্ত বার্তা সঙ্গে ছবি বিশ্ববাসীর সঙ্গে শেয়ার করেন অ্যামেচার অপরেটররা। 'বিচ অন দ্যা এয়ার' বা 'বিওটিএ' (BOTA) এই রকমই একটা প্রোগাম যেখানে সাগরদীপের সৈকত, তার অবস্থান , যাতায়াত ব্যবস্থা ইত্যাদি বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
ভারতে প্রথম বিচ অন দ্যা এয়ার অনুষ্ঠান সংগঠিত করেন পশ্চিম বাংলারই দুই হ্যাম রেডিও অপারেটর VU3IBL এবং VU3IZV। ১৮-১৯ ডিসেম্বরের মৌসুনী দ্বীপের বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন তারা।
ইন্দোনেশিয়ার হ্যামেরদের মতো টেম্পল অন দ্যা এয়ার বা TOTA সংগঠিত করেন তারা। সেখানে কপিল মুনির আশ্রমের ইতিহাস, অবস্থান, ছবি শেয়ার করেন। বিশ্বের সমস্ত হ্যাম অপারেটরদের নিজস্ব একটি পোর্টাল আছে সেই https://www.qrz.com/ মাধ্যমেই ছবি ও সমস্ত তথ্য অন্যান্য দেশের হ্যাম অপারেটির এবং বিশ্বের কাছে ছড়িয়ে দেন তারা। প্রত্যেকটি অনুষ্ঠান অনুমোদন দেয় ভারত সরকার।
সুতরাং হ্যাম মানে শুধুই বিপর্যয় মোকাবিলা নয়, হ্যাম মানে কিছু বিশেষ উদ্যোগও।
Comments :0