আরব সাগরের তীরে শনিবাসরীয় সন্ধ্যায় খেতাবি লড়াইয়ে নামছে এটিকে মোহনবাগান- বেঙ্গালরু এফসি। প্রস্তুতি শেষ। এবার মাঠে নেমে একে অপরকে টক্কর দেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন দিমিত্রি পেত্রাটোস-রয় কৃষ্ণরা। দু’বছর আগে ফাইনালে উঠলেও ট্রফি জিততে পারেনি সবুজ মেরুন শিবির। প্রথমবার আইএসএল খেতাবের স্বাদ পাওয়ার লক্ষ্যে মাঠে নামবেন শুভাশিস বসু, প্রীতম কোটাল, মনবীর সিংরা। তেমনই, ২০১৮-১৯ মরসুমে শেষবার আইএসএল জিতেছিল বেঙ্গালুরু এফসি। পরের তিন মরশুমে পারফরম্যান্স আহামরি ছিল না বিএফসি’র। ফের ফাইনালে উঠেছে তারা। এখন খালি হাতে কিছুতেই ফিরতে নারাজ সুনীল ছেত্রী, কৃষ্ণারা।
সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স অনুযায়ী, শেষ পাঁচ ম্যাচে অপরাজিত মোহনবাগান। টানা ১১ ম্যাচ জিতে ফাইনালে উঠেছে বেঙ্গালুরু। তবে সবুজ মেরুন ব্রিগেডের মুখোমুখি হলে বেঙ্গালুরু বিশেষ সুবিধে করে উঠতে পারে না। আট বছর আগে বেঙ্গালুরুকে হারিয়ে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মোহনবাগান। আইএসএলেও ছ’টি সাক্ষাতে নীল জার্সিধারীরা জিতেছে মাত্র একবারই। সেটা এবছরই। যুবভারতীতে শেষ মুহূর্তে মোহনবাগানের প্রাক্তনী কৃষ্ণার গোলে ২-১ জিতেছিল বেঙ্গালুরু। কিন্তু গোয়ার মাঠে খেলা হবে অন্যরকম। দু’দলই ম্যাচটা আবেগ-সম্মানের ম্যাচ হিসেবেই দেখছে। এটাই যেন বাড়তি তাতিয়ে দিচ্ছে এটিকে মোহনবাগান ও বেঙ্গালুরুর ফুটবলারদের। বাগান অধিনায়ক প্রীতম কোটাল তো বলেই দিলেন, ‘বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে ম্যাচ ডার্বির মতোই।’ বেঙ্গালুরুতে রয়েছেন তাঁর বন্ধুরা। প্রবীর দাস, সন্দেশ ঝিঙ্গান ও কৃষ্ণা। এ প্রসঙ্গে প্রীতম বলছেন, ‘মাঠের বাইরে আমরা সবাই বন্ধু। শনিবার নব্বই মিনিটে কেউ কারোর বন্ধু নই। প্রথম আইএসএল ট্রফি দিতে চাই মোহনবাগানকে।’ শুক্রবার সকালেও অবধি প্রীতম বন্ধুপ্রীতি দেখিয়েছেন। গোয়ার হোটেলে সাংবাদিক সম্মেলন শেষ করে বেরানোর পরই সুনীল ছেত্রীর কাছে চলে যান। তাঁকে জড়িয়ে ধরেন। ফাইনালের জন্য শুভেচ্ছা জানান। সন্দেশকেও আলিঙ্গন করতে দেখা যায় প্রীতমকে। অপরদিকে প্রবীর, সন্দেশরা ফাইনালকেই মোহনবাগানকে জবাব দেওয়ার ম্যাচ হিসাবেই দেখছেন। ভীষণভাবে মুখিয়ে রয়েছেন তিনজনই।
চলতি মরশুমে এটিকে মোহনবাগান একাধিক সুযোগ তৈরি করেছে। গোল করেছে মোটে ২৬টা। একজন পজিটিভ স্ট্রাইকারের অভাবে ভুগেছে। বিপক্ষের যদি রক্ষণ শক্তিশালী হয়, আটকে যেতে দেখা গিয়েছে মনবীর, পেত্রাটোস, হুগো বুমোসদের। সেমিফাইনালে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ২১০ মিনিট খেলেও গোলমুখ খুলতে পারেনি বাগান। ফাইনালে আগে ডিফেন্সের জট ভেঙে কীভাবে গোল করতে হবে, অভিনব অনুশীলন করেছেন মনবীররা। বেঙ্গালুরু খুবই শক্তিশালী। বড় চেহারার সন্দেশ, সঙ্গে দু’বিদেশী ডিফেন্ডার। বেঙ্গালুরুও খুব বেশি গোল খায়নি। ফাইনালে জিততে হলে গোল করতেই হবে, ফতোরদা স্টেডিয়ামে বড় চ্যালেঞ্জের সামনে মোহন আক্রমণভাগ। খেলতে পারেন আশিক কুরুনিয়ান, তিনি খেলতে পারলে বেঙ্গালুরুর রক্ষণকে চাপে ফেলতে সুবিধ হবে বাগানের। ফাইনাল মানেই পরীক্ষার ম্যাচ। আক্রমণভাগের মতোই গোল আটকানোর পরীক্ষা প্রীতম, স্লাভকোদের কাছে। বিপক্ষের বিপজ্জনক আক্রমণ বিভাগকে সামলাবেন কীভাবে? উত্তরে প্রীতম আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই বলেন, ‘ওদের প্রত্যেক ফরোয়ার্ডই ভাল। একেকজন একেক রকমের। রয় ও শিবশক্তি প্রথমে আক্রমণের দায়িত্বটা পালন করে। তার পরে সুনীলভাই এসে গোল করে। ওদের নিয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমরা দল হিসাবে খেলব। দল হিসাবেই ওদের আটকাব।’ প্রীতম-স্লাভকো সমৃদ্ধ রক্ষণের প্রশংসাও করেছেন বিপক্ষ কোচ সাইমন গ্রেসন।
ফাইনালে দলের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে বাগান কোচ জুয়ান বলেছেন, ‘হায়দরাবাদ ম্যাচের চেয়ে কিছু আলাদা তো করতেই হবে। বিশেষ করে খুঁটিনাটি ব্যাপারে পরিবর্তন আনতেই হবে। হায়দরাবাদ আর বেঙ্গালুরু তো একই রকম দল নয়। এরা অন্য ধরনের স্টাইলে খেলে। কিন্তু আসল ব্যাপারগুলো একই থাকবে। বল পায়ে রাখতে হবে, জায়গা তৈরি করে আক্রমণে উঠতে হবে। মানসিকতায় কোনও বদল আসবে না।’ বিপক্ষ নিয়ে সমীহের সুরে ফেরান্ডো জানান, ‘বেঙ্গালুরু মুম্বাইয়ের মতো দলকে হারিয়েছে। মুম্বাইকে হারানো অত সোজা নয়।’ কোচের কথাতেই বোঝা যাচ্ছে তিনি সতর্ক বেঙ্গালুরুকে নিয়ে।
স্বাভাবিকভাবেই হওয়ার কথা। বেঙ্গালুরু যেভাবে ফাইনাল উঠেছে, তাঁদের নিয়ে সতর্ক না হলে মুশকিলে পড়তে হবে। একটা সময় লিগ তালিকায় বেঙ্গালুরুর অবস্থান ছিল দশ নম্বরে। সেখান থেকে অভাবনীয় প্রত্যাবর্তন করে প্রথম প্লে-অফে যোগ্যতা অর্জন করা, তারপর লিগ শিল্ড জয়ী মুম্বাইকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠা। এছাড়াও দলের সবাই ছন্দে রয়েছে। বিশেষ করে শিবাশক্তি, কৃষ্ণা, জাভি হার্নান্ডেজের মতো ফুটবলাররা। সুনীল ও উদান্তা সিংয়ের অভিজ্ঞ ফুটবলার রয়েছেন রিজার্ভে। গোলের নিচে গুরুপ্রীত সিং সান্ধুর বিশ্বস্ত হাত। তাই, ফাইনাল নামার আগে মনোবল তুঙ্গে রয়েছে বিএফসির। কোচ সাইমন বলছেন, ‘বিপক্ষের প্রতি আমার সম্মান রয়েছে। কিন্তু আমার দলেও ম্যাচের রং পাল্টে দেওয়ার মতো ফুটবলারের অভাব নেই।’ কার্যত গ্রেসনের প্রেরণাতেই দলটা দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং, এ ধরনের বড় ম্যাচ কোনও পথে বের করতে হয়, নিশ্চিত তিনি ফুটবলারদের বাতলে দিয়েছেন। এবার ফুটবলারদের কার্যকর করার পালা।
আইএসএল ফাইনাল: এটিকে মোহনবাগান:বেঙ্গালুরু এফসি (ম্যাচ শুরু সন্ধ্যা ৭.৩০)
Comments :0