Belakoba Chamcham

নাওয়া খাওয়ার সময় নেই বেলাকোবার চমচম কারিগরদের

জেলা

দীপশুভ্র সান্যাল: জলপাইগুড়ি

আজ বিজয়া দশমী। আর এই দশমী মানেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হল মিষ্টি। আর এই মিষ্টির সঙ্গে যুগ যুগ ধরে মাুষের গভীর সম্পর্ক। তবে জলপাইগুড়ির মিষ্টির নাম এলেই বেলাকোবার চমচমের কথা আলাদা করে উল্লেখ না করলে যেন ছবিটাই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। একসময় রাজগঞ্জ ব্লকের শিকারপুর অঞ্চলের অন্তর্গত বেলাকোবার একটি বিশেষ দোকানের চমচম সারা জেলা জুড়ে জনপ্রিয় ছিল। পাশাপাশি রাজগঞ্জ ব্লকের ফুলবাড়ির পান্তুয়াও একসময় সমানভাবে কদর কুড়িয়েছিল। তবে সময়ের পরিবর্তনে ফুলবাড়ির সেই দোকান ভাগ হয়ে গেলেও এখনও একটি দোকান পাওয়া যায় পান্তুয়া বা লালমোহন যা মানুষকে আকর্ষণ করে। অন্যদিকে বেলাকোবার চমচম এখন আর এক দোকানে আবদ্ধ নয়, সমানতালে নাম কুড়িয়েছে জেলার একাধিক মিষ্টির দোকান। ফলে আজ বেলাকোবার নাম শুনলেই চমচমের কথা মনে পড়ে। 
স্থানীয় মিষ্টির কারিগরের পরিশ্রম, খাঁটি দুধ-ছানা ও পুরনো রেসিপির ঐতিহ্য ধরে রাখার মানসিকতা—সব মিলিয়ে বেলাকোবার চমচম আজ শুধু একটি মিষ্টি নয়, জলপাইগুড়ির ঐতিহ্যের অংশ হয়ে উঠেছে। চা-বাগান, বনভূমি ও পাহাড়ের পাশাপাশি কদর বাড়িয়ে  বেলাকোবার চমচম ডুয়ার্সের ‘মিষ্টি পর্যটন’র অন্যতম মুখ হয়ে উঠতে পারে। শারদীয়ার আমেজে শহর যখন আলোয়, প্যান্ডেলে আর উৎসবের ঢেউয়ে ভাসছে, তখন বেলাকোবার মিষ্টির কারিগরদের ব্যস্ততা তুঙ্গে। বিজয়া দশমী থেকে কোজাগরী পূর্ণিমা, দীপাবলি থেকে ভাইফোঁটা সব উৎসবের মিষ্টির চাহিদা মেটাতে চমচমের প্রস্তুতি চলে দিনরাত।

মিষ্টি কারিগরদের মতে, ছানার পরিমাণ বেশি থাকায় মুখে দিলেই এই মিষ্টি মিলিয়ে যায়। চমচমের স্বাদে মিশে আছে বাংলাদেশের বিখ্যাত পোড়াবাড়ির মিষ্টির আভাস। 
জানা যায়, দেশভাগের পরে পূর্ববঙ্গ থেকে আসা কিছু মিষ্টি কারিগর বেলাকোবায় বসতি স্থাপন করেছিলেন। তাঁদের হাত ধরেই পোড়াবাড়ির প্রাচীন রেসিপির ছোঁয়া মিশে যায় এখানকার চমচমে। সেই থেকে আজও ঐতিহ্য বজায় রেখেছেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম। খাঁটি দুধ, পরিশ্রম আর রন্ধনশিল্পের সূক্ষ্ম কৌশল এই তিনের মেলবন্ধনেই তৈরি হয় বেলাকোবার অনন্য চমচম। স্থানীয়রাই বলেন, “শারদৎসবে বেলাকোবার চমচম না হলে আনন্দ অসম্পূর্ণ থেকে যায়।” শুধু স্থানীয়রা নয়, আশপাশের রাজ্য, এমনকি প্রতিবেশী দেশ থেকেও বহু মানুষ এই মিষ্টির খোঁজে চলে আসেন। কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় নিয়মিত সরবরাহ হচ্ছে বেলাকোবার চমচম। স্থানীয়দের দাবি পর্যটনের সঙ্গে মিষ্টির এই ঐতিহ্যকে যুক্ত করলে হয়তো কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে।  আবার বেলাকোবা চমচমের নাম দেশ-বিদেশে আরও ছড়িয়ে পড়বে। বেলাকোবার চমচম ডুয়ার্সের মিষ্টি পর্যটনের অন্যতম মুখ হয়ে উঠতে পারে।

Comments :0

Login to leave a comment