PROBANDHA / KRITIKA BHATTACHARJEE / WIN INDIA / MUKTADHARA / 6 NOVEMBER / 3rd YEAR

প্রবন্ধ / কৃত্তিকা ভট্টাচার্য্য / মধ্যরাতে ভারতের সূর্যোদয় / মুক্তধারা / ৬ নভেম্বর ২০২৫, বর্ষ ৩

সাহিত্যের পাতা

PROBANDHA  KRITIKA BHATTACHARJEE  WIN INDIA  MUKTADHARA  6 NOVEMBER  3rd YEAR

প্রবন্ধ 

 

মুক্তধারা 

মধ্যরাতে ভারতের সূর্যোদয়
 

কৃত্তিকা ভট্টাচার্য্য 

৬ নভেম্বর ২০২৫, বর্ষ ৩

ঠিক রাত বারোটা বেজে এক মিনিট, টিভিতে ভাষ্যকার বলে উঠলেন "মধ্যরাতে ভারতের সূর্যোদয়, হাজার মানুষের স্বপ্নপূরণ" পাশে বসেছিলেন প্রাক্তন ক্রিকেটার ও ২০১৭ র বিশ্বকাপ খেলোয়াড় ঝুলন গোস্বামী। দঙ্গল সিনেমায় আমিরখানের একটি কথা আছে," sona chora lave ya chori, sona to sona hota hai" । হাজার হাজার বাজির শব্দের মধ্যেও যেন এই কথাটিই প্রচারিত হচ্ছিল। আর মাঠে একরাশ হাসি , শেষ বলটি হরমনপ্রিত আকাশে লাফিয়ে যখন ধরল সেই উচ্ছ্বাস , "আমরা পেরেছি", শত শত জনতার সশব্দেও যেন ছিল "আমরা পেরেছি"। যাদের খেলা সম্পর্কে দুদিন আগে কেউ জানত না সেমি ফাইনালে অভাবনীয় সাফল্য এবং তারপর ফাইনালে দর্শকআসন ভর্তি , টিভিতে ৯ কোটি লোক খেলা দেখছে, একই সংখ্যা যারা ফোনে খেলা দেখছিল, এবং মাঠে সেই টানটান উত্তেজনা, প্রতিটা পদক্ষেপে দু'পা মেপে নেওয়া, প্রতিপক্ষের ব্যাটের চারের পরে একটা শর্ট বলে ক্যাচ ধরে ফেলা যেন এক স্বপ্নের মুহূর্ত , যা অর্জন করতে হয়েছে বহু বছরের প্র্যাকটিসের ফলে। গত রোববার যে মেয়েটি ভারতীয় দলে ছিল না , তার ঠিক এক সপ্তাহের মধ্যে ভারতীয় দলে এসে অভাবনীয় প্রদর্শন ও বিশ্বকাপ জয় যেন একটি আশ্চর্য মুহূর্ত।যাকে একঘরে করে রেখে এলাকার মানুষ খেলা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিল, অবসাদে বিপর্যস্ত সেই মেয়েটি , বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন দলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ব্যাট হাতে গর্জন করেছেএবং আপামর জনসাধারণের মনে জায়গা করে নিয়েছে। সেমিফাইনাল এর সেই অভাবনীয় ম্যাচের পরে ফাইনালে কোটি কোটি মানুষ টিভির সামনে মুখ লাগিয়ে বসে থেকেছে যাদেরকে জিততে দেখবে বলে সেই ২ নভেম্বরের রাত সফল হয়েছে যাদের জন্য তাদেরকে কুর্নিশ। লিঙ্গবৈষম্যের কটাক্ষে বিদ্ধ হয়েও না দমে গিয়ে এই সাফল্য, হেরে গিয়েও ওই এক শতাংশ সম্ভবনাকে শত শতাংশ করে দেওয়াও সম্ভব এই সব গুলো দিনশেষে প্রমাণ করে তোমার লিঙ্গ তোমার কর্ম নির্ধারক নয়। তোমার পরিশ্রম এবং নিষ্ঠা তোমার কর্ম ও প্রাপ্তি নির্ণয় করবে। মিতালী রাজ , ঝুলন গোস্বামীদের দীর্ঘ লড়াই , একটি পুরুষ প্রধান খেলায় দাঁড়িয়ে যেখানে মাটির কণাও মেয়েদের দিতে রাজি নয় কতিপয় কতৃপক্ষ এবং এই ভূমন্ডলের এক বৃহৎ অংশ, যাদের "মেয়েদের ক্রিকেট খেলা" মানে ডাংগুলি খেলা এই সাফল্য আজ তাদেরও । মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতের খেলা দেখলে মনে হয়, তারা আজ এমন একটি অর্ধগোলকে আছে যেখানে তারা স্টেডিয়ামে বসে থাকা জনতার কথা শুনতে পাচ্ছে না । জীবনে চাওয়া পাওয়ার মধ্যে থেকে এমন মুহুর্ত আসে যখন মনোসংযোগ তুঙ্গে থাকে, ঘুমের ঘোরের মতো না , এটা কিছুটা আলোর পথযাত্রীর আলোর সন্ধান বা অর্জুনের তীরে মাছের চোখ বিদ্ধ করার মতন। ঠিক তেমনি ছিল মাঠে দুইদলের খেলোয়াড়দের। তাদের পরিচয় তারা ভারতীয় এবং প্রতিপক্ষের পরিচয় তারা দক্ষিণ আফ্রিকান, বাস্তব থেকেই সিনেমা তৈরি হয়, সেদিন সত্যি তারা চক দে ইন্ডিয়ার কবির খানের কথায়,"তারা কেবল ভারতীয়" এবং আজ তাদের জিততে হবে, দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য। এবং সবশেষে প্রমাণ করতে হবে, "মানুষ চাইলে সব করতে পারে, সে ছেলে হোক বা মেয়ে"। মাইকেল ফেলপসের কথায়"You can't put a limit on anything. The more you dream, the farther you get"। ভারত তার তৃতীয় একদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বিশ্বকাপের ট্রফিও অর্জন করতে পারে। আগেরবারের ২৮ বছরের অপেক্ষার পর , আর এবারে ১৪ বছর পর ভারত আবার বিশ্বসেরা । ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা, এক গর্বের সূর্যকিরণ যেখানে তারকার নাম দীপ্তি শর্মা, হরমনপ্রীত কৌর, শেফালী বর্মা, রিচা ঘোষ, স্মৃতি মান্ধানা ,জেমাইমা রড্রিগেস ,হারলিন দেওল ,উমা ছেত্রী,স্নেহ রানা ,অমনজোত কৌর,রাধা যাদব,এন. শ্রী চরনি,রেণুকা সিং ঠাকুর,অরুন্ধতী রেড্ডি,ক্রান্তি গৌড়।

Comments :0

Login to leave a comment