Lok Sabha Election 2024

ভোট দিতে বাধা, ইভিএম পুকুরে ফেললেন গ্রামবাসীরা

রাজ্য লোকসভা ২০২৪


লোকসভা নির্বাচনের সপ্তম তথা শেষ দফার ভোটগ্রহণ শনিবার। সারা দেশের ৫৭টি লোকসভা আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এরই মধ্যে রয়েছে দক্ষিণবঙ্গের ৯টি আসন দমদম, বারাসত, বসিরহাট, কলকাতা উত্তর, কলকাতা দক্ষিণ, যাদবপুর, ডায়মন্ড হারবার, মথুরাপুর এবং জয়নগর। 
শনিবার সকাল থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হতে না হতেই, ভোট দানে বাঁধা। এজেন্ট বসানোকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার খবর আসতে শুরু করে দিয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। নির্বাচনের আগের দিন থেকেই বিভিন্ন লোকসভা কেন্দ্রে শুরু হয়ে গিয়েছে এজেন্টদের হুমকি, মারধরের ঘটনা। বেশ কিছু জায়গায় টাকা ছড়িয়ে দুষ্কৃতীদের দিয়ে ভোট বানচাল করার চেষ্টা করেছে তৃণমূল, কেড়ে নেওয়া হয়েছে ভোটার কার্ড। বসিরহাট লোকসভার বিভিন্ন এলাকায় বুথ এজেন্টদের বুথে না যাওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে বসিরহাট লোকসভার বিভিন্ন বুথ এলাকায়। এদিন ভোট শুরুর আগেই বারাসাত লোকসভা কেন্দ্রের কদম্বগাছিতে বিরোধী দলের বুথ সভাপতির মেয়ের মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। 
শুক্রবার রাত থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ডায়মন্ডহারবার কেন্দ্র। সেখানে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাস শুরু হয়, রাত থেকেই বাড়ি ভাঙচুর, বাড়িতে ঢুকে হামলা, বাইক বাহিনী দাপিয়ে বেড়িয়েছে। ওই কেন্দ্রে সিপিআই(এম) প্রার্থী প্রতীক উর রহমানের কাউন্টিং এজেন্টকে তৃণমূল অফিসে তুলে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। মথুরাপুর কেন্দ্রের নালুয়া সহ বহু জায়গায় টাকা ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ভাঙড়ে বোমাবাজির খবর মিলেছে এদিন। গাঙ্গুলিবাগানে সিপিআই(এম) কর্মীকে ব্যাপক  হয়েছে শুক্রবার। 
এদিন এজেন্ট বসানোকে কেন্দ্র করে বরানগরের রবীন্দ্রভবনের ১০৬ নম্বর বুথে উত্তেজনা ছড়ায়। 
দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের সোনালী পার্কের কাছে একটি স্কুলে ২৬৪ এবং ২৬৫ নম্বর বুথে ভোট চলাকালীন বুথ জামের অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। দক্ষিণ কলকাতার সিপিআই(এম) প্রার্থী সায়রাশাহ হালিমের ইলেকশন এজেন্ট কৌস্তব চ্যাটার্জি বলেছেন,  বুথের বাইরে বেশ কিছু মানুষের জমায়েত হয় সকাল সকাল। ভোট দিতে আসা মানুষদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা চলে। এই খবর পেয়ে তিনি যখন ওই বুথের সামনে যান, তখন তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাঁর ওপর চড়াও হয় বলে অভিযোগ। তাঁকে মারধর করা হয় এবং তার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। 
কলকাতা দক্ষিণ কসবা বিধানসভা কেন্দ্রের সুনীল নগর প্রাইমারি স্কুলের ৯৩ নম্বর বুথে সিপিআই(এম)  পোলিং এজেন্টদের কাছ থেকে ফর্ম ছিনতাই করে নিয়েযায় দুই বাইক আরোহীর। সিপিআই(এম) নেতা সুদীপ সেনগুপ্ত এ খবর জানিয়ে বলেছেন আবার ফর্ম দিয়ে পাঠানো হয়েছে।
বড়িশা স্কুলের (বেহালা পূর্ব)১৮৫ ও ১৮৭ নং বুথে এখনো ভোট শুরু করা যায়নি অনেকক্ষণ। বড়িশা স্কুলের তিনটি বুথেই ভোট শুরু হয়েছে। ডায়মন্ড হারবারে ভুয়ো এজেন্ট ধরলেন সিপিআই(এম) প্রার্থী প্রতীক উর রহমান। এদিন নতুন করে উত্তপ্ত ভাঙ্গর। 
এদিন ভোট চলাকালিন বারুইপুর পূর্বের হিমচিতে সৃজনকে ঘিরে বিক্ষোভ, গণ্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে। বারুইপুরে বুথের বাইরে জমায়েত। খবর পেয়েই সেখানে হাজির হন সিপিআই(এম) প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্য্য। বুথের ১০০ মিটারের মধ্যে এত জমায়েত কেন,  এই প্রশ্ন তুলতেই তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ এসে জমায়েত সরানোর চেষ্টা করে। বারুইপুরের হিংচি প্রাইমারি স্কুলে সিপিআই(এম)’র এজেন্টকে বসতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ পেয়ে যাদবপুরের বাম প্রার্থী সেখানে যেতেই তাঁর গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ। সৃজন বলেন, ‘‘বিক্ষোভে কিছু যায় আসে না। এজেন্ট বসিয়েছি। সেটা হয়ে গেছে। কমিশনকে জানাব। বেআইনি জমায়েত হয়ে আছে। এখানে গুণ্ডামি হচ্ছে। এখন পরেরটাতে যাচ্ছি। কোনও অসুবিধা নেই। তৃণমূল হারছে।”
যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের সোনারপুর উত্তর বিধানসভার নতুনদিয়াড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩১ এবং ৩২ নম্বর বুথে এজেন্টদেরকে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে আসেন সিপিআই(এম) প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্য।
বিষ্ণুপুর চক এনায়েত নগরে এজেন্টদের বার করে দিয়ে ব্যাপক ছাপ্পা চলছে। যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সোনারপুর উত্তর বিধানসভার খেয়াদহ-২ অঞ্চলের ৩০ নম্বর বুথে বিরোধী এজেন্টকে বুথে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ শাসকদলের বিরুদ্ধে। 
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর লোকসভা কেন্দ্রের কুলতলির মেরিগঞ্জ এলাকায় পুকুরে ফেলে দেওয়া হল ইভিএম ও ভি ভি প্যাট। অভিযোগ ভোট কেন্দ্রে তৃণমূল ঢুকতে বাধা দিচ্ছে। জানা গেছে গ্রামের মহিলারাই ইভিএম ও ভি ভি প্যাট পুকুরে ফেলে দিয়েছেন। ঘটনা কুলতলি বিধানসভা মেরিগঞ্জ ২ অঞ্চলের ৪০ , ৪১ নম্বর বুথে।
গতকালের পর এদিন সকাল থেকেই উত্তপ্ত ভাঙ্গরের সাতুলিয়া। যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের ভগবানপুর অঞ্চলের সাতুলিয়া এলাকায় আইএসএফ ও সিপিআই(এম) কর্মী সমর্থকদের উপর হামলার অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ঘটনাস্থলে পড়ে আছে তাজা বোমা।
হিঙ্গলগঞ্জে বিধানসভার খুলনা ১৭০ নম্বর বুথে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভোট দিতে গিয়ে সিপিআই(এম) প্রার্থী নিরাপদ সর্দার লক্ষ্য করেন তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী দেবব্রত মন্ডল ভোট কেন্দ্রের ১০০ মিটারের মধ্যে ঢুকে ভোটারদের প্রভাবিত করছেন। প্রতিবাদ করেন নিরাপদ সর্দার। তৈরি হয় উত্তেজনা। কিউআরটির জওয়ানরা ছুটে আসে এবং পরিস্থিতি সামাল দেয়। সাংবাদিকরা দেবব্রত মণ্ডলকে ঘিরে ধরলে সে পালিয়ে যায়। এরপর ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নিরাপদ সর্দার লক্ষ্য করেন প্রিসাইডিং অফিসার পরিচয়পত্র ছাড়াই ভোট পরিচালনা করছেন। নিরাপদ সর্দার পরিচয় জানতে চান। প্রশ্ন করেন কে আপনি?  উত্তর আসে আমি প্রিসাইডিং। আপনার পরিচয়পত্র কোথায়? শেষে পরিচয় পত্র গলায় ঝোলাতে বাধ্য হন। ৬৬ নম্বর ওয়ার্ড, তপসিয়া, ফলস ভোটের অভিযোগ। ঘটনাস্থলে সিপিআই(এম) সায়রা শাহ হালিম।
পানিহাটি পৌরসভার অন্তর্গত ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের ১৪৭ , ১৪৮ , ১৪৯ ও ১৫০ নম্বর বুথে সিপি‌আই(এম) এজেন্টদের ঢুকতে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। আরো অভিযোগ ভোটের কার্ড ঠিকঠাক চেকিং হচ্ছে না। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌছায় দমদম লোকসভা কেন্দ্রের সিপিআই(এম) প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী। 
শুক্রবার রাতভর চলছে তৃণমূলেরসন্ত্রাস। নাকতলায় বোমা পড়ছে। উন্মত্ত হয়ে উঠে তৃণমূলী বাহিনী। আক্রমণ কেবল সিপিআই(এম)’র ওপরে। রাত ১২টার পর ১০১ নম্বর ওয়ার্ডে, ৮ জন পোলিং এগেন্টের বাড়িতে তৃণমূল আক্রমণ করে, কয়েক জনের বাড়িও ভাঙচুর করে। বিভিন্ন এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তৃণমূলের বাইক বাহিনী।

 

Comments :0

Login to leave a comment