এক দশকে রাজ্যে সরকারি ক্ষেত্রে ৬ লক্ষ শূন্যপদ তৈরি করে পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে মাত্র ২১ শতাংশ পদ পূরণ করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন মমতা ব্যানার্জি।
সেই নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি কবে প্রকাশ হবে সরকার জানাতে পারেনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘আগামী এক বছরের মধ্যে নিয়োগ করা হবে।’’
কর্মসংস্থানই এরাজ্যের অন্যতম সমস্যা তা রাজ্য সরকারের অজানা নেই। গ্রামে ১০০ দিনের কাজ বন্ধ। একই সঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে নিয়োগ নেই। তার থেকেও নিয়োগ দুর্নীতি ও চাকরি বিক্রির আতঙ্কই এখন পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাজ্য সরকার ও শাসকদলকে বিপাকে ফেলতে পারে বুঝেছে।
তাই পঞ্চায়েত ভোটের আগে ফের নিয়োগের আশ্বাস দিয়ে মঙ্গলবার নবান্নে মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ‘‘ আমাদের লক্ষ্য আরও বেশি কর্মসংস্থান। রাজ্যে সব মিলিয়ে আগামী এক বছরের মধ্যে ১লক্ষ ২৫ হাজার পদে সরকার কর্মী নিয়োগ করবে। আগামী দু’তিন মাসের মধ্যে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে।’’
রাজ্যে সরকারি ক্ষেত্র ও শিক্ষকের পদে প্রায় ৬ লক্ষের ওপর শূন্যপদ পড়ে আছে। শুধু সরকারি ক্ষেত্রেই প্রায় আড়াই লক্ষের বেশি পদে কোনও নিয়োগ নেই। সাড়ে তিন লক্ষের ওপর শিক্ষক পদে নিয়োগ নেই। পঞ্চায়েত ও পৌরসভা মিলিয়ে শূন্যপদ ৫০ হাজারের ওপর। বিপুল এই শূন্যপদে নিয়োগ যেমন নেই, তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, গত এক দশকে এরাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতি অতীতের সব দুর্নীতির ঘটনাকে ম্লান করে দিয়েছে।
আসলে এরাজ্যে কর্মসংস্থান ও নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে লাগাতার আন্দোলনে ডিওয়াইএফআই সহ বামপন্থী ছাত্র ও যুব সংগঠন। এমনকি সরকারি কর্মচারীরাও তাঁদের ডিএ প্রাপ্তির আন্দোলনে জুড়েছেন শূন্যপদে স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগের দাবিকেও। ফলে আগামী পঞ্চায়েত ভোটে কাজ ও দুর্নীতি যে অন্যতম ইস্যু হতে চলেছে তা বুঝেই এদিন নবান্ন থেকে সরকারি ক্ষেত্রে নিয়োগ প্রসঙ্গ তুলেছেন মমতা ব্যানার্জি।
মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে ডিওয়াইএফআই রাজ্য কমিটির সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি জানান, ‘‘দায়িত্বশীল পদে থেকে মুখ্যমন্ত্রীর এই ধরনের ফাঁকা প্রতিশ্রুতির আমাদের কাছে কোনও অর্থ নেই। সরকারি নিয়োগ নিয়ে বাজেটে কোনও কথার উল্লেখ ছিল না। মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি না দিয়ে নিয়োগের দ্রুত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নিরপেক্ষতার সঙ্গে স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ করে দেখান।’’
রাজ্যে ভোট আসলেই মমতা ব্যানার্জির বেকার যুবকদের চাকরির কথা মনে পড়ে। ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটের আগে এরাজ্যে গ্রুপ ডি পদে ৬০ হাজার নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটে লড়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। তৈরি করা হয়েছিল গ্রুপ ডি রিক্রুটমেন্ট বোর্ড। ভোটের পর ৬ হাজার নিয়োগের প্যানেল তৈরি করেও সেই নিয়োগ প্রক্রিয়াও সম্পূর্ণ করেনি নবান্ন। এখন গ্রুপ ডি নিয়োগপ্রার্থীরা চাকরির দাবিতে আন্দোলনরত।
মঙ্গলবারও নবান্ন থেকে মমতা ব্যানার্জি গ্রুপ ডি পদে সরকারি চাকরিতে ১২ হাজার কর্মী নিয়োগের আশ্বাস দিয়েছেন। গ্রুপ ডি রিক্রুটমেন্ট বোর্ড তুলে দিয়ে ফের রাজ্যে তৈরি করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ স্টাফ সিলেকশান কমিশন। গ্রুপ ডি পদে নিয়োগ এই সংস্থার হাতেও থাকার কথা। কিন্তু স্টাফ সিলেকশান কমিশনে এখনও কোনও চেয়ারম্যান নেই। অথচ এদিন নবান্ন থেকে মমতা ব্যানার্জি ফের গ্রুপ ডি পদে নিয়োগের গাজর ঝুলিয়ে রেখেছেন।
সম্প্রতি নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী পুলিশের কনস্টেবল পদে দ্রুত নিয়োগ কেন হচ্ছে না, তা নিয়ে আধিকারিকদের কাছে প্রশ্ন তুলেছিলেন। আসলে পুলিশ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের অধীনে নিয়োগ প্রক্রিয়াই শেষ করতে পারা যায়নি। গত ১১ মে নবান্নের বৈঠক থেকে মমতা ব্যানার্জির পরামর্শ ছিল, পুলিশের ছয় মাসের ট্রেনিং দিতে গিয়ে শূন্যপদ পূরণ করা যাচ্ছে না। তাই রাজ্য পুলিশের সব নিয়োগ তিন মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ করে পুলিশকে থানায় পাঠিয়ে দিতে হবে। ২১ দিন সেই পুলিশ ‘ফিল্ড ডিউটি’ করবে।
আর বাকি সাতদিন প্রশিক্ষণ নেবে। আগের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ না করে এদিন আবার মমতা ব্যানার্জি পুলিশের বিভিন্ন পদে ২০ হাজার নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছেন।
বিধানসভায় শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু রাজ্যের শিক্ষকপদে বিপুল শূন্যপদের তথ্য দিয়েছিলেন। এখন রাজ্য সরকার জানাচ্ছে, প্রাথমিকে ১১ হাজার ও উচ্চ প্রাথমিকে ১৪ হাজার শূন্যপদ পড়ে আছে। দ্রুত এই নিয়োগ করা হবে বলে এদিন নবান্নে জানিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি। একইভাবে স্বাস্থ্য দপ্তরে ২ হাজার চিকিৎসক, ৭ হাজার নার্স নিয়োগের সঙ্গে ৭ হাজার আশাকর্মী ও ২ হাজার কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কার নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছেন মমতা ব্যানার্জি। আইসিডিস কর্মী পদে ৯ হাজার ৪৯৩ জন ও অঙ্গনওয়াড়ি হেল্পার পদে আরও ১৩ হাজার ৯২৬ জনকে নিয়োগ করা হবে জানানো হয়েছে।
Comments :0