SUPER HERO MONOPOLY

‘সুপার হিরো’ শব্দেও কপিরাইট দুই মিডিয়া বহুজাতিকের

আন্তর্জাতিক

MARVEL DC COMICS SUPERHEROMONOPOLY

‘সুপার হিরো’! সিনেমার মহানায়ক নয়, কমিকসের জগতে অতিমানব। ভিড়ের মধ্যে থেকে উঠে আসা এমন কোনও মুখ যিনি অসাধ্য সাধন করতে পারেন। এই অসাধ্য সাধনে কখনও তাঁর সহায়ক শিরায় উপশিরায় বহমান ভিন গ্রহের রক্তের তেজ, কখনও বা রসায়নিক বিক্রিয়া, আবার কখনও স্রেফ প্রযুক্তি এবং বুদ্ধির জোরে তিনি প্রতিপক্ষকে মাৎ দিতে সক্ষম। একইসঙ্গে একার হাতে দুনিয়াকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতেও সমান ভাবে পটু। 
সুপার হিরো শব্দটি শুনলেই আমাদের মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে কয়েকটি বাছাই মুখ। স্মার্টফোন বিস্ফোরণের ফলে হাতে হাতে হাজির ডিজনি হটস্টার কিংবা অ্যামাজন প্রাইমের মতো ‘ওটিটি’ প্ল্যাটফর্ম। উঁকি মারলেই দেখা মিলবে এই পরিচিত মুখগুলির। তাঁদের নাম কখনও স্পাইডারম্যান, কিংবা থর, আবার কখনও আয়রন ম্যান কিংবা ব্যাটম্যান। 


এই চরিত্রগুলির কপিরাইট, বা ব্যবহারের একচেটিয়া সত্ত্ব রয়েছে কেবলমাত্র দুটি বহুজাতিক মিডিয়া সংস্থার হাতে। দু’টিই আমাদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত। একটির নাম ডিসি এবং অন্যটি নাম মার্ভেল। সুপার হিরো শব্দটিকেই আষ্টেপৃষ্ঠে কপিরাইটের ফাঁসে বেঁধে ফেলেছে এই দুই সংস্থা। 


আরও সহজ করে বললে, স্পাইডারম্যান, সুপারম্যান কিংবা ব্যাটম্যানের পাশাপাশি ‘সুপারহিরো’ শব্দটি বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহারের অধিকার রয়েছে একমাত্র মার্ভেল এবং ডিসি’র। 

অন্য কমিকস নির্মাতাদের কোণঠাসা করে বাজারের একচেটিয়া দখল নিতে ষাটের দশকের শেষভাগ থেকে নিজেদের মধ্যে একটি সূক্ষ্ম বোঝাপড়াণয় আসে ডিসি কমিক্‌স এবং মার্ভেল ক্যারেকটার্স আইএনসি। সেই বোঝাপড়া স্পষ্ট চেহারা পায় ১৯৭৯ সাল নাগাদ। নিজেদের সংস্থার সৃষ্ট চরিত্রদের পাশাপাশি এমন অতিমানবীয় কল্পচরিত্রের জগতে দখল নেয় এই দুই বড় সংস্থা। নব্য উদারবাদের শুরুর সময়ে একটি জনপ্রিয় শব্দের মালিকানা চলে আসে স্রেফ দুটি সংস্থার নাগালে। অন্যান্য জঁনরেও হাত বাড়াতে থাকে তাঁরা। এবং তারফলে বহু ক্ষেত্রেই আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় ক্ষুদ্র এবং মাঝারি প্রকাশকদের। 


মার্কিন মুলুক ছাড়িয়ে মার্ভেল এবং ডিসি’র ‘সুপারহিরো’ মনোপলি পাড়ি জমায় পশ্চিমী বিশ্বের অন্যান্য দেশেও, বিশেষত ইংল্যান্ডে। 

২০১৬ সালে ‘বিজিনেস জিরো টু সুপারহিরো’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন ইংরেজ লেখক গ্রাহাম জুল্‌স। সেই বইয়ের শিরোনামে ‘সুপারহিরো’ শব্দটি ব্যবহার করার ‘অপরাধে’ জুল্‌সের বিরুদ্ধে ‘কপিরাইট ইনফ্রিঞ্জমেন্টের’ মামলা করেন মার্ভেল এবং ডিসি’র আইনজীবীরা। পালটা লড়াই চালানোর চেষ্টা করে জুল্‌সের ক্ষুদ্র প্রকাশনা সংস্থা ‘স্টার্ট আপ পপ আপ লিমিটেড’। কিন্তু বৃটিশ আদালতে পরাজিত হয় তাঁরা। মামলা চলাকালীন আদালতে উঠে আসে মার্ভেল এবং ডিসি’র ‘সুপারহিরো’ মনোপলির প্রকৃত চিত্র। কপিরাইট অনুযায়ী, পেপার টেবিল ন্যাপকিন, ইনভিটেশন কার্ড, স্টেশনারি সামগ্রী, পেন, পেন্সিল, স্ট্যাম্প, স্ট্যাম্প অ্যালবাম, ফটোগ্রাফ অ্যালবাম, নোটবুক, স্ক্র্যাপবুক, কালারবুক সহ সমস্ত ধরণের বইয়ের ক্ষেত্রে ‘সুপারহিরো’ শব্দটি ব্যবহারের অধিকার রয়েছে একমাত্র ওই দুই মার্কিন সংস্থার। 


এই মামলার নিয়ে একের পর এক খবর করতে শুরু করে বৃটিশ সংবাদমাধ্যম। কতকটা ‘নেগেটিভ পাবলিসিটির’ ভয়েই হোক, কিংবা অন্য কোনও কারণেই হোক, মামলায় হারলেও জুল্‌সকে ‘সুপার হিরো’ শব্দটি ব্যবহার করার অনুমতি দেন মার্ভেল এবং ডিসি’র আইনজীবীরা। 

সেই মামলা নিয়ে যাবতীয় চর্চা স্বল্প সময়ের মধ্যেই থিতিয়ে যায়। কিন্তু সেই একচেটিয়া দখলদারি আজও বলবৎ রয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment