সাত মাসের ফুটফুটে শিশু আরিয়ান শেখের মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না তার পরিবার। মেমারি থানার তাঁতিবাক্সা গ্রাম থেকে এনে সকাল ৮টায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিকাল ৪টে নাগাদ মারা যায় আরিয়ান। হাসপাতাল থেকে বলা হয় শ্বাসনালীতে খাবার আটকে নাকি মৃত্যু হয়েছে! কিন্তু কোভিড টেস্টের পরে দেখা যায় রিপোর্ট পজিটিভ। আরিয়ান শেখের বাবা হাবিব শেখ অভিযোগ করেছেন, হালকা জ্বর, শ্বাসকষ্ট ছিল, কিন্তু হাসপাতালে শ্বাসনালী সংক্রমণের টেস্ট না হওয়ার জন্য শিশু কী রোগে মারা যাচ্ছে তা প্রকাশ্যে আসছে না। যেটুকু নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে তার রিপোর্ট সম্পূর্ণ গোপন করা হচ্ছে, এমনটাই অভিযোগ। এমনকি শিশুর বাবা-মা’কেও বলা হচ্ছে না তাঁদেরর শিশু প্রকৃত পক্ষে কী রোগে মারা যাচ্ছে।
এইভাবে শিশু মৃত্যু গোপন করতে গিয়ে ভয়ঙ্কর ক্ষতি করা হচ্ছে শিশুদের- এমনটাই অভিযোগ করেছেন এই হাসপাতালে ভর্তি থাকা শিশুদের বাবা মায়েরা। তাঁদের বক্তব্য, শুধু যে স্যাম্পেল পরীক্ষা হচ্ছে না তাই নয়, হাসপাতালে চিকিৎসার সব ওষুধই তাঁদের বাইরে থেকে কিনে দিতে হচ্ছে। গরিব মানুষ ওষুধ না পেয়ে ধার দেনা করে হাসপাতালে চিকিৎসা করাচ্ছেন। অনেকেই বলছেন, সাত দিন ধরে তাঁদের শিশুর কাছে ওয়ার্ডে থাকার সুবাদে প্রত্যক্ষ করছেন প্রতিদিন গড়ে ১০-১২ জন শিশু মারা যাচ্ছে এই হাসপাতালে। গত ১৫দিনে অন্তত দেড়শো শিশু মারা গেছে বলে অভিযোগ। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে যে সংখ্যক শিশু ভর্তি আছে তার ৫০ শতাংশ জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভর্তি।
প্রতিদিনই অসংখ্য শিশু শ্বাসনালীর সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। অভিযোগ, তথ্য গোপন করতে গিয়ে শিশুদের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা হচ্ছে না। হাসপাতালের অধ্যক্ষ নিজে সংবাদমাধ্যমের কাছে জানিয়েছেন, শ্বাসনালীতে সংক্রমিত শিশুরা অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত কিনা তার যেটুকু স্যাম্পেল টেস্ট করা হয়েছে তাতে দেখা গেছে বেশির ভাগই পজিটিভ। কিন্তু তাহলে কেন সব শিশুর পরীক্ষা হবে না? যদিও হাসপাতালের অধ্যক্ষকে পাশে নিয়ে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেছেন এই হাসপাতালে নাকি একজনও শিশু মারা যায়নি শ্বাসনালী সংক্রমণে। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেছেন উপস্থিত সকলেই। হবে নাই বা কেন, রাজ্যে এতগুলি শিশু মৃত্যুর পরেও মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, মৃতের সংখ্যা নাকি ১৯!
ভর্তি থাকা শিশুদের পরিবারের সঙ্গে কথা বললেই জানা যাচ্ছে, শ্বাসকষ্টে গত ১৫দিনে যত শিশু মারা গেছে তা এক কথায় মৃত্যুর মিছিল বলা চলে। কত শিশুর মৃত্যু হয়েছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সেই তথ্য দিতে চাইছে না ওয়ার্ডমাস্টার অফিস। অভিযোগ, এমন কি মৃত শিশুর মা’কে বলা হয়েছে চুপচাপ বাচ্ছা নিয়ে এখান থেকে চলে যাও বেশি কান্নাকাটি করবে না। এর আগে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন জ্বর, শ্বাসকষ্টে নাকি মৃত্যুর খবর তাঁদের কাছে নেই। এমন মিথ্যাচারে ক্ষুব্ধ ভুক্তভুগী পরিবারগুলি। তাঁদের বক্তব্য, প্রতিদিন গড়ে ১০-১২জন শিশু এখানে মারা যাচ্ছে। কিন্তু ওয়ার্ড মাস্টারের কাছে গত ১৫দিনে শিশু মৃত্যুর কোনও তথ্যই মিলছে না। হাসপাতালের অধ্যক্ষ শুনিয়েছেন যাদের ওজন কম, হার্টের ওষুখ আছে, বা অন্যান্য রোগ নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন তাদের ছাড়া বাকি শিশুদের কোনও নাকি ভয় নেই।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বেডের সংখ্যা ১৮৬ বলে দাবি করেছেন অধ্যক্ষ। কিন্তু সেই বেডে আরো অনেক বেশি রোগী ভর্তি আছে বলে জানা গেছে। একই বেডে অনেক সময়েই দু’জন করে শিশু ভর্তি হচ্ছে। এই শিশুরা অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত কিনা তার স্যাম্পেল টেস্ট করলে দেখা যাচ্ছে বেশির ভাগই পজিটিভ। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসার জন্য বেড বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু সেটা কি এত মৃত্যুর মিছিল দেখে? ওয়ার্ড মাস্টার দপ্তর থেকে বলা হচ্ছে প্রতিদিনের শিশু মৃত্যুর সব তথ্যই নাকি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাহলে মন্ত্রী কেন সব জেনেও শিশু মৃত্যুর ঘটনা চেপে গেলেন? তদন্ত হলেই প্রকাশ্যে আসবে কত মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে ঘুরলে চোখে পড়বে মায়েদের কান্নার রোলে হাসপাতাল চত্বর ভারাক্রান্ত হচ্ছে প্রতিদিন।
Child death Adino virus
বর্ধমান মেডিক্যালে টানা শিশুমৃত্যু, তথ্য গোপনে হচ্ছে না পরীক্ষাই
×
Comments :0