Migrant Labour

চাই পরিচয় পত্র, পঞ্চায়েতে প্রধান দাবি পরিযায়ীদের

রাজ্য

বেঙ্গালুরুতে কর্মরত বাংলার এক পরিযায়ী শ্রমিক

আইটি শহর বেঙ্গালুরু কাদের জন্য পরিষ্কার থাকে জানেন? 
- না।
- পরিযায়ী সাফাইকর্মীদের জন্য, যাঁদের বড় অংশই বাঙালি।
অবাক হওয়ার মতো হলেও এটিই সত্যি। এ রাজ্যের অনেকেই বেঙ্গালুরুতে গিয়ে সাফাইকর্মীর কাজ করছেন। অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেশি, অথচ মজুরি সামান্যই।
কেন বেঙ্গালুরুতে গিয়ে একজন সাফাইকর্মীর কাজ করছেন? ফোনের ওপার থেকে মেঠো ভাষায় স্পষ্ট উত্তর, ‘‘দাদা, গ্রামে কাজ নেই। ১০০ দিনের কাজের টাকা নেই। তাই বাধ্য হয়ে এখানে এসেছি।’’
রাজ্যের কতজন কাজ করছেন অন্য রাজ্যে, তা কি জানে রাজ্য সরকার? ২০২০’তে মহামারী আর লকডাউনের সময়েই স্পষ্ট হয়েছিল রাজ্যের হাতে তথ্য নেই। কিন্তু তারপর কি কোনও পদক্ষেপ নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার? বিভিন্ন রাজ্যে কর্মরত শ্রমিকরা জানাচ্ছেন আজও তালিকা করার কোনও চেষ্টাই নেই। 

বেশিরভাগই যাচ্ছেন গ্রাম থেকে। কিন্তু তাঁদের তালিকা করার কোনও উদ্যোগ নেই পঞ্চায়েতেরও, নেই কোনও পরিসংখ্যান। তাঁরা কোথায় আছেন, কী কাজ করেন, পরিবারে কতজন সদস্য রয়েছে জানা নেই পঞ্চায়েতের। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে গ্রাম থেকে বাইরের রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকরা চাইছেন নিজেদের একটা পরিচয় পত্র। যা রাজ্যের সরকার দেবে পঞ্চায়েতের সহযোগিতায়।
আলাউদ্দিন খানসামা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটের বাড়ি তাঁর। বিজয়ওয়াড়াতে বস্ত্র শিল্পের কাজ করেন। কোনও নথি বা পরিচয় পত্র তাঁর নেই। শুধু তিনি একা নন, তাঁর গ্রাম থেকে কারও নথি নেই। গণশক্তি ডিজিটালকে আলাউদ্দিন বলেন, ‘‘আমরা যে পরিযায়ী শ্রমিক তার কোনও নথি বা পরিচয় পত্র আমাদের নেই। আজ যদি হঠাৎ আমাদের কিছু হয় তার জন্য সরকার কোনও ভাবে কোনও অংশে আমাদের পাশে থাকে না।’’ 


আলাউদ্দিন বলছেন, ‘‘একজন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হলে কোম্পানির পক্ষ থেকে বাড়ির লোকদের বলা হয় এসে দেহ নিয়ে যেতে। কিন্তু কীভাবে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা খরচ করে একটি গরিব পরিবার পরিজনের দেহ নিয়ে যাবে? পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনও লাভ হয় না। পরিযায়ী শ্রমিকদের কোনও নথি সরকারের কাছে নেই। এই কাজ করা উচিত পঞ্চায়েত থেকে।’’ তিনি জানান, ‘‘আমরা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে টাকা জোগার করে দেহ বাড়িতে পাঠানোর একটা ব্যবস্থা করি।’’

শুধু এই একটি কারণে পরিচয় পত্র চাইছেন না আলাউদ্দিনরা। ভিন রাজ্যে বিপদে পড়লে রাজ্য সরকার যাতে তাঁদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তার জন্যও নিজস্ব পরিচয় পত্র চাইছেন তাঁরা। ব্যেঙ্গালুরু সহ কর্নাটকের বিভিন্ন জেলায় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকরা বস্তি তৈরি করে থাকেন। তার জন্য তাদের আবার ভাড়াও দিতে হয় জমি মালিককে। বস্তিতে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকরা কেউ বোতল কুড়ান তো কেউ খাবার ডেলিভারি করেন। আবার কেউ লোকের বাড়িতে বাথরুম, রান্নাঘর পরিষ্কার করেন। কিন্তু তাঁদের বস্তি থেকে তুলে দিতে এলে অসহায় হয়ে পড়েন। তখন পাশে দাঁড়ায় না রাজ্যের সরকার। 


গত সেপ্টেম্বর মাসেই বেঙ্গালুরুতে আসা নদীয়ার পরিযায়ী শ্রমিকদের বস্তি তুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। সেই সময় সিআইটিইউ অনুমোদিত পরিযায়ী শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে নদীয়ার জেলা শাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। চিঠিও দেওয়া হয় যাতে রাজ্য সরকার বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে। কিন্তু কোথায় হস্তক্ষেপ! কর্নাটকেপরিযায়ী শ্রমিক অধিকারের সংগঠক এবং সিআইটিইউ নেতা ধীমান সাউ বলছেন, ‘‘গোটা বিষয়টি জানানোর পরও হাত গুটিয়ে বসে ছিল রাজ্য সরকার। অবশেষে সিআইটিইউ’র প্রতিরোধে আটকায় বস্তি উচ্ছেদ।’’ 
শ্রী উল্কা এলএলপি সংস্থায় পাঁচজন পরিযায়ী শ্রমিক মারা যান দুর্ঘটনায়। কর্তৃপক্ষ  ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করে। তখনও পাশে দাঁড়ায়নি বাংলার তৃণমূল সরকার। এক্ষেত্রেও সিআইটিইউ লড়াই করে পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারদের জন্য আদায় করে নিয়েছে ১৫ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ।
পঞ্চায়েতের কাছে পরিযায়ী শ্রমিকদের বড় দাবি পরিচয় পত্রের। কবে বিডিও অফিসে নথিভুক্ত হবে তাঁদের নাম।

Comments :0

Login to leave a comment