Post editorial

নাগরিক সমাজ, জনসমাজ এবং রাজনীতির নতুন সন্ধিক্ষণ

রাজ্য উত্তর সম্পাদকীয়​

সাত্যকি রায়

সিভিল সোসাইটি বা নাগরিক সমাজ এই ধারণাটি প্রসঙ্গে হেগেল বলেছিলেন এটি হলো প্রয়োজনীয়তা এবং যুক্তিবোধের ব্যাপক পরিসর। পশ্চিমী এই ধারণাটি উদ্ভব থেকেই নানা ধরনের ব্যাখ্যা, অস্বচ্ছতা ও বিতর্কের মধ্যে দিয়ে এগিয়েছে। কিন্তু সাধারণভাবে বলতে গেলে নাগরিক সমাজ, সমাজের সেই অংশকে বোঝায় যারা সরকারের অংশীদার নয়, আবার কোনও বিশেষ সম্প্রদায়েরও সঙ্গেও সরাসরি সম্পর্কিত নয়। একই সাথে কর্পোরেট পুঁজিরও বিপরীতে তার অবস্থান। একটি স্বাধীন, মুক্ত, যৌক্তিক ও নৈতিকতার আধারে গড়ে ওঠা ব্যক্তি মানুষদের বিতর্ক, মতামতের আদান-প্রদান ও সংহতির মঞ্চ। এই পরিসরের কেন্দ্রীয় আকর ব্যক্তি মানুষ, যারা স্বার্থ সম্পর্কে সচেতন এবং সেই স্বার্থ সুরক্ষিত করতেই একটি সামাজিক চুক্তিতে আবদ্ধ। এই পরিসরের বৈশিষ্ট্য হলো বিতর্ক ও আলোচনায় অংশগ্রহণকারী নাগরিক সমাজের প্রত্যেককে সমান বলে মনে করা হয়। সিভিল সোসাইটির এই পশ্চিমী লিবেরাল ধারণাটির প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, ব্যক্তি মানুষের নিরাপত্তা, তার বিশ্বাসের নিরাপত্তা, সর্বোপরি তার সম্পত্তির নিরাপত্তাকে সুরক্ষিত রাখা। পশ্চিমী চিন্তায় একে অনেক ক্ষেত্রেই সমাজের এক রাজনীতি নিরপেক্ষ মৌলিক আধার বা ভিত্তি হিসাবে কল্পনা করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ মোটের উপরে নাগরিক সমাজ বলতে সামাজিক দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটি রাষ্ট্র ও রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন সামাজিক সত্তাকে বোঝায়, যে কতগুলি মৌলিক যুক্তিবোধ ও মূল্যবোধের আধারে গড়ে ওঠা স্বার্থ সচেতন ব্যক্তি মানুষের আদান-প্রদানের ক্ষেত্র।
রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন নাগরিক সমাজের ধারণাটি জন্ম নিয়েছিল একটি ঐতিহাসিক সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে। সামন্ততন্ত্রে মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক সরাসরিভাবে রাজনৈতিক ছিল। মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক যে ক্ষমতার কাঠামোটির মধ্যে আবর্তিত হতো তা প্রত্যক্ষ এবং প্রকটভাবে দৃশ্যমান ছিল। জাত-পাত, ধর্ম বর্ণ, আচার-আচরণ, প্রথা এই সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রক্রিয়াগুলির মধ্যে দিয়ে এই ক্ষমতার কাঠামোটি মূর্ত হয়ে উঠত। এই ব্যবস্থায় রাজনীতি মানে ছিল রাজার নীতি, বাকি প্রজারা এই রাজনীতির অভিঘাতের শরিক মাত্র। আধুনিক ধনতন্ত্রে রাজনৈতিক ক্ষমতার এই সাংগঠনিক কাঠামোটাই বদলে গেল। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন সম্পর্কিত বিষয় রাজনীতির বিচার্য বিষয় হয়ে উঠল। কিন্ত রাজনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে গেলেও আধুনিক গণতন্ত্রে একটি নতুন শ্রমবিভাজন তৈরি হলো। রাষ্ট্র, সরকার, রাজনৈতিক দল এসব করার জন্য একদল মানুষ আর অন্যদিকে বেশিরভাগ মানুষ যারা নিজেদের জীবন জীবিকার তাগিদে পরস্পরের সঙ্গে দৈনন্দিন সম্পর্কে যুক্ত তারা আপাতভাবে রাজনীতি থেকে বিযুক্ত হয়ে গেল। অর্থাৎ পুঁজিবাদে মানুষের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ পরোক্ষ ও প্রচ্ছন্ন রূপ ধারণ করল। নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক সমাজের এই বিভাজন একটি একান্তই পুঁজিবাদী বৈশিষ্ট্য যা সাধারণ মানুষকে রাজনৈতিক পরিসর থেকে সরিয়ে রাখার একটি পরিকাঠামো তৈরি করল। বিমূর্ত  নৈতিকতার আধারে গড়ে ওঠা পশ্চিমী নাগরিক সমাজের ধারণাটির সমালোচনা করেছিলেন মার্কস এই কারণে যে, তা সমাজ ও সময় নিরপেক্ষ যুক্তিবোধ ও নৈতিকতার প্রতিজ্ঞা নিয়ে হাজির হয়। এই আধারটি যে সত্যটিকে আড়াল করে তা হলো এই নৈতিকতা ও যুক্তিবোধ নির্দিষ্ট সামাজিক সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। অর্থাৎ নাগরিক সমাজ আসলে সমাজ সংগঠনের মৌলিক আকর নয় বরং তা আসলে মানুষের জীবন জীবিকার দৈনন্দিন সংঘাতের কাঠামোর উপরেই গড়ে ওঠে।
অনেকের মতে পশ্চিমের এই নাগরিক সমাজের ধারণাটি আমাদের মতো দেশে আদৌ প্রযোজ্য নয়। তার প্রধান কারণ হলো আমাদের মতো দেশে অনুন্নত আর্থিক ও গণতান্ত্রিক কাঠামোয় সরকারের উপর কোনও না কোনওভাবে নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যাই সর্ব ব্যাপক। সরকারি দাক্ষিণ্য, নানা প্রকার সুবিধা ইত্যাদির থেকে পুরোপুরি মুক্ত এরকম একটি নাগরিক সমাজ কল্পনা করা আমাদের মতো দেশে কঠিন। অর্থাৎ সরকারি প্রভাবের সম্পূর্ণ বাইরের একটি সত্তার অস্তিত্ব আমাদের মতো দেশে ভাবা বাস্তবিক নয়। কিন্তু সাম্প্রতিককালে কলকাতায় ন্যায় বিচারের আন্দোলন বোধ হয় এই ধারণাকে বদলে দিল। সমাজে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে নৈতিক অবস্থান নিয়ে আন্দোলনে শামিল হয়েছে যে মানুষ তারা সবাই সরকারি প্রভাব বা দাক্ষিণ্য বা নির্ভরশীলতা যাই বলেন না কেন এসব কিছু থেকে মুক্ত তা একেবারেই নয়। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ এই লড়াইয়ে শামিল। সমাজে স্বাধীনভাবে প্রতিষ্ঠিত নামী-দামি মানুষ এবং অদৃশ্য গড় আপামর জনতা সমতার অবস্থান থেকেই এই ন্যায়ের লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করে চলেছে। 
এ কথা ঠিক যে, আধুনিক ধনতন্ত্রে ক্ষমতা কার্যকরী হয় অনেক নিবিড়ভাবে। মানুষের চাওয়া পাওয়া দুঃখ ও প্রয়োজনীয়তার হিসাব নিকাশ উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে অনেক নির্দিষ্ট করে নির্ধারণ করা সম্ভব হয়। তথ্যের বৃহৎ সম্ভার ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের মানুষ বা জনগোষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন ধরনের দাওয়াই তৈরি করে ক্ষমতা কার্যকরী করা হয়। আবার এই বিস্তৃত ক্ষমতার জালের মধ্যেই সাধারণ মানুষ সরকার ও রাজনীতির ক্ষেত্রে নিজেদের প্রাপ্য বুঝে নেওয়ার জন্য দরকষাকষি করে থাকে। কিন্তু মানুষ এই দৈনন্দিন চাওয়া পাওয়ার নির্দিষ্ট হিসাব নিকাশের মধ্যেই সব সময় নিমজ্জিত থাকবে, কোন বড় পরিবর্তনের কথা ভাবতে পারবে না এবং সেটাই আধুনিক ধনতন্ত্রের স্থায়িত্বকে সুনিশ্চিত করবে— এইরকম ভাবনাটি গভীর প্রশ্নের সম্মুখীন। প্রতিদিনের জীবন সংগ্রামের মধ্যেও এবং বেশ কিছু ক্ষেত্রে সরকারের উপর নির্ভরশীল হলেও এরকম মুহূর্ত তৈরি হতে পারে যখন দৈনন্দিন রাজনীতির হারা জেতার সংকীর্ণ দলীয় গণ্ডির বাইরে গিয়ে সাধারণ মানুষ একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক বোধ থেকে অভাবনীয় সক্রিয়তা দেখাতে পারে। গণতন্ত্রের প্রয়োগ সেক্ষেত্রে অনেক বেশি প্রত্যক্ষ হয়ে ওঠে। অর্থাৎ সাধারণ মানুষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শুধুমাত্র ভোট দিয়ে কাউকে প্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচন করাতেই সীমাবদ্ধ থাকতে চাইছেন না। ক্ষমতাবানদের জবাবদিহির ক্ষেত্রকে প্রসারিত করতে চাইছেন। এযাবৎকাল পরোক্ষভাবে রাজনীতির অংশীদার সাধারণ মানুষ যেন জলোচ্ছ্বাসের মতো সরাসরি রাজনীতির আঙিনায় প্রবেশ করছেন। প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র সম্পর্কে পৃথিবী জুড়ে যে হতাশা তৈরি হচ্ছে তাই আসলে মানুষকে প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলি অবলম্বন করতে বাধ্য করছে। মানুষের রাস্তায় সমবেত হওয়া, সমবেত জনগণের মধ্যে দিয়েই আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা, বিতর্ক করা, আলোচনা করা এমনকি প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার ফাঁকফোকরগুলিকে চিহ্নিত করা এবং অনেক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত নিয়মগুলি সম্পর্কেও প্রশ্ন উত্থাপন করা এই ৱ্যাডিকাল গণতান্ত্রিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়ে চলেছে দেশে বিদেশে। এই গণসমাবেশ ও গণপরিষদ আসলে প্রচলিত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলির উপরেও চাপ সৃষ্টি করতে সক্ষম হচ্ছে। জনগণ যেন নতুন করে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলির পূর্বশর্ত ও আধারগুলিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার অঙ্গীকার গ্রহণ করছে।
মনে রাখা দরকার যে ভারতে ‘সমাজ’ এই কথাটির একটি স্বতন্ত্র অস্তিত্ব আধুনিক ধনতান্ত্রিক সমাজের আগেও কার্যকরী ছিল। অর্থাৎ পশ্চিমে নাগরিক সমাজের ধারণার জনপ্রিয়তা তৈরি হওয়ার বহু আগে ভারতবর্ষে সমাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ছিল। এক অর্থে বলতে গেলে শাসন চালাতে গেলে এই সমাজের স্বীকৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত ছিল। ভারত আধুনিক হলেও বিভিন্ন ধরনের সম্প্রদায় ভিত্তিক সমাজের অস্তিত্ব আজও বর্তমান। এ কথা ঠিক যে অনেক ক্ষেত্রেই এই সমাজ প্রতিক্রিয়ার অনুশাসনকে শক্তিশালী করেছে। কিন্তু তার মানে এই নয় সমাজের এই স্বতন্ত্র অস্তিত্ব তা সর্বদাই গণতান্ত্রিক আধুনিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। খেয়াল করলে দেখা যাবে ভারতীয় সমাজের ধারণাটি কিন্তু পশ্চিমের সিভিল সোসাইটির কাঠামোর থেকে আলাদা। সিভিল সোসাইটির মৌলিক উপাদান হলো ব্যক্তি মানুষ, তার স্বার্থ সুরক্ষিত করাই নাগরিক সমাজের প্রধান প্রতিজ্ঞা। অর্থাৎ স্বাধীন ব্যক্তি মানুষের অস্তিত্ব এখানে প্রাথমিক। অন্যদিকে ভারতে সমাজের ধারণাটির প্রাথমিক উপাদান হলো যৌথ অস্তিত্ব যা অতীতে গ্রাম, সম্প্রদায় এমনকি জাতের ভিত্তিতেও গড়ে উঠেছিল। কিন্তু আধুনিক অংশগ্রহণকারী গণতন্ত্রের আধারেও যুক্তি ও নৈতিকতার ভিত্তিতে যৌথ মূল্যবোধ গড়ে তোলা সম্ভব। এই সমবেত লক্ষ্যে জনসমাজ হলো প্রাথমিক। তাঁদের প্রতিদিনের নানাবিধ অধিকার প্রসারিত করার লড়াই যে গণমঞ্চে প্রতিদিন সংঘটিত হয়ে চলেছে তা প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের কাঠামোটিকেও আরও গভীরভাবে প্রভাবিত করবে। আর জি করের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গে বাংলার মানুষের অভিনব, সক্রিয়, সৃজনশীল বিদ্রোহ এই আধুনিক ‘সমাজ’এর অবয়বকেই সম্ভবত নির্মাণের প্রক্রিয়ায় এনেছে। 
সাধারণ মেহনতি মানুষ যখন নিজের ভবিষ্যৎ নিজে সংগঠিত করার কাজে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন, এবং সে প্রক্রিয়ায় যখন সে কোনও রাজনৈতিক দলের উপরে নির্ভরশীল হওয়ার প্রয়োজনীয়তাকেই অতিক্রম করতে পারে তখন যেকোনও বামপন্থী শক্তির কাছে তা অত্যন্ত ইতিবাচক একটি প্রবণতা। রাজনীতির পরিসর এবং দৈনন্দিন জীবন যাপনের পরিসর এই দুইয়ের মধ্যে যে প্রাচীর পুঁজিবাদী সমাজ তৈরি করেছে সেই বিভাজনকে মুছে দেওয়ার উন্নত চেতনার উন্মেষ আসলে বামপন্থীদের কাছে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের পথে অগ্রসর হওয়ার লক্ষণ মাত্র। কিন্তু সমবেত জনতার এই যৌথ চেতনা কখনোই শেষ বিচারে বিকশিত হতে পারবে না যদি তা শুধুমাত্র বিমূর্ত নৈতিকতা ও ন্যায়ের ধারণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। লিবেরাল চিন্তার নাগরিক সমাজের সীমাবদ্ধতা এইখানেই। সমবেত চেতনার যৌথ সত্তাকে স্থাপন করতে হবে চলমান সমাজ সম্পর্কের আধারে। আজকের দিনের জাস্টিসের লড়াই আসলে পশ্চিমবাংলার বর্তমান আর্থ-সামাজিক কাঠামোয় যে ক্ষমতার পুনরুৎপাদনের দুষ্ট চক্রের উপরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে, তা গভীরভাবে একটি সামাজিক সম্পর্কে প্রথিত। হুমকি ও দাক্ষিণ্য এই দুটি হলো বর্তমান বাংলায় ক্ষমতার পুনরুৎপাদনের দুষ্টচক্র। যা মানুষের ন্যায্যভাবেই প্রাপ্য তাকে বিশেষ সুবিধায় রূপান্তরিত করা হচ্ছে, যার জন্য দাবি করা হয় অর্থ অথবা নিরঙ্কুশ আনুগত্য। আর অন্যদিকে মানুষ তার প্রাপ্য অধিকারকে দেখতে শেখে দাক্ষিণ্য হিসাবে। এই ব্যবস্থাটা কার্যকরী হয় সভ্য সমাজে মানুষের আদান-প্রদানের চালু প্রতিষ্ঠান বা নিয়মগুলিকে ধ্বংস করে। স্কুলে কলেজে বিশ্ববিদ্যালয় চাকরি বা দৈনন্দিন জীবনের সর্বক্ষেত্রে এক সামন্ততান্ত্রিক আনুগত্য হুমকি-সংস্কৃতির মাধ্যমে সুনিশ্চিত করা হয় এবং তার মধ্যে দিয়ে সংগঠিত হয় আর্থিক লুট। শুধু আর জি কর নয় সমাজের সর্বক্ষেত্রে মানুষের এই হুমকির সমঅভিজ্ঞতা মানুষকে প্রতিদিন এক জায়গায় জড়ো করছে। যদি কেউ এর মধ্যে দিয়ে ইতিবাচক ভবিষ্যৎ দেখতে চান তাহলে এই যৌথ সত্তা ও প্রতিবাদের পরিসর প্রসারিত হতে হবে দৈনন্দিন জীবন জীবিকার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েই। গ্রামে, গ্রামে পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায় মানুষেরই এই যৌথ সত্তার উন্মেষ পশ্চিমবাংলার রাজনীতির জগতে নতুন সন্ধিক্ষণ তৈরি করবে। রাজনৈতিক দল ব্যতিরেকেই পাড়ায় পাড়ায় গ্রামে মহল্লায় যদি সচেতন মানুষের সমবেত গণপরিষদ ন্যায় ও সমতার ধারণাগুলিকে জীবন যাপনের গভীরে প্রতিষ্ঠিত করার ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়, তবে রাজনীতির আঙ্গিনায় সরাসরি অংশগ্রহণ করবে সাধারণ মানুষ। একে শক্তিশালী করার কাজটাই আজকের সময়ের সবচেয়ে র্যা ডিক্যাল বামপন্থা। সাধারণ মানুষের আঞ্চলিক গণপরিষদ যদি এই অবস্থান নিতে পারে—যে, কে কোনও দলের জানি না কিন্তু এলাকায় মহিলাদের অধিকারের উপরে কোনও হস্তক্ষেপ হলে, জাত পাতের ভিত্তিতে কোনও বৈষম্য ঘটলে, কর্মক্ষেত্রে কোনও অন্যায় অবিচার হলে, গ্রামের প্রাইমারি অথবা মাধ্যমিক স্কুলে মাস্টারমশাইরা না পড়ালে, প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র অথবা হাসপাতালে চিকিৎসা না পেলে পাড়ার অথবা গ্রামের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে এরকম কোনও ঘটনা ঘটলে অথবা নির্বাচনে সবাইকে সমানভাবে অংশগ্রহণ করতে না দিলে এই সদা জাগ্রত গণপরিষদ বার বার রাত এবং ভোর দখল করবে। গণপরিষদ নিজ ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে রাস্তায় নামবে, প্রতিবাদ জানাবে, প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। সেই দিন মাঠে ময়দানে সক্রিয় এই গণপরিষদ বা প্রকৃত জনগণই হবে রাজনীতির নিয়ন্ত্রক। রাজনৈতিক দলগুলোকে বরং মানুষের এই সক্রিয় আধুনিক যৌথ সত্তার প্রতি দায়বদ্ধ থাকতে বাধ্য করা যাবে। এটাই হবে আমাদের দেশের পুরানো ‘সমাজ’এর আধুনিক সংস্করণের উত্থান, যা পশ্চিমী লিবেরাল ধারণার উপরে প্রতিষ্ঠিত নাগরিক সমাজের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। সেদিন হয়তো নির্বাচনের আগে মিলিটারি নয়, জনসমাজের রুট মার্চ দেখা যাবে গ্রামে, পাড়ায়, মহল্লায়!

 

Comments :0

Login to leave a comment