২০১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গের কলেজগুলির কাছে ইউজিসি তরফ থেকে নির্দেশিকা এসেছিল যে সিবিসিএস ক্রেডিট সিস্টেম পদ্ধতিতে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় লেখাপড়া শুরু করতে হবে। সেই পদ্ধতি শুরু করতে হলে নূন্যতম প্রয়োজন প্রতিটি বিভাগে চার থেকে পাঁচজন স্থায়ী অধ্যাপক নিয়োগের। ইউজিসি’র এই নির্দেশিকা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষা দপ্তর আশ্বাস দিয়েছিল যে কলেজগুলিতে স্থায়ী অধ্যাপক নিয়োগ হবে। সেই নিয়োগের জন্য তারা একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল (No.1199-Edn (CS)/ 10 M62/ 2001, Date - 27/09/2018)।
পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ শিক্ষা দপ্তর বিজ্ঞপ্তি জারি করায় অনেকে কলেজ সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় বসেন। তারপর নিয়োগও হয়। আর সেখানেই বিপত্তি। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি হয়েছে বলে দাবি চাকরিপ্রার্থীদের।
স্বচ্ছ নিয়োগের দাবিতে পথেও নেমেছেন এই চাকরিপ্রার্থীরা। প্রতিবাদীরা কলেজ স্ট্রিটে নিজেদের সার্টিফিকেটের প্রতিলিপি পুড়িয়েছেন।
হিমাদ্রি মন্ডল। ২০১৮ সালে শেষ কলেজ সার্ভিস কমিশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চাকরি প্রার্থী। তিনি জানান, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে যেই সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজ গুলি রয়েছে সেগুলিতে তিরিশ হাজারের মতো স্থায়ী অধ্যাপকের পদ শূন্য পড়ে রয়েছে। এই পদগুলিতে নিয়োগ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কোন হেলদোল দেখা যাচ্ছে না।’’
রাজ্যে সরকারি সাহায্য প্রাপ্ত কলেজের সংখ্যা ৪৫২। চাকরি প্রার্থীদের দাবি এই সব কলেজ মিলিয়ে স্থায়ী অধ্যপক পদ খালি রয়েছে ৩০ হাজারের বেশি। তাঁরা আরও জানিয়েছেন যে বিভিন্ন কলেজের পক্ষ থেকে স্থায়ী অধ্যাপক নিয়োগের জন্য শিক্ষা দপ্তরের কাছে আবেদন করা হলেও কোন নিয়োগ হয়নি। তবে ২০১৮ সালে কলেজ সার্ভিস কমিশনের বিজ্ঞপ্তি যখন প্রকাশ করে সরকার, তখন কত শূন্য পদ রয়েছে তার উল্লেখ করা হয়নি।
উল্লেখ্য ২০১৮ সালে পরীক্ষা হলেও ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিস্ট্রি, মলিকিউলার বায়োলজি, ওমেন স্টাডিজ এর মতো বিভিন্ন বিষয়ের মেধা তালিকা আজ পর্যন্ত প্রকাশ করেনি কমিশন।
অভিযোগ, কলেজ সার্ভিসের ক্ষেত্রে কারচুপি করা হয়েছে ইন্টারভিউয়ের সময়। যোগ্য প্রার্থীদের দাবি তাই।
বিনয় পাল বা হিমাদ্রি মণ্ডলরা বলছেন, ২০১৮ কলেজ সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় ইন্টারভিউতে ৪০ শতাংশ নম্বর রেখে প্রকৃত যোগ্য ও মেধাবীদের ‘অজানা কারণে’ মেধা তালিকার শেষের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। যারা চাকরি পেয়েছে তাদের অধিকাংশের যোগ্যতায় কম, অনেক ক্ষেত্রেই কমিশন অবৈধ ভাবে সেট পাস করিয়ে তাদের ইন্টারভিউয়ে নম্বর বাড়িয়ে নিয়োগ দিয়েছে।
প্যানেলে নাম না থাকলেও চাকরি পেয়েছে একাধিক প্রার্থী, অথচ উচ্চতর যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থী ইন্টারভিউতে ভালো ফল করতে পারল না। হাইকোর্টে এই নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে ১৭০ টির বেশি মামলা চলছে।
প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর ফ্ল্যাটে টাকা ভর্তি উচ্চশিক্ষা দপ্তরের খাম মিলেছে। সিবিআই তদন্তে সুবীরেশ ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে যারা অর্থ ও প্রভাব খাটিয়ে কলেজের চাকরি পাইয়ে দিতেন।
পার্থ চ্যাটার্জির সঙ্গে মোনালিসা দাসের মেসেজে উঠে আসা চাকরি প্রার্থী শ্রীতম মজুমদারের নাম ছিল বাংলা বিষয়ের মেধা তালিকার প্রথমের দিকে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেপ্তারির পর মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন যে, দুর্নীতি বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না। জানা থাকলে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতেন। কিন্তু চাকরি প্রার্থীরা তো বার বার পথে নেমেছিলেন। প্রতিবাদ করেছিলেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে। তাহলে তখন কেন চুপ করে বসে থাকলেন মুখ্যমন্ত্রী।
ইতিমধ্যে সরকার প্রায় ১৫,০০০ আংশিক সময়ের অধ্যাপকদের (GL,PTT,CWTT) SACT বা State Aided College Teacher) নাম দিয়ে তাদের চাকরি ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত স্থায়ী করেছে। এর অধিকাংশ জনের ইউজিসি এবং সিএসসির নিয়ম অনুযায়ী কলেজে পড়ানোর ন্যূনতম যোগ্যতা নেট, সেট বা পিএচডি ডিগ্রি নেই।
বিনয় পাল বলেন, ‘‘পিএইচডি, এমফিল করা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিরা চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। সেই জায়গায় সুযোগ পেয়ে গিয়েছেন অযোগ্যরা।’’
Comments :0