প্রবীর দাস
‘তিন বছর আমরা লিজের টাকা পাই না। টাকা চাইতে গেলে মারধর করা হয়। মামলা দেওয়ার ভয় দেখায়। বলে বেশি ট্যাঁ-ফুঁ করবি তো মেরে নদীতে ভাসিয়ে দেব।‘
সংবাদমাধ্যমের সামনে বুধবার এমনই অভিযোগ করলেন শয়ে শয়ে গ্রামবাসী। অভিযোগের তির সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান এবং সহযোগী শিবপ্রসাদ হাজরা ও উত্তম সর্দারের বিরুদ্ধে।
সন্দেশখালি-২ ব্লকের দাড়িরজঙ্গল মৌজায় অভিযুক্ত তৃণমূলী নেতাদের জমি লুটের বিবরণ হাজির করছেন বাসিন্দারাই।
দাড়িরজঙ্গল মৌজার ৭ নম্বর পেত্নি ঘোলায় ২০০-২৫০ বিঘা জমি জোর খাটিয়ে দখল করেছে শিবপ্রসাদ হাজরা ও উত্তম সর্দার। ৮ নম্বর কর্ণখালিতে ৮০-৯০ বিঘা চাষযোগ্য জমি শেখ শাহজাহানের দখলে।
কী হয় দখল করা জমিতে?
নদীর বাঁধ কেটে, সরকারি স্লুইস গেট ব্যবহার করে ওই সমস্ত চাষযোগ্য জমিতে নোনা জল ঢুকিয়ে মাছ চাষ চলছে তিন বছর ধরে। আগে বছরে দু’বার এই সমস্ত জমিতে খালের মিষ্টি জল ব্যবহার করে আমন ও বোরো ধানের চাষ হতো। খালগুলিতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন মৎসজীবীরাও। বাড়ি বাড়ি পানীয় জল সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে দাড়িরজঙ্গল এলাকায় থাকা জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর বা ‘পিএইচই’-র পাম্প হাউস থেকে সরাসরি পানীয় জল পাইপ দিয়ে টেনে মিষ্টি জলের মাছচাষ হচ্ছে সন্দেশখালি থানার নাকের ডগায় এই এলাকায়।
পিএইচই’র জল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় দাড়িরজঙ্গল আদিবাসী পাড়া সহ অন্যান্য অংশে। ফলে বাধ্য হয়ে ২-৩ কিলোমিটার দূর থেকে একটি মাত্র ডিপ টিউবওয়েল থেকে জল আনতে হয় দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে।
আরও অভিযোগ, সন্দেশখালি-২ বিডিও অফিস যাওয়ার পথে ত্রিমোহনী মোড় থেকে নয়ানজুলি ভরাট করে সরকারি জমিতে দলের বিলাসবহুল দপ্তর করেছে তৃণমূল। বনসৃজনের গাছ কেটে ফাঁকা করে দেওয়া হচ্ছে সর্বত্র। দাউদপুর, সুখদোয়ানিতে সেই বনদপ্তরের জমি কোটি কোটি টাকায় বিক্রি হয়ে গেছে।
বনদপ্তর সব দেখেও চুপ। বিডিও সব দেখে, জেনেও চুপ। আর সবই হয়ে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেসের সন্দেশখাল -২ ব্লক সভাপতি জেলা পরিষদ সদস্য শিবপ্রসাদ হাজরা ও জেলা পরিষদের আরেক সদস্য তৃণমূলের উত্তম সর্দারের হাত ধরে। মাথায় শেখ শাহজাহান।
দাড়িরজঙ্গল সহ সন্দেশখালি বিধানসভায় পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার আদিবাসী ও অন্যান্য অংশকে পাট্টা, বর্গার অধিকার দিয়েছিল। সেখানেই চলছে নির্মম জমিদখল। দাড়িরজঙ্গল এলাকায় উত্তম সর্দার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে দিয়েছে খালে মাছ ধরা যাবে না। বহুবার থানায় জানিয়েও কোন লাভ হয় নি।
পুলিশ, প্রশাসন ও এক শ্রেণির সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের মাসোহারার বিনিময়ে সমস্ত অন্যায় অত্যাচারের খবর চাপা পড়ে যেত। একমাত্র ‘গণশক্তি’-তে ২০১৩ সাল থেকে শেখ শাহজাহান, শিবু হাজরা, উত্তম সর্দার,খু লনার সত্যজ্যোতি সান্যাল সহ অন্যান্যদের লুটতরাজ সহ সমস্ত অন্যায়ের খবর প্রকাশিত হয়েছে ধারাবাহিকভাবে।
শাহজাহান বেপাত্তা হয়ে যাওয়ার পর কার্যত শিবু হাজরা, উত্তম সর্দাররা বেপাত্তা। বঞ্চিত শোষিত মানুষ মুখ খুলতে শুরু করেছেন। রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন।
গত রবিবার হাড়োয়ায় মাছ ব্যবসায়ীদের শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সরব হতে দেখা গেছে। দু’দিন না কাটতেই, বুধবার, সন্দেশখালিতে আরও দুই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ তুলে দাড়িরজঙ্গল মৌজার শয়ে শয়ে মানুষ থানা এবং বিডিও অফিসে বিক্ষোভ দেখান। দাবি, ‘আমাদের জমি আমাদের ফিরিয়ে দাও’।
Comments :0