তৃণমূল আর বিজেপি, এক দল ছেড়ে অন্য দলে যোগ দিলে কেউ ব্যবস্থা নেয় না। যেমন বিধানসভায়, তেমনই সংসদে। দুই দলই হাত ধরাধরি করে চলে।
দুই দলই ধান্দার ধনতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষক। আদানিকাণ্ডতেও তা ধরা পড়ছে। দুই শক্তির বিরুদ্ধেই লড়াই করছে সিপিআই(এম) এবং বামপন্থীরা। সেই লড়াই তীব্রতা আরও বাড়বে।
দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকের পর বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে এই মর্মে পার্টির অবস্থান জানিয়েছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। রাজনীতির দুর্নীতিকরণের অন্যতম সূচক যে নির্বিচারে দল বদল, স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন তিনি। সেলিম বলেন, আদানিদের নিয়ে চলছে দু’দলই।
সরকারি দপ্তরের জমি, জঙ্গলের জমি, পাহাড় থেকে সাগরে তুলে দেওয়া হচ্ছে বেসরকারি হাতে। জনতার সম্পদ লুঠ রুখতে নতুন পর্বে আন্দোলনে নামাবে সিপিআই(এম)। সেলিম বলেন, পরিবেশ, নদী, জল, জঙ্গল লুটে একই ভূমিকা নিচ্ছে কেন্দ্রের বিজেপি এবং রাজ্যের তৃণমূল সরকার।
সেলিম বলেন, ‘‘তৃণমূল এবং বিজেপি একে অপরের হাতে হাত ধরে চলছে। তাই লোকসভায় বা বিধানসভায় দল বদল করা সাংসদ বিধায়কদের বিরুদ্ধে হুইপ জারি করে না।’’ তিনি বলেন, ‘সবাই দেখছে দল ছেড়ে অন্য দলে যোগ দিচ্ছে, বিধানসভার অধ্যক্ষ দেখছেন না। একইভাবে লোকসভায় অধ্যক্ষ দেখেন না। এই জন্য হুইপ জারি করে না। তা’হলে ওরা ধরা পড়ে যাবে।’
সেলিম বলেন, ‘‘ রাজ্যপালের ভাষণে প্রতিবাদের নামে রাজ্য বিধানসভায় নাটক হচ্ছে।’’ তৃণমূল এবং বিজেপি’র বিরোধী একমাত্র বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকীকে জেলে বন্দি রাখার ঘটনা মনে করিয়ে দেন তিনি।
দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকে আলোচনার পর কর্মসূচি জানিয়েছেন সেলিম। ত্রিপুরার প্রতি সংহতি জানিয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজ্য জুড়ে ত্রিপুরা সংহতি দিবস পালন করা হবে রাজ্য জুড়ে। মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘ত্রিপুরায় বিজেপি গত পাঁচ বছর ধরে যেই অপশাসন চালিয়েছে, যেই অপকর্ম করেছে তা রাজ্যের মানুষের কাছে আমরা সেদিন তুলে ধরবো।’’ ১৪ ফেব্রুয়ারি আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী সহ বাকি বন্দিদের মুক্তির দাবিতে যেই মিছিল হবে। সেই মিছিলে বিজেপি তৃণমূল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
১৭ ফেব্রুয়ারি সারা ভারত খেত মজুর ইউনিয়নের সর্বভারতীয় সম্মেলন উপলক্ষে হাওড়ায় সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে। সেই সমাবেশের প্রধান বক্তা হিসাবে থাকবেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। সেলিম বলেন, ‘‘পুলিশের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত সমাবেশের জন্য কোন অনুমতি দেওয়া হয়নি। বাইরের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আসবেন তার জন্য কোন ব্যাবস্থা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও করা হয়নি। তবে প্রশাসন অনুমতি না দিলেও সমাবেশ হবে। যেই জায়গায় হওয়ার কথা সেখানেই হবে।’’
২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস পালন করা হয় সিপিআই(এম)’র পক্ষ থেকে। এবাও তা হবে বলে জানিয়েছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক। তার সঙ্গে সেদিন কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোর ১৭৫ তম বর্ষ উপলক্ষে ‘মাতৃভাষায় মার্কসবাদ চর্চা’ শীর্ষক আলোচনা সভা হবে। এর পাশাপাশি তৃণমূলের দুর্নীতি, গণ-পরিবহনের বেহাল দশা, চা বাগানের জমি বাঁচানোর দাবিতে, নদী বাঁচাতে আন্দোলনে নামবে সিপিআই(এম)।
[ad}
বিধানসভায় বুধবার রাজ্যপালের ভাষন চলাকালীন বিক্ষোভ দেখান বিজেপি বিধায়করা। সেই প্রসঙ্গে সেলিমকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘বিধানসভায় বিজেপি যা করেছে তা পুরোটাই নাটক। বিজেপি এবং তৃণমূল একে অপরের হাত ধরে চলছে। লোকসভায় বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূল সাংসদরা কোন কথা বলেন না। আদানি বিষয় নীরব তৃণমূল।’’
বিধায়ক এবং সাংসদদের দল বদলের প্রসঙ্গ টেনে দুই দলকে চাঁছাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেন সেলিম। তিনি বলেন, ‘‘লোকসভার এবং বিধানসভার অধ্যক্ষ দুজনেই দল বদলের বিষয়টি মেনে নিয়েছে। শুভেন্দুর ধক নেই দল বদল করা বিদায়কদের বিরুদ্ধে ঝুইপ জারি করার। অন্য দিকে তৃণমূলের ধক নেই লোকসভায় শুভেন্দুর ভাই এবং বাবার বিরুদ্ধে হুইপ জারি করার।’’
পূর্বের উদাহরণ টেনে এদিন সেলিম বলেন, ‘‘লোকসভায় সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় যখন লোকসভার অধ্যক্ষ ছিলেন তখন একজন বিএসপি সাংসদকে সমাজবাদী পার্টির মঞ্চে থাকার ছবি সামনে আসে। আইন অনুযায়ী সেই সাংসদের সদস্য পদ খারিজ করেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়।’’
Comments :0