‘‘পুলিশের সামনেই একের পর এক বাড়ি পুড়িয়েছে তৃণমূলের দুষ্কৃতী বাহিনী। দমকলের গাড়ি যখন আগুন নেভাতে আসে তখন রাস্তা আটকায় তৃণমূল।’’ জয়নগরে তৃণমূল নেতার মৃত্যু এবং তারপর দলুয়াখাঁকি গ্রামে একের পর এক সিপিআই(এম) কর্মী সমর্থকদের বাড়ি পোড়ানো প্রসঙ্গে একথা বললেন এক প্রত্যক্ষ দর্শী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যাক্তি জানিয়েছেন, সোমবার সকালে বাড়ি থেকে প্রায় ১০০ মিটার দুরে মসজিদের নমাজ পড়তে যাওয়ার সময় খুন হন বামনগাছি পঞ্চায়েতের সদস্য তথা তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি সইফুদ্দিন লস্কর। তারপরই চলেছে এই হামলা।
ওই ব্যাক্তি বলেন, ‘‘সকাল বেলা সইফুদ্দিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে নমাজ পড়তে যাচ্ছিলেন। সেই সময় ওকে মসজিদে ঢোকার মুখে বাইকে করে কয়েকজন ঘিরে ধরে। একজন গুলি চালায়। এটাই শুনেছি।’’ তাঁর কথায়, যারা এই কাজ করেছে তারা স্থানীয় কেউ নন। তিনি বলেন, ‘‘যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের একজনকে তো ওখানেই ধরে পিটিয়ে মারা হয়। যাকে ধরা হয়েছিল সে জয়নগরের লোক নয়। বাইরে থেকে এসেছিল।’’ কিছুটা থেমে বলেন, ‘‘আমি জানি না বুঝলেন, তবে শুনছি উস্থি থেকে লোক আনা হয়েছিল।’’
কিন্তু যেখানে এই ঘটনা ঘটেছে সেখান থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার দুরে দলুয়াখাঁকি গ্রামে কেন তাণ্ডব চালানো হলো তার কোন ব্যাখ্যা নেই। স্থানীয় এই ব্যক্তি বলেছেন,, ‘‘এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর হঠাৎ করে আমাদের গ্রামের ওপর হামলা চালায় দুষ্কৃতী বাহিনী। যারা হামলা করেছে তারা সবাই তৃণমূল করে। বাড়ির পর বাড়ির জ্বালিয়ে দিয়েছে। ঘরে ঢুকে লুঠ করেছে। জিনিস পত্র ভেঙে দিয়েছে। ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে।’’
এবার ফের গলার আওয়াজটা কম করে তিনি বলেন, ‘‘যাদের বাড়ি জ্বালিয়েছে তারা সবাই সিপিআই(এম) করে।’’
এখন তারা কোথায়?
‘‘জানি না। সবাই ভয়ে এলাকা ছাড়া।’’
পঞ্চায়েত ভোটের সময় কি সিপিআই(এম) তৃণমূল ঝামেলা হয়েছিল?
‘‘না না। ওই সব কিছু হয়নি। এখানে ২৪ টা আসনের মধ্যে ২৩ টা তৃণমূল জিতেছে। সিপিআই(এম) কিছু পায়নি। তবে সব কটায় সিপিআই(এম) প্রার্থী দিয়েছিল।’’
উল্লেখ্য বারুইপুর আদালতের মুহুরি সইফুদ্দিন ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে শাসক দলের ঘনিষ্ঠ হতে থাকেন। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, ২০১৮ সাল থেকে বাড়তে থাকে তাঁর প্রভাব প্রতিপত্তি। হয়ে ওঠেন জয়নগর থানার ডাকমাস্টার। অল্প সময়ের মধ্যে জয়নগর থানার থেকে ঢিল ছোঁড়া দুরত্বে রাস্তার ওপর নিজের একটি অফিস বানিয়ে ফেলেনে। সেখান থেকেই যাবতীয় কাজ চালাতেন তিনি। বাড়তে থাকে তার সম্পত্তিও।
পরিচয় গোপন রাখা প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘‘ওর তৃণমূলে আসার আগে সাধারণ জীবন যাত্রা ছিল। হঠাৎ করে তৃণমূলে আসার পর থেকে ঘর বাড়ি বানানো, টাকা পয়সা করতে শুরু করে সইফুদ্দিন।’’
জয়নগর মিউনিসিপালিটি যেখানে সইফুদ্দিনের অফিস সেখানকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘জয়নগরে এই পরিবেশ কখনও ছিল না। এর আগে বহড়ুতে বিধায়কের গাড়িতে তিনজনকে খুন করা হয়। একই কায়দায়। যাকে খুন করা হয়েছিল সে এলাকার ডন হয়ে উঠেছিল। আজ যাকে মারা হলো সেও একই কায়দায় এলাকায় দাপাতো। পৌরসভা ভোটের দিন এই সইফুদ্দিনরাই ভোট লুঠ করেছিল। একের পর এক এলাকায় গুলি চালায়। ছাপ্পা দেয়।’’
Comments :0