উত্তরাখন্ডে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করতে পারে সেই রাজ্যের বিজেপি সরকার। বিধানসভায় এই আইন পেশ করার জন্য বিশেষ অধিবেশন ডাকতে চলেছে পুষ্ক সিংহ ধামীর সরকার। শেষ বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে ওই রাজ্যে বিজেপির পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল যে তারা সরকার গঠন করলে রাজ্যে চালু হবে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি। নির্বাচনে জেতার পর এই বিষয় সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে কমিটিও গঠন করে ধামী সরকার। সূত্রের খবর কমিটি তার রিপোর্ট সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। যার ভিত্তিতে বিশেষ অধিবেশন ডেকে আইন পাশ করাতে চাইছে বিজেপি।
উল্লেখ্য ভারতবর্ষে বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, উত্তরাধিকারের মতো একাধিক বিষয়ের ক্ষেত্রে সামাজিক এবং ধর্মীয় বিধিকে মান্যতা দিয়ে সংবিধানে আইনের উল্লেখ রয়েছে। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার একাধিকবার এক দেশ এক আইনের পক্ষে সাওয়াল করে এসেছে। তাদের দাবি সব ধর্মের লোকেদের বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ সহ বিভিন্ন পারিবারিক বিষয় একই আইন মেনে চলতে হবে। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকেই ভারতে ধর্মীয় ভাবাবেগকে আঘাত না করেই আইন তৈরি করা হয়েছে। তা মেনে আসাও হয়েছে।
রাজনৈতিক মহলের একটা অংশ মনে করছে বিজেপি অভিন্ন দেওয়ানি বিধিকে হাতিয়ার করে ফের দেশে মেরুকরণের রাজনীতি স্পষ্ট করতে চাইবে। ভারতের বিভিন্ন ধর্মের পাশাপাশি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস তাদের সবার নিজস্ব পরম্পরা রয়েছে সামাজিক অনুষ্ঠান গুলোকে কেন্দ্র করে। কেন্দ্র সেই সব কিছুকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজেদের ইচ্ছা চাপিয়ে দিতে চাইছে।
শুধু উত্তরাখন্ড নয় বিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্যে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করা নিয়ে আলোচনা চলছে। উত্তররাখন্ড যদি এই আইন বিধানসভায় পাশ করাতে পারে সেই ক্ষেত্রে তারা হবে প্রথম বিজেপি শাসিত রাজ্যে যারা এই আইন চালুকরবে।
সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি রঞ্জন প্রকাশ দেশাই এর নেতৃত্ব যেই কমিটি গঠন করা হয়েছিল রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তারা জানিয়েছেন যে তারা প্রায় ২ লক্ষ মানুষ এবং বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের সাথে কথা বলে সরকারের কাছে রিপোর্ট জমা করেছে।
গত বছর ৯ ডিসেম্বর রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীর ধনকর বিলটি পেশের অনুমতি দেন বিজেপি সাংসদ মীনাকে। প্রতিবাদে সিপিআই(এম) সাংসদ জন ব্রিটাস সহ বিভিন্ন দলের সাংসদরা বাধা দেন। কয়েক দফা হট্টগোল চলতে থাকে। বিলটি পেশের অনুমতি নেওয়ার জন্য ধ্বনি ভোট নেন ধনকর। ৬৩-২৩ ভোটে বিল পেশের অনুমতি দেওয়া হয়।
ব্রিটাস বলেন, এই বিল যে অপ্রয়োজনীয় তা আগেই জানিয়েছে আইন কমিশন। ডিএমকে সাংসদ তিরুচি শিবা বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের বিরোধী অভিন্ন দেওয়ানি বিধি। সমাজবাদী পার্টির সাংসদ রামগোপাল ভার্মা বলেন, এই বিল সংবিধানের বিরোধী। সংসদে এই বিল পেশ হতে দেওয়া উচিত নয়।
বিজেপি এবং আরএসএস’র মূল আদর্শগত চিন্তার সঙ্গে যুক্ত অভিন্ন দেওয়ানি বিধির ধারণা। গুজরাট এবং মহারাষ্ট্রে এই বিধি চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট লড়েছে। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর অর্থ, আপাত বিচারে, সব ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্য একই ব্যক্তিগত আইন চালু করা। প্রকৃত বিচারে যদিও বিজেপি’র প্রচার ভিন্ন। মুসলিমদের একই ব্যক্তিগত আইনবিধির আওতায় আসতে বাধ্য করার লক্ষ্য জানানো হয়। বিভিন্ন সংগঠনেরই মত, ‘অভিন্ন’ হলেই ‘সমতা’ নিশ্চিত করা যায় না।
Comments :0