দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়ার রবীন্দ্র সরোবরের জলস্তর গত কয়েক মাসে ব্যাপক ভাবে নেমে গেছে যা পরিবেশবাদীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে পরিবেশবাদী এবং দূষণ বিরোধী 'রবীন্দ্র সরোবর বাঁচাও' অভিযানের মুখপাত্র এস এম ঘোষ জানিয়েছএন, জাতীয় হ্রদ হিসাবে চিহ্নিত রবীন্দ্র সরোবরে অবিলম্বে ড্রেজিং করা উচিত। ঘোষ পিটিআইকে বলেছেন যে, হ্রদের মাঝখানে কিছু জায়গায় জলস্তর ছয় ফুট (১.৮২মিটার) কমেছে।
তিনি বলেছেন, ‘‘৬০ বছর আগেও লেক সংলগ্ন গোবিন্দপুর বস্তির লোকেরা এখানে বাসন ধুতে আসত, এবং বাচ্চারা লেকে সময় কাটাত। জল কমে যাওয়া পুরনো ঘাটের কাঠামো আবার উঠে এসেছে। লেকের জলস্তর গত বছরগুলিতে অর্ধেকেরও বেশি হ্রাস পেয়েছে যার ফলস্বরূপ ভূগর্ভস্থ জলের স্তর হ্রাস পেয়েছে।’’
কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ), জল সংস্থার তত্ত্বাবধায়ক, হ্রদটি ড্রেজিংয়ের কাজ করে।
কেএমডিএ-র একজন আধিকারিক বলেছেন যে, দর্শনার্থী এবং কর্মীরা রিপোর্ট করেছেন যে হ্রদের সীমানার কাছে দুটি অংশে ‘চর’ উঠে এসেছে এবং হ্রদের মাঝখানে জলের স্তর কিছুটা নেমে এসেছে। পরিস্থিতি কতিয়ে দেখার জন্য বৈঠক ডাকা হবে বলেও তিনি সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘গত এক বছরে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাবে এই সঙ্কট হতে পারে। তবে আমাদের হ্রদটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার বিকল্প ভাবনা ভাবতে হবে।’’
প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি বলেছিলেন যে কেএমডিএ অস্থায়ীভাবে আউটলেট চ্যানেলগুলি প্লাগ করার একটি প্রস্তাব নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে যা জলাশয় থেকে জলের প্রবাহকে বাইরে নিয়ে যায়।
কেএমডিএর আরেক আধিকারিক জানিয়েছেন, জলাশয়ের মাঝখানে প্রায় ২০ ফুট গভীরতা রয়েছে।
ভূ-বিজ্ঞানী সুজিব করের কথায়, ‘‘আগে রবীন্দ্র সরোবর গঙ্গা নদীর সাথে যুক্ত ছিল। কিন্তু ১৭৩৭ সালে প্রলয়ঙ্করী ঝড়ের পর হ্রদটি নদী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আদিগঙ্গার প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়।’’
হ্রদটি এখনও আদি-গঙ্গার সাথে একটি উপ পৃষ্ঠের জল বহনকারী স্তরের মাধ্যমে সংযুক্ত রয়েছে, যা ১৬ মিটার থেকে ৪৬ মিটার বিস্তৃত। যার ফলে আদি গঙ্গা খালের দিকে উপ পৃষ্ঠের প্রবাহের আকারে জলের নিষ্কাশন হ্রদের জলস্তর হ্রাসের কারণ হচ্ছে, বলে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন।
কর বলেছেন, ‘‘জলাশয়ের সুরক্ষা জরুরী এবং যদি আমরা হ্রদটিকে রক্ষা করতে না পারি, তবে শহরের দক্ষিণ অংশে গোলপার্ক এবং টালিগঞ্জের মধ্যে বিস্তীর্ণ এলাকা প্রভাবিত হতে পারে।’’
কলকাতার বিভিন্ন অংশে প্রচুর পরিমাণে ভূগর্ভস্থ জল পাম্পের সাহায্যে তোলা এবং জলাশয়ের সংখ্যা হ্রাসের কারণে রবীন্দ্র সরোবরের উপর চাপ সৃষ্টি করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত পাঁচ দশকে জলাশয়ের কোনও ম্যাপিং হয়নি। এস এম ঘোষের কথায় প্রতি পাঁচ বছরে সরোবরের ম্যাপিং করা প্রয়োজন ছিল।
Comments :0