Teacher Recruitment

অস্থায়ী পদের অধ্যাপক নিয়োগ, ক্লাস পিছু ‘সাম্মানিক’ ১০০ টাকা!

রাজ্য

কলেজ পড়ানোর জন্য শিক্ষক চাইছে আর মাইনে পরিযায়ী শ্রমিকদের থেকেও কম ! আজ্ঞে হ্যাঁ। এই সরকারি বিজ্ঞাপন দেখলেই বুঝবেন আপনি বর্তমান পশ্চিমবঙ্গে আছেন। এই বাংলার যে শিক্ষার্থীরা বড় হয়ে অধ্যাপক বা স্কুল শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নটা দেখেন তাদের একটু বাস্তব পরিস্থিতিতে চোখ বুলিয়ে নেওয়া দরকার।

 

কলেজে অতিথি অধ্যাপক নিয়োগে  সাম্মানিক ভাতা স্থির হয়েছে ক্লাস পিছু কোথাও ১০০ টাকা, কোথাও মাসিক দশ হাজার টাকা! উত্তরবঙ্গের কলেজ নাথানিয়াল মুর্মু মেমোরিয়াল কলেজ এবং দক্ষিণ কলকাতার নেতাজী নগর কলেজ ফর উইমেনসে এই মর্মেই বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। নেট-সেট-এমফিল-পিএইচডি পাশ বা পাঠরত পড়ুয়াদের জীবনজীবীকার এই করুণ চিত্র নতুন নয়। এর আগেও রাজ্যে ডোমের চাকরি পদ কিংবা কন্সটেবল, প্রাথমিক শিক্ষক পদেও আবেদন করতে দেখা গেছে হাজার হাজার পিএইচডি গবেষককে।

তা কি বলছে এই বিজ্ঞপ্তিতে? এই কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়ানোর জন্য পার্ট টাইম শিক্ষক চাই। মাস গেলে মাইনে ১০ হাজার টাকা, আবার কোনো কারণে অনুপস্থিত থাকলে ‘দণ্ড’ স্বরূপ মাইনে কাটারও সুব্যবস্থা আছে। এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তরুণ গবেষক, যিনি আবার জেআরএফ স্কলারও বটে, তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘কাউকে ছোট না করেই বলছি, আমাদের আশেপাশে বিভিন্ন কাজে সাহায্যকারী মানুষজন কামাই করলেও আজকাল কেউ টাকা কাটেনা, আর এমএ, এমফিল, নেট , সেট পাশ করা ভৃত্যদের সেটুকু প্রিভিলেজও নেই’’।

 

ইউজিসি’র নিয়ম বলছে পার্ট টাইমারদের ক্লাস পিছু ন্যুনতম ১৫০০ টাকা সন্মানিক দিতে হবে, আর বাংলায় উন্নয়নের জোয়ারে সেটা ৪০০-৫০০ টাকা প্রতি ক্লাস, তাও পাওয়ার জন্য অনেক তৈলমর্দনের দরকার পড়ে শাসকদলকে।

সবথেকে অবাক করা বিষয় কলেজের ওয়েবসাইটে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তথ্য ঘাঁটতে গিয়ে। সেই বিভাগে মাত্র ১ জন প্রফেসর আর ২ জন স্যাক্ট  (SAACT)। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নিজের নিয়ম বলছে যেই কলেজ ' Honours ' পড়ানো হয় সেখানে ৫ জন অধ্যাপক থাকা প্রয়োজন। তাহলে এই বাকি ৪ সিটের নিয়োগ হলোনা কেনো? কলেজ কর্তৃপক্ষের সাফাই সরকার টাকা দিচ্ছে না, তাই অগত্যা নিজেদের ফান্ড থেকে এই টাকা দিতে হচ্ছে।  সদ্য প্রকাশিত কলেজ সার্ভিস কমিশনের তালিকাতেও এই দুই কলেজের কোনো শূণ্যপদের কোনো উল্লেখ নেই।   


এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে এসএফআই সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস জানান, ‘‘আসলে মাস গেলে ৭০,০০০ হাজার মাইনে সাথে গালভরা অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর নাম আপনাকে কেনো দেবে বলুন তো? সেই কাজ যদি ১০, ০০০ টাকায় আপনাকে দিয়ে করানো যায় তাহলে বাকি ৬০, ০০০ তো একটা ক্লাবকে দেওয়া যাবে, কিছু তাজা ছেলে ঝান্ডা ধরে ভোটের সময় ভোট লুট করতে নামবে।’’  

ওয়াকিবহাল মহলের অভিমত, এই বিজ্ঞাপন দুটির অর্থ হলো এই রাজ্যের অন্যান্য কলজের মতোই এই কলেজ দুটিতে বর্তমানে বেশ কিছু বিষয়ে শিক্ষক প্রায় নেই। তাহলে কেন কলেজ সার্ভিস কমিশনের চলতি নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই কলেজদুটিতে স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে না? কেন শূণ্যপদ কম করে দেখানো হচ্ছে? বিধায়কদের বর্ধিত ভাতা দেওয়ার টাকা যখন আছে, তখন শিক্ষকদের বেতন দেওয়ার টাকাও থাকা উচিত।
কার স্বার্থে শূন্যপদ পূরণ হচ্ছেনা? কলেজ সার্ভিস কমিশন বলবে কলেজ শিক্ষক চায়নি, আর কলেজ বলবে কলেজ সার্ভিস কমিশনের কাছে শিক্ষক চেয়েও পায়নি। কে সত্যি বলছে? আর এই টানাপোড়েনে ভাবী শিক্ষকরা কতদিন পিষে মরবে?

Comments :0

Login to leave a comment