আবারও সারা রাজ্যে দ্রোহের মশাল জ্বলবে রবিবার। অভয়ার ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়ে অভয়া মঞ্চ-র ডাকে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের ঢেউ সমবেতভাবে আছড়ে পড়বে কলকাতায় শ্যামবাজারের বুকে। চলছে তারই প্রস্তুতি।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মধ্যে ঠিক ১০০ দিন আগে এক তরুণী চিকিৎসক-ছাত্রীর নৃশংস ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড ঘটে গিয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে গিয়েছিল বিচারের দাবিতে তীব্র আন্দোলন। সেদিনেই পথে নেমে ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তরুণী চিকিৎসক-ছাত্রীর সহপাঠী থেকে সিনিয়র চিকিৎসকরা। তারপর থেকে ক্রমাগত চলছে ধারাবাহিক আন্দোলন, রাতের দখল নেওয়ার লড়াই। রবিবার একশো দিন পার করবে সেদিনের ওই ন্যক্কারজনক ঘটনা। বিচার এখনও অধরা, চলছে আন্দোলন। এরই প্রেক্ষিতে আবারও পথে নামার কর্মসূচি নিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরস সহ চিকিৎসকদের যৌথ সংগঠন জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট এবং ১০০টিরও বেশি গণসংগঠন নিয়ে গঠিত অভয়া মঞ্চ।
রবিবার উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুর থেকে রওনা দেবে একটি সাইকেল জাঠা। দ্রোহের মশাল জ্বালিয়ে এই কর্মসূচির সূচনা করবে ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় প্রতিটি মুহূর্ত গুনতে থাকা অভয়ার পরিবার। মশাল হাতে ১০০ জন সাইকেল আরোহীর সেই জাঠা এসে পৌঁছাবে কলকাতার শ্যামবাজারে। সেখানে আরও বিভিন্ন দিক থেকে মিছিল এসে যোগ দেবে অভয়া মঞ্চে। জেলাগুলি থেকে সেই মঞ্চে আগত প্রতিনিধিদের হাতে সেই মশাল তুলে দেওয়ার পর তাঁরা সেই দ্রোহের প্রতীক বয়ে নিয়ে যাবেন জেলায় জেলায়। ইতিমধ্যে প্রতিটি জেলায় অভয়া মঞ্চ ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তোলার ডাক দেওয়া হয়েছে মূল অভয়া মঞ্চের তরফে। চলছে সেই কাজ।
এ ছাড়াও রবিবার রাজ্যের ১০০টি জায়গায় ১০০ সেকেন্ড নীরবতা পালন করা হবে অভয়া স্মরণে। গত ৯ নভেম্বর রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে যে জনতার চার্জশিট পেশ হয়েছে, তা ডাকযোগে রাজ্যের সমস্ত সাংসদ ও বিধায়ককে পাঠানো শুরু হয়েছে অভয়া মঞ্চ-র পক্ষ থেকে। শুধু তা নয়, অভয়া মঞ্চ স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন আলোচনাসভা, কনভেনশন, দ্রোহের সংস্কৃতি পালনেরও কর্মসূচি নিয়েছে।
মঞ্চের বক্তব্য, বিচার ব্যবস্থা ধীরে ধীরে প্রহসনে পরিণত হচ্ছে। রাজ্য সরকারের তরফে প্রথম থেকে সঠিক তদন্তের কোনই সদিচ্ছা দেখা যায়নি। উপরন্তু প্রমাণ লোপাট করে আসল অপরাধীদের আড়াল করতেই ব্যস্ত প্রশাসন। ওদিকে রাজ্যের শাসক দল মানুষের আন্দোলনকে ভাঙার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে নানাভাবে। সেদিনের সেই নারী নির্যাতনের ঘৃণ্য ঘটনার একশো দিন পূরণে আবার পথের দখল নেওয়া হবে বিচারের দাবিতে, কর্মক্ষেত্রে নারী সুরক্ষার দাবিতে, হাসপাতালে প্রতিটি মানুষের জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা পরিকাঠামো গড়ে তোলার দাবিতে। রবিবার রাত ৮টায় শ্যামবাজার মোড়ে বৃহৎ সমাবেশ সোচ্চার হবে সমস্ত দাবিতেই।
অন্যদিকে, তিলোত্তমার ন্যায়বিচারের দাবিতে, সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি ও হুমকি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র্যা গিংয়ের বিরুদ্ধে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন সমস্ত ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-অধ্যাপক, শিক্ষাকর্মী তথা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মঞ্চ ‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সংহতি’র আহ্বানে শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে এক কনভেনশন আয়োজিত হয়। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক পার্থপ্রতিম বিশ্বাস। কনভেনশনে কর্ম ও সামাজিক ক্ষেত্রে মহিলা ও প্রান্তিক মানুষদের অধিকার সুনিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। আহ্বান জানানো হয় ‘একের ডাকে সবাই’ সবার পাশে থাকার।
উপস্থিত ছিলেন জুটা, কর্মচারী সংসদ, এপিডিআর, পেনশনারস অ্যাসোসিয়েশন, পুরাতনী, পথ বদলের ডাক, বিভিন্ন ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিরা। বক্তব্য রেখেছেন স্বাতী চক্রবর্তী, ড. অনুপম বসু, ড. ইন্দ্রনীল সেন প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন মানস মাইতি, পার্থপ্রতিম মজুমদার, অমিত ভট্টাচার্য, পুলস্ত্য আচার্য, শর্মিষ্ঠা দত্ত গুপ্ত, অভিজিৎ চন্দ প্রমুখ। আর এক জনও যাতে তিলোত্তমা না হন, আর একটিও যাতে সেরকম নৃশংস ঘটনা না ঘটে, তার জন্য প্রতিবাদ-প্রতিরোধ আরও অনেক গুন তীব্র করার কথা বলেন তাঁরা।
100 Days For Rg Kar Case
বর্বরতার একশো দিনে ১০০ জায়গা নীরব থাকবে ১০০ সেকেন্ড
×
Comments :0