রাষ্ট্রদ্রোহ আইন সংবিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এই যুক্তিকে হাতিয়ার করে বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের লাহোর হাইকোর্ট সেদেশের দন্ডবিধির ১২৪এ ধারাকে বাতিল ঘোষণা করল।
পাকিস্তানের অন্যতম জনপ্রিয় দৈনিক সংবাদপত্র ‘দি ডন’—এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১২৪এ ধারা বাতিলের দাবিতে লাহোর হাইকোর্টে একগুচ্ছ আবেদন জমা পড়েছিল। সমাজকর্মী এবং বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের দাবি ছিল, ১২৪এ ধারাকে ব্যবহার করে বিরোধী মতকে দমন করছে পাকিস্তানের একের পর এক কেন্দ্রীয় সরকার। বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানি ছিল বিচারপতি শাহিদ করিমের ডিভিশন বেঞ্চে। শুনানি শেষে বিচারপতি বলেন, সংবিধানের মৌলিক নির্যাসের সঙ্গে খাপ খায়না এই ধারা। তারপরেই নিজের রায় ঘোষণা করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে বিচারপতি করিমের ডিভিশন বেঞ্চই প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফকে সংবিধানকে অন্তর্ঘাত করার অপরাধে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছিল।
পাকিস্তানের পাশাপাশি ভারতের দন্ডবিধির ১২৪এ ধারাতেও রাষ্ট্রদ্রোহ আইন রয়েছে। ২০২২ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের তরফে কেন্দ্রের কাছে অনুরোধ করা হয় এই আইনের যৌক্তিকতাকে খতিয়ে দেখার। একইসঙ্গে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রকে নির্দেশ দেয়, কেন্দ্রের তরফে এই সংক্রান্ত জবাব না মেলা অবধি রাষ্ট্রদ্রোহ আইন ব্যবহার স্থগিত রাখার।
আইনি বিশেষজ্ঞদের অভিমত, বৃটিশ শাসন চলাকালীন রাষ্ট্রদ্রোহ আইন তৈরি হয়। এই আইনকে হাতিয়ার করেই স্বাধীনতা আন্দোলন দমন করার চেষ্টা হয়। ১৯৪৭ সালের পর থেকেই প্রশ্ন ওঠে, স্বাধীন দেশে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের কোনও যৌক্তিকতা রয়েছে কিনা। কিন্তু তারপরে ৭৫ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এই আইন এখনও বলবৎ। একের পর এক কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, এই আইন হাতিয়ার করে রাজনৈতিক বিরোধীদের কন্ঠরোধ করার। ২০১৪ সালের পর থেকে ভারতে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে মামলা রুজু করার সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যাপক হারে।
Comments :0