বাবা রিক্সাচালক। অভাবের সংসারে এলো খুশির খবর। মেয়ে বিদিশার নিট সাফল্য। স্বভাবতই এক কামড়ার ঘরে খুশির আবেশে গোটা পরিবার। উচ্ছ্বাস প্রতিবেশীদের। উত্তর ২৪পরগনা হিঙ্গলগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রাম বাঁশতলার বাসিন্দা বিদিশা মণ্ডল।
অভাব, প্রতিকূলতা আর সীমাহীন বাধা—এই ছিল তার নিত্যসঙ্গী। তবু স্বপ্ন দেখেছিল সে, আর সেই স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরে লড়ে গিয়েছে প্রতিটি মুহূর্তে। আর আজ, সেই স্বপ্নের ঠিকানা স্পষ্ট হলো ডাক্তার হওয়ার পথে বড় এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে।
বিদিশার বাবা কলকাতায় রিক্সা চালিয়ে কোনোমতে সংসার চালান। একটি মাত্র ঘরের মধ্যে মা-বাবা আর প্রতিদিনের হালচাল। পড়ার কোনও নিরিবিলি পরিবেশ নেই। নেই আলাদা পড়ার টেবিল কিংবা নিটের জন্য কোচিং করার সামর্থ্য। তবুও থেমে যায়নি বিদিশার লড়াই।
বিদিশা জানায়, অনেক সময় বাড়িতে মন বসাতে পারিনি। তখন পুকুরপাড়ে গিয়ে বসতাম, কখনো মাঠের এক কোণে। মাথায় শুধু একটা কথাই ছিল, আমাকে ডাক্তার হতে হবে। কারণ আমাদের মতো গ্রামের মানুষদের চিকিৎসার জন্য দূরে যেতে হয়। আমি চাই, এই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে। কোচিং সেন্টারের ক্লাস নয়, ইউটিউবের ভিডিওই ছিল তার শিক্ষক। প্রখর ইচ্ছাশক্তি আর নিজের উপর অগাধ বিশ্বাসই ছিল তার আসল পুঁজি। আর আজ, সেই অদম্য মেয়েটিই নিট পরীক্ষায় সাফল্য পেয়ে প্রমাণ করে দিয়েছে,স্বপ্ন বড় হলে, পরিস্থিতি নয়, ইচ্ছা শক্তি সবকিছু। বিদিশার সাফল্য শুধু তার নিজের নয়। এই জয় গোটা সুন্দরবনের, এই জয় সেই সব মেয়েদের যাদের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখে শুধু সাহস আর সাধনায়।
এ রাজ্য থেকে এ বছর নিট পরীক্ষায় বসেছিলেন ১ লক্ষ ৬ হাজার ৬৭৫ জন। তাঁদের মধ্যে ৫৯ হাজার ১৮ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন। তবে গত বছরের তুলনায় এবারে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। প্রথম ২০ জনের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের দু’জন পরীক্ষার্থী রয়েছেন। রাজ্যে শীর্ষস্থানাধিকারী রচিত সিংহচৌধুরী দেশের মধ্যে ষোড়শ স্থান দখল করেছেন তিনি।
NEET Success
অভাবের সংসারে ‘নিট’ পরীক্ষায় সাফল্য হিঙ্গলগঞ্জের বিদিশার

×
Comments :0