সমিতের দুঃখ
উপেক্ষিৎ শর্মা
সমিত। ক্লাস ফাইভ। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে মুখ গোঁজ করে বসে আছে।
‘কী হল? এর’ম করে বসে আছো কেন বাবু?’ সবিতা, সমিতের মা,আদর করে জিজ্ঞেস করল। ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেলল সমিত,
‘নীতা ম্যা’ম ক্লাশে আমায় ইডিয়েট বলেছে।‘
‘এমা, কেন? তুমি কিছু দুষ্টুমি করেছ?’
‘না। আমি ম্যাথে নাইন্টি-এইট পেয়েছি, তাই।‘
‘মানে?’
ম্যাম বলল,
‘তোমার হান্ড্রেড পাওয়া উচিত ছিল।‘ আমি যেই বলেছি,
‘প্রীতিও ( ওদের ক্লাসের টপার ) তো নাইন্টি-এইট পেয়েছে'।
‘ডোন্ট টক ননসেন্স। প্রীতি পেয়েছে বলে তোমাকেও পেতে হবে? ইডিয়েট।‘ শুনে সবাই আমার দিকে ফানি চোখে তাকাচ্ছিল। প্রীতি ক্লাসে টপার বলে ওর খুব ঘ্যাম। ও আমার দিকে এমন ভাবে কটমট করে তাকাল যেন আমি ফেল মেরেছি,মাম্মা'_ বলে সবিতার কোলে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে লাগল সমিত।
‘ঠিক আছে। ঠিক আছে বাবা। আমি কাল তোমার নীতা ম্যামের সঙ্গে কথা বলব। আর প্রীতি ফার্স্ট হয় তো কী হয়েছে, তুমিও তো বাবু চার-পাঁচের মধ্যেই স্ট্যান্ড করো,’ বলে ওর মধ্যে উঁকি মারা শিশুসুলভ হীনম্মন্যতাকে প্রশমিত করে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করল।
‘আই লাভ প্রীতি,বাট ওর এই ঘ্যাম ভাবটা_ আই হেট, আই হেট, আই হেট।‘ ছেলের এই অকপট স্বীকারোক্তিতে
সবিতা যুগপৎ প্রীত ও সচকিত হল। পরিস্থিতিটা সামাল দিয়ে বলল,
‘প্রীতি খুব ভালো মেয়ে। ওর সম্বন্ধে এরকম বলে না বাবা।‘
‘কেন বলব না? ও সবসময় আপার-হ্যান্ড নিতে চায়। আমাকে ডাউন করতে চায়। আই লাভ হার, বাট আই ডোন্ট লাইক হার।‘ কথাটা ঠিক বোধগম্য হল না সবিতার। উলটোটা হলে তাও নয় একটা মানে করা যেত। কিন্তু এটা কেমন যেন গোলমেলে গোলমেলে। কেমন যেন, গোছানো কথা অগোছালোভাবে বলে ফেলা। একটু সহানুভূতির সুরে বলল,
‘ঠিক আছে। সামনের পরীক্ষায় ওকে টপকে ফার্স্ট হয়ে দেখিয়ে দাও।‘
‘ইয়েস।‘ বলে সমিত খেলোয়াড়দের মতো সাফল্যের মুঠোহাত ওপরে তুলে আবার ওর স্বাভাবিক সত্তায় ফিরে এল।
পরের দিন রিপোর্ট কার্ড হাতে নিয়ে স্কুল থেকে বেরিয়ে এল সমিত। সবিতাকে দেখে ছুট্টে মাকে জড়িয়ে ধরে মা-র দিকে মুখ তুলে জোরে জোরে বলে উঠল,
‘আই অ্যাম দ্য টপ, দ্য টপ ,অ্যাণ্ড দ্য টপ।‘ বলেই মা-র কোলে মুখ গুঁজে কেঁদে ফেলল। সবিতা হতচকিত হয়ে বলল,'এমা, কাঁদছ কেন?’
সমিত মাকে আরও জোরে জাপটে ধরে বলে উঠল,
‘জানি না। জানি না। জানি না।‘
Comments :0