Aravalli under threat

আরাবল্লীতে ডাকাতের চোখ!

সম্পাদকীয় বিভাগ

সত্যজিৎ রায়ের সোনার কেল্লায় লালমোহনবাবু শিহরিত হয়েছিলেন আরাবল্লীতে ডাকাতের কথা শুনে। গল্পকাহিনি ছেড়ে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে আরও অনেক ভয়ানক ডাকাতদলের চোখ পড়েছে আরাবল্লীতে। কর্পোরেট ডাকাতদল।  কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের সংজ্ঞায় সায় দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট দেশের উত্তরের বিস্তৃত আরাবল্লী পর্বতমালার অংশ নির্ধারণে উচ্চতা নিয়ে যে কথা বলেছে তাতেই আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে। সুপ্রিম কোর্টে গৃহীত কেন্দ্রীয় সরকারের কমিটির সংজ্ঞা অনুযায়ী আরাবল্লী পর্বতমালা বিস্তৃত জেলাগুলিতে ১০০ মিটার উচ্চতা বা তার থেকে বেশি উচ্চতার পাহাড়কেই আরাবল্লী পর্বতমালা বলে গণ্য করা হবে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে এতদিন আরাবল্লী বলতে যে সব পাহাড়কে বোঝানো হতো, তার বেশির ভাগই আর আরাবল্লীর পাহাড় বলে গণ্য হবে না। ফলে সে সব এলাকায় সহজেই খনিজ সম্পদ উত্তোলনে খননকাজ চালানো যাবে। নির্বিচারে গড়ে তোলা যাবে পর্যটনকেন্দ্রও। এই কারণে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের থেকেই আন্দোলন শুরু হয়েছে বিভিন্ন রাজ্যে। আরাবল্লীকে বাঁচাতে সমাজমাধ্যমেও শুরু হয়েছে প্রতিবাদ। গ্রামবাসী, আইনজীবী থেকে শুরু করে রাজনীতিক এবং পরিবেশকর্মীরা সবাই প্রতিবাদে নেমেছেন। হরিয়ানা, রাজস্থান, দিল্লি এবং গুজরাট এই চার রাজ্যের প্রায় দেড় লক্ষ বর্গকিলোমিটারের বেশি এলাকা জুড়ে রয়েছে আরাবল্লী পর্বতমালা। এরমধ্যেই রয়েছে বহু খনি অঞ্চল। কেন্দ্রীয় সরকার আশ্বাস দিচ্ছে যে আরাবল্লী পর্বতমালা এলাকায় প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় জোর দিয়ে কোনও খনন কার্যের অনুমতি দেওয়া হবে না। কিন্তু পরিবেশ কর্মীদের উদ্বেগ, যেভাবে পর্বতমালা অঞ্চলকেই লঘু করে দেওয়া হচ্ছে তাতে আরও নতুন খনির বরাত দেওয়া হতে পারে। কর্পোরেট পুঁজি সেদিকেই তাকিয়ে আছে। তাদের তুষ্ট করতেই উদগ্রীব মোদী সরকার। আরাবল্লী পর্বতমালা একদিকে চার রাজ্যের বহু জেলার মানুষের প্রকৃতিকে কেন্দ্র করে বেঁচে থাকার অবলম্বন। অন্যদিকে এই পর্বতমালায় প্রাকৃতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় প্রয়োজন। ঢালের মতো মরুভূমি থেকে উত্তর ভারতকে রক্ষা করছে এই পর্বতমালা। এমনকি দিল্লিতে যে বায়ুদূষণের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে তাও আরও বেড়ে যেতে পারে আরাবল্লীকে রক্ষা করতে না পারলে। 
টেকসই বা স্থিতিশীল উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা এখন বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত। প্রকৃতি ও পরিবেশের সর্বনাশ করে দ্রুত লাভের আশায় কোনও পদক্ষেপ উন্নয়নকে স্থিতিশীল করতে পারে না, বরং বিপর্যয় ডেকে আনে। বড় বাঁধ নির্মাণ, নদী পরিকল্পনা, পাহাড়ে নির্মাণ ও খনন কার্য, জঙ্গল ও জলাভূমি ধ্বংস করে কোনও উন্নয়নের বিপদ সম্পর্কে মানুষ ক্রমশই সচেতন হয়ে উঠছে। এমনি এমনি নয়, এর জন্য কড়া মূল্যও চোকাতে হয়েছে মানুষকে। সেটা উত্তরাখণ্ডের পাহাড়েই হোক কিংবা আমাদের উত্তরবঙ্গের পাহাড়ে, বিপর্যয়ের পিছনে প্রকৃতি ও পরিবেশবান্ধব নয় এমন কার্যকলাপের দায় টের পেয়েছেন মানুষ। কিন্তু সরকার এখনও মানুষের বদলে কর্পোরেট সংস্থাগুলির মুনাফা বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতেই বেশি আগ্রহী। মোদী সরকার যেমন হিমালয়ের স্থিতিশীলতা নষ্ট করে রেল সড়ক টানেল ইত্যাদি করে বিপর্যয় ডেকে এনেছে এরাজ্যের উত্তরবঙ্গেও তেমনি পাহাড়ের গায়ে বেআইনি নির্মাণ ঘটেছে ব্যাঙের ছাতার মতন। বীরভূমে জঙ্গল উজার করে পাথর তোলার জন্য দেউচা পাঁচামীতে জমি দেওয়া হচ্ছে বেসরকারি সংস্থাকে। এর বিরুদ্ধেও আদিবাসী মানুষজন বিক্ষোভে নেমেছেন। কেন্দ্রীয় সরকার হোক, রাজ্য সরকার হোক কিংবা স্থানীয় পৌরসংস্থা, বড় কোনও প্রকল্প তাদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্তাদের একক সিদ্ধান্তে রূপায়িত হওয়াই উচিত নয়। প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব খতিয়ে দেখে বিশেষজ্ঞদের অনুমোদন ছাড়া এগলে বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী।

Comments :0

Login to leave a comment