T20 World Cup

ক্যাচ ছেড়ে সেমিফাইনালের অপেক্ষা বাড়ল ভারতের

খেলা

এত কাছে তবুও কত দূরে...
সমীকরণ এমন ছিল, রবিবার ভারত দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাতে পারলেই অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যেত সেমিফাইনাল। কিন্তু, হেলায় সেই সুযোগ হারালো রোহিতের দল। শেষ চারের অপেক্ষা বাড়ল আরও কয়েকদিন। নিজেদের দোষেই পাঁচ উইকেটে হার ভারতের। হারের ময়নাতদন্ত করাটা খুব সহজ। প্রথমত, ব্যাটিং ব্যর্থতা। দ্বিতীয়ত জঘন্য ফিল্ডিং। 
টি-২০ ক্রিকেট খারাপ ফিল্ডিং হলে জেতাটা খুব মুশকিল হয়ে যায়। তার উপর যদি হাতে পুঁজি কম থাকে। ১৩৪ তাড়া করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকাও দ্রুত উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল। এবং ভারতের জয়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন দুই প্রোটিয়া ব্যাটার। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ডিপ মিড উইকেটে বিরাট কোহলি ফেলেন আইডেন মাক্ররামের লোপ্পা ক্যাচ। পরের ওভারেই ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে ডেভিড মিলারের রান আউট মিস করেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। যা ম্যাচের সবচেয়ে বড় টার্নিং পয়েন্ট। জীবন ফিরে পাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার অভিজ্ঞ দুই টি-২০ ক্রিকেটার মাক্ররাম ও মিলারকে কি আর থামানো যায়। চাপের মুখে দু’জনই অর্ধশতরান করলেন। মাক্ররাম আউট হয়ে গেলেও মিলার ক্রিজে শেষ অবধি থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। পরিসংখ্যান ঘাঁটতে গিয়ে নজরে আসলো, আন্তর্জাতিক টি-২০’তে রান তাড়া করার ক্ষেত্রে মিলারের রেকর্ড খুবই উজ্জ্বল। শেষ ১৬ ইনিংসে তিনি আউট হয়েছেন মাত্র দু’বার। গড় তিনশোর কাছাকাছি। স্ট্রাইক রেট ১৫৪। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর মতো ক্রিকেটারের রান আউট মিস হলে, হারতে তো হবেই।  
সাম্প্রতিক কালে, যে কোনও ফরম্যাটের ক্রিকেটেই, বিশেষত সীমিত ওভারের ম্যাচে দেখা যাচ্ছে ভারতের বাজে ফিল্ডিংয়ের নমুনা। যেসব দিনে, রান আউট ও ক্যাচ মিস হচ্ছে। ওইদিনগুলিতেই ভারতকে ভুগতে হয়েছে। এদিনও তার অন্যথা হয়নি। যদিও প্রোটিয়াদের কাছে হেরে খুব একটা অসুবিধে পড়তে হয়তো হবে না। গ্রুপ পর্যায়ে ভারতের এখনও  দু’টি ম্যাচ বাকি। পরেরটা বাংলাদেশ। শেষে জিম্বাবোয়ে। পরের ম্যাচগুলি জিতলেই সেমিফাইনাল পাকা হয়ে যাবে। 
পার্থের গতি-বাউন্সি উইকেটে ব্যাটিং ভারতীয় ব্যাটারদের কাছে সহজ হবে না। পূর্বাভাস আগে থেকেই ছিল। সঙ্গে যোগ হয়েছিল ঠান্ডা হাওয়া। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের ওপেনিং জুটির ছন্দে কথা ভেবেই প্রোটিয়াদের চার পেসারের সমৃদ্ধ বোলিং লাইনআপের বিরুদ্ধে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন রোহিত। ফলত, যা হওয়ার তাই হয়েছে। নয় ওভার শেষ হতে না হতেই পাঁচ ভারতীয় ব্যাটার প্যাভিলিয়নে। ভারতীয় ব্যাটিংয়ের ধস নামান লুঙ্গি এনগিডি। সূর্য পূর্ব দিকে ওঠার মতোই রাহুলের খারাপ ফর্ম অব্যাহত। ৯ রান করেন তিনি। উইকেট থিতু হওয়ার চেষ্টা থাকলেও লুঙ্গি এনগিডির অতিরিক্ত বাউন্স সামলাতে না পেরে স্লিপে ধরা পড়েন মাক্ররামের হাতে। একই ওভারে আউট হন রোহিত (১৫)। টানা তিন ম্যাচে রান না পাওয়া রাহুলকে কি এখনও বয়ে বেড়াবে টিম ম্যানেজমেন্ট? এর উত্তর জানা নেই। খেলানো হয়েছিল দীপক হুডাকেও। অতীতে টি-২০ ওপেনার হিসাবে খেলেছিলেনও তিনি। শতরানও রয়েছে। রাহুলের খারাপ ফর্মে কারণে হুডাকে ওপেনার হিসেবে খেলানোই যেত! তবে হুডা নিজেও পাঁচ নম্বরে নেমে খাতা খুলতে পারেননি। হার্দিক (২)। ব্যাটিং বিপর্যয় রুখতে পারলেন না বিরাটও (১২)। ইনিংসের শুরুতে দু’উইকেট নেওয়া এনগিডিকে পরপর দু’টি চার মেরে প্রয়োজনীয় আত্মবিশ্বাস সংগ্রহ করে নিয়েছিলেন।  ষষ্ঠ ওভারের পঞ্চম বলে এনগিডিই হন বিরাটের ঘাতক। পুল করতে গিয়ে আউট হন। দুরন্ত ক্যাচ রাবাডার।
৪৯/৫ ভেন্টিলেশনে চলে গিয়েছিল ভারত। সূর্যের ৪০ বলে ৬৮ রানের ইনিংস ভারতকে লড়াই করার মতো অক্সিজেন দিয়েছিল। দীনেশ কার্তিককে সঙ্গে নিয়ে ষষ্ঠ উইকেটে ৫২ রানের জুটি গড়েন। জুটিতে অর্ধেকের বেশি আসে সূর্যের ব্যাট থেকে। বিশ্বমানের পেস বোলিংয়ের বিরুদ্ধে দলের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে  এই মানের ইনিংস খেলে প্রমাণ দিলেন, কেন তাঁকে এই মুহূর্তে বিশ্বসেরা টি-২০ ক্রিকেটার বলা হচ্ছে। ফ্লিক, পিক আপ শট, স্ট্রেট ড্রাইভ, কাট। সবধরনের শট খেললেন। ক্রিকেটীয় ভাষায় যাকে বলে ৩৬০ ডিগ্রি ব্যাটিং। লোয়ার মিডল অর্ডারকে নিয়ে এত লড়াইয়ের পরও পারলেন না দলের স্কোরকে দেড়শো অবধি নিয়ে যেতে। শেষদিকে ওয়েন পার্নেলকে তুলে মারতে গিয়ে তাঁর ইনিংস থামে। আউট হন। এনগিডির মতোই সফল পার্নেলও। তাঁর ঝুলিতে তিন উইকেট।
অল্পের রান ডিফেন্ড করতে হলে বিপক্ষকে শুরুতেই ধাক্কা দেওয়া প্রয়োজন। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই দিয়েছিলেন বামহাতি পেসার অর্শদীপ সিং। চলতি বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ইনফর্ম ব্যাটারকে দ্রুত ফিরিয়ে। আউট সুইংয়ে ডি কককে ড্রাইভের প্রলোভন দেখিয়ে শট খেলতে বাধ্য করেন। দ্বিতীয় স্লিপে ভালো ক্যাচ ধরেন রাহুল। তৃতীয় বলে ইনসুইংয়ে ফাঁসান আগের ম্যাচের শতরানকারী ব্যাটার রাইলি রুশোকে (০)। দক্ষিণ আফ্রিকার ছিল ভারতের চেয়েও খারাপ অবস্থা। ৩ রানে দুই উইকেট। সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন অধিনায়ক বাভুমা ও মাক্ররাম। এই দলে সুইংয়ের সামনে সবচেয়ে ভালো ব্যাটার তিনিই। তিনিও আউট হয়ে যেতেন। অর্শদীপের আউটসুইং অল্পের জন্য তাঁর ব্যাটের কানা পায়নি। স্নায়ুর চাপ সামলে রুখে দাঁড়ান। পালটা আক্রমণ শুরু করেন। সঙ্গী হিসেবে বাভুমাকে না পেলেও অভিজ্ঞ মিলারকে পেয়েছিলেন। প্রোটিয়া অধিনায়ক সামির বলে ভুল শট নির্বাচন করে উইকেট ছুঁড়ে দেন। চতুর্থ উইকেটে মিলার ও মাক্ররামের ৭৬ রানের জুটি দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের পথ প্রশস্ত করে। এমনিতে ভারত এক বোলার কমে খেলেছিল। ভারতীয় পেসাররা আঁটসাঁট বোলিং বজায় রেখেছিলেন। পেসারদের মারতে না পারায় স্বভাবতই হার্দিক ও অশ্বিন সফট টার্গেট ছিলেন দুই প্রোটিয়া ব্যাটারের। এই ভারতীয় দুই বোলারের ওভারে বড় রান নিয়ে সফল হন তাঁরা। 
সংক্ষিপ্ত স্কোর—
ভারত: ২০ ওভারে ১৩৩/৯ ( সূর্য ৬৮, লুঙ্গি ৪/২৯০
দক্ষিণ আফ্রিকা: ১৯.৪ ওভারে ১৩৭/৫ (মিলার অপরাঃ ৫৯, অর্শদীপ ২/২৫)
দক্ষিণ আফ্রিকা জয়ী ৫ উইকেটে
ম্যাচের সেরা: লুঙ্গি এনগিডি
 

Comments :0

Login to leave a comment