Editorial

বাংলাভাষীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা

সম্পাদকীয় বিভাগ

গুজরাট, উত্তর প্রদেশ, দিল্লি, মহারাষ্ট্র, আসাম, ছত্তিশগড় সহ বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলাভাষী লোকজনকে হেনস্তার বহর ক্রমশ মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এমন এক ভয়াবহ আতঙ্কের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বাংলা কথা বলছে খবর পেলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের পুলিশ তাদের বিজ্ঞাসাবাদের নামে আটক করছে। কখনো থানার লক আপে কখনো অস্থায়ী ক্যাম্পে, কখনো ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে রেখে নানাভাবে নির্যাতন, অপমান, হেনস্তা করছে। গোপনে আটকদের একাংশকে বাংলাদেশী ছাপ দিয়ে বিএসএফ’কে দিয়ে সীমান্তের ওপারে চালান করে দিচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বাড়িঘর, আত্মীয়স্বজন থাকলেও তারা খবর পাচ্ছেন না। নানা সূত্রে অনেক পরে খবর পেয়ে নথিপত্র নিয়ে দরবার করার পর অনেককেই বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে বিএসএফ। যাঁরা খবর পাননি বা নথিপত্র দিয়ে পুলিশকে বোঝাতে পারেননি তাঁদের ভিন দেশে অসহায় অবস্থায় কাটাতে হচ্ছে।
বহু ভাষার দেশে রাজ্যগুলি গঠিত হয়েছে ভাষার ভিত্তিতে। বাংলার জন্য পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িয়ার জন্য ওডিশা, তেলুগুর জন্য অন্ধ্র প্রদেশ, মারাঠির জন্য মহারাষ্ট্র, গুজরাটির জন্য গুজরাট ইত্যাদি। ভারতের সংবিধান ২২টি ভাষাকে স্বীকৃতি দিয়েছে, তারমধ্যে বাংলা অন্যতম। ভাষা যাই হোক না কেন সংবিধান যে কোনও নাগরিককে যে কোনও রাজ্যে বসবাসের, কাজ করার, যাতায়াতের অবাধ স্বাধীনতা দিয়েছে। দেশের সব রাজ্যেই কম-বেশি বাংলাভাষীরা স্থায়ী, অস্থায়ীভাবে বাস করেন। সেটা তাঁদের সাংবিধানিক অধিকার। আবার পশ্চিমবঙ্গে অন্তত দেড় কোটি অন্য রাজ্যের অন্য ভাষার মানুষ বাস করেন। এতে কোনও সমস্যা থাকার কথা নয়। কিন্তু কেন্দ্রে মোদী সরকার আসার পর যেখানে যেখানে ডাবল ইঞ্জিনের সরকার তৈরি হয়েছে সেখানে বাংলাভাষীদের অত্যাচার বাড়তে শুরু করেছে। বাংলা ভাষায় কথা বলাকে বিজেপি শাসক সন্দেহের চোখে দেখছে। তারা মনে করছে বাংলায় কথা বলা মানে তাঁরা বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী। প্রশ্নটি যত অযৌক্তিক বা অবান্তরই হোক না কেন বিজেপি এই ধারণাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে কৌশল হিসেবে।
এইভাবে তারা দেখাতে চাইছে গোটা দেশ বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীতে ভরে গেছে। তাঁদের ধরে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেশপ্রেমিক কাজ করছে এবং বাহবা কুড়াবার চেষ্টা করছে। তার ধাক্কায় নিরীহ ভারতবাসীর যন্ত্রণা বাড়ছে কেবলমাত্র বাংলায় কথা বলার জন্য। মমতা জমানায় এরাজ্যের হাল এমন হয়েছে যে ভিন রাজ্যে কাজ করতে না গেলে লক্ষ লক্ষ পরিবার না খেয়ে মরে যাবে। বাঁচার তাগিদে রুজির সন্ধানে বাংলাভাষী ভিন রাজ্যে পরিযায়ী হচ্ছে। আর বিজেপি সরকারগুলি পুলিশ লাগিয়ে তাঁদের বাংলাদেশী তকমা ঝুলিয়ে হয় বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে না হয় আটক রে‍‌খে অকথ্য নির্যাতন করছে। বাংলার গরিব মানুষের এখন উভয় সঙ্কট। রাজ্যে থাকলে না খেয়ে মরতে হবে। ভিন রাজ্যে গেলে বাংলাদেশী তকমা নিয়ে নির্যাতনের শিকার হতে হবে।
এমনকি বাংলাদেশী বলে দাগানোর জন্য প্রধানত বাছাই করা হচ্ছে মুসলিমদের। অর্থাৎ ধর্মে মুসলিম আর ভাষায় বাংলা হলেই চোখ বুঝে বাংলাদেশী ছাপ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ থাকলেও মানা হচ্ছে না। এ এক ভয়ঙ্কর আক্রমণ। ফলে বাংলাভাষী মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। বিজেপি ধর্মীয় বিভাজনকে তীব্র করতেই পরিকল্পনা করে এই কাজ করছে। আর পশ্চমবঙ্গে মানুষকে দেখাতে চাইছে রাজ্যের মধ্যেও বাংলাদেশীতে ভরে গেছে। এমন মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করতে বাংলার মানুষের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। চরম অমানবিক আচরণ করছে। এই নৈরাজ্য কোনও অবস্থাতেই চলতে দেওয়া যায় না।
 

Comments :0

Login to leave a comment