Bengali Bangladeshi

বাঙালি হেনস্তার জন্য মোদী আগে ক্ষমা চান

সম্পাদকীয় বিভাগ

গত কয়েক মাস ধরে রাজ্যে রাজ্যে ডাবল ইঞ্জিনের সরকার বাংলাভাষী পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে নির্বিচারে অপমান, হেনস্তা ও নির্যাতন করে গেলেও এমনকি তাদের অনেককে অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি ছাপ লাগিয়ে সীমান্তের ওপারে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলেও টু শব্দটিও উচ্চারণ করেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি এখন প্রাক নির্বাচনী সফরে প‍‌শ্চিমবঙ্গে এসে বাঙালি অস্মিতার বাণী বিতরণ করছেন। উচ্চাঙ্গে রসিকতা সম্ভবত একেই বলে। গুজরাটি অস্মিতা যে তাঁর অস্থি-মজ্জায় মিশে আছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তার নমুনা তিনি নিত্যই হাজির করে থাকেন। কিন্তু বাঙালি অস্মিতার কথা এর আগে তাঁর মুখে কেউ কোনোদিন শুনেছেন বলে মনে হয় না। তিনি আসলে ক্ষমতার কাঙাল, আধিপত্যের কাঙাল। বাংলায় তাঁর ডাবল ইঞ্জিন চাই। তাই তি‍‌নি আত্মমর্যাদার মাথা খেয়ে বাঙালি প্রেমের মুখোশ পরেছেন।
এর আগে অনেক বার বাংলায় এসেছেন, অনেক ভাষণ দিয়েছেন প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে দেখা গেছে লবডঙ্কা। তিনি ভুলে যান, তিনি নিছক নরেন্দ্র মোদী নন, তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তাই তাঁর কথার ধার ও ভার থাকা দরকার। গল্পের গোরু রচনা তাঁর কাজ নয়। অক্লেশে এবং নিঃসঙ্কোচে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন সেগুলি কোনোদিন পূরণ হবে না জেনেও। তাদের ব্র্যান্ডেড স্লোগান ‘জয় শ্রীরাম’ ১১ বছর ধরে বহু উচ্চারিত হয়েছে। কিন্তু বাংলায় কদর পায়নি। রাম বা হনুমানের প্রসার হয়নি এরাজ্যে। রাম নবমীর নামে অনেক উগ্রতা ও হিংস্রতার প্রদর্শন করেও বাঙালির মন গলানো যায়নি। তাই এবার তিনি মা কালীর এবং মা দুর্গার শরণাপন্ন হয়েছেন। রবীন্দ্র-নজরুল, বিদ্যাসাগর, রামমোহনরা তো আরএসএস’র চোখের বিষ। বিবেকানন্দকেও সহ্য করতে পারে না। তাই ভুলেও উচ্চারণ করেন না। এবার তিনি খুঁজে পেতে উচ্চারণ করেছেন কাদম্বরী গাঙ্গুলির নাম। তেমনি রাজ্যে আসার আগে বাংলা ভাষায় সোশাল মিডিয়ায় বার্তা দিয়েছেন।
বাংলার প্রতি যদি এতই ভালোবাসা তাহলে বাঙালিদের নানাভাবে হেনস্তা করে তাদের শাসিত রাজ্য থেকে তাড়ানোর সময় মৌন থাকেন কেন? নাকি সেটাই আসল উদ্দেশ্য। বাংলায় শিল্পের পুনর্জাগরণ ঘটাবেন বলেছেন। সত্যিই তেমন বাসনা থাকত তাহলে ১১ বছরে একটার পর একটা কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বন্ধ করা হতো না। তিনি তৃণমূলের দুর্নীতি, রাজ্যে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। আবার বলেছেন তাঁরা ক্ষমতায় এলে সব বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু যারা দুর্নীতি করছে খুন, ধর্ষণ করছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তে লিপ্ত তাঁরই অধীনস্ত সিবিআই-ইডি। দুনিয়া জানে সেই কেন্দ্রীয় সংস্থার অপদার্থতার জন্য কোনও দুর্নীতিবাজ, ধর্ষক সাজা পায় না। তৃণমূলী দুষ্কৃতীদের রক্ষা করে যায় প্রধানমন্ত্রীর অধীন সংস্থা। তৃণমূল যদি দুর্নীতি ও অপরাধ চক্রে আধার হয় তবে বিজেপি তাদের বিশ্বস্ত সহায়ক। সারদা, নারদ, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি আর জি কর থেকে শুরু করে কোথাও মোদীর সংস্থা ন্যায় বিচারের ব্যবস্থা করতে পারেনি। তারপর তিনি ন্যায়ের কথা বিকা‍‌শের কথা বলেন কোন মুখে। গুজরাট, রাজস্থান, দিল্লি, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, ছত্তিশগড়, আসাম, ওডিশা সহ যেখানেই ডাবল ইঞ্জিন সেখানে বাঙালির অপমান, বাংলা ভাষার অপমান। মোদী আগে তার জন্য বাঙালির কাছে ক্ষমা চান। তারপর মুচলেকা দিয়ে বাঙালি অস্মিতার কথা বলছেন।
 

Comments :0

Login to leave a comment