যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্টুডেন্টস এগেনস্ট ফ্যাসিজম’-র পক্ষ থেকে সোমবার পুলওয়ামায় নিহত জওয়ানদের স্মরণে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ২০১৯ সালে ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামাতে বিশাল এক মিলিটারি কনভয়ের উপর সন্ত্রাসবাদী হামলায় ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ান নিহত হন। এই ৪০ জনের একজন ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বাবলু সাঁতরা। নিহত জওয়ান বাবলু সাঁতরার পরিবারকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় এদিন।
বাবলু সাঁতরার ছোট ভাই সেদিনের ঘটনা ও তাঁদের অসহায়তার কথা বর্ণনা করেন। অনুষ্ঠানে অংশ নেন সেনার প্রাক্তন কর্নেল পদমর্যাদার আধিকারিক রাজেন্দ্র ভাদুড়ির অভিজ্ঞতা। ছাত্ররা তাঁকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। তিনি উত্তরও দেন।
কিছু প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।
ছাত্র: পুলওয়ামাতে এত বড় কনভয় আক্রান্ত হল, এত বড় কনভয় কি সাধারণত রাস্তা দিয়ে যায়?
কর্নেল: না সাধারণত এত বড় কনভয় রাস্তা দিয়ে যায় না, যতটা পারা যায় ফ্লাইটে যায়।
ছাত্র: তারা কি এয়ার লিফ্টিং চেয়েছিল?
কর্ণেল: এয়ার লিফ্টিং চাওয়াটা স্বাভাবিক, সেটা চেয়েছিল কিনা সেটা বলতে পারব না, তবে বিভিন্ন রিপোর্টে বেরিয়েছে যে তারা এয়ার লিফ্টিং চেয়েছিল, কিন্তু তাদের সেটা দেওয়া হয়নি। সেদিনের জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যপাল সতপাল মালিকও বলেছেন যে তাদের ফ্লাইটে নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল, তাকে বললেও তিনি ফ্লাইটের ব্যবস্থা করতে পারতেন।
ছাত্র: কেউ কিছু জানল না, এটা কি ইনটেলিজেন্স ব্যর্থতা নয়?
কর্ণেল: অবশ্যই ব্যর্থতা। তবে বিভিন্ন মিডিয়ায় রিপোর্ট বেরিয়েছে যে ইনটেলিজেন্স এইরকম বিভিন্ন সম্ভাব্য আক্রমনের কথা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছিল। কিন্তু যাঁদের সেটা দেখার কথা সেটা তারা দেখেনি।
ছাত্র: শুনেছি, মিলিটারি কনভয় যাওয়ার আগে রাস্তাকে পরীক্ষা করা হয়,সেটা হয়েছিল?
কর্ণেল: এটাকে বলে রোড ওপেনিং পেট্রল। কনভয়ের পুরো রাস্তায় আগে গাড়ি চালিয়ে পরীক্ষা করা হয়, দেখা হয় যে সব রাস্তা ওখানে মিশেছে সেগুলি সিল করা আছে কিনা, তারপরে কনভয় যাওয়ার সিগনাল দেওয়া হয়। এখানে এই কাজটা করা হয়নি।
ছাত্র: পুরো যে ঘটনা ঘটল, তার কদিন বাদেই ছিল নির্বাচন, তাতে দেখা গেল শাসক দলের পরবর্তী নির্বাচনে লাভ হল, এটা কি তাহলে শাসক দলের এক চক্রান্ত বলবেন?
কর্ণেল: আমি কার্গিলের যুদ্ধে ছিলাম, সেখানেও এরকম নানা প্রশাসনিক ব্যর্থতার কথা উঠেছিল। সেখানেও কদিন বাদে নির্বাচনে শাসক দলের ব্যাপক লাভ হয়েছিল। প্রশাসনিক ব্যর্থতা ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত হোক, শাসক দল দুই ক্ষেত্রেই সুযোগ নিয়েছিল।
ছাত্র: পুলওয়ামা ঘটে যাওয়ার ১২ দিন বাদে আমরা পাকিস্তানে বালাকোটে আক্রমন করলাম। এতে আমরা শুনেছি পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদীদের ঘাটিতে আক্রমন হয়ে প্রচুর সন্ত্রাসবাদী নিহত হয়েছে।
কর্নেল: দেখুন, এয়ারফোর্স বা মিলিটারিদের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কিছু বলেনি। একটা আক্রমণের পর বিপক্ষের ক্ষয়ক্ষতি সম্বন্ধে মূল্যায়ন করা হয় সামরিক বাহিনির পক্ষ থেকে, এখানে সেটা হয়েছে বলে জানা নেই, হলেও তারা সেটা জানায়নি।আর এত সন্ত্রাসবাদী সেদিন নিহত হলেও সন্ত্রাসবাদী কাজ কিন্তু কমেনি।
ছাত্র: যেদিন বালাকোট আক্রমণ হল সেদিন আকাশ মেঘলা ছিল, এই আবহাওয়ায় আক্রমণ করা কি সঙ্গত?
কর্ণেল: না সঙ্গত নয়, লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
ছাত্র: কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বলেছেন মেঘলা আকাশেই আক্রমণ করা ঠিক, কারণ রাডার ধরতে পারবে না, রাডার কি সত্যি ধরতে পারে না মেঘলা আকাশে?
কর্নেল: এটা হাস্যকর কথা। মেঘ থাকলেও রাডার ধরতে পারে।
ছাত্র: পরের দিনই পাকিস্তান আমাদের আক্রমন করল, কি বলবেন?
কর্ণেলঃ আমাদের কথা অনুযায়ী আমরা আক্রমণ করেছিলাম সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিতে, সেটাকে যুদ্ধ বলে না। আর পাকিস্তান আক্রমন করেছিল আমাদের মিলিটারি বেসে, এর মানে যুদ্ধ ঘোষণা। অথচ আমরা কিছু করলাম না।
ছাত্র: বালাকোটে আমাদের কী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল?
কর্নেল: আমরা হারিয়েছি একটা মিগ বিমান, আমাদের একজন (অভিনন্দন) যুদ্ধবন্দী হয়েছে, আমরা নিজেরাই নিজেদের হেলিকপ্টার ভুল করে গুলি করেছি, তাতে আমাদের ৬ জন মারা গেছে। পাকিস্তানের কিছুই করতে পারিনি।
ছাত্র: কিন্তু আমরা শুনেছিলাম, আমরা পাকিস্তানের একটা এফ১৬ গুলি করে নামিয়েছি।
কর্ণেল: আমরা এটা প্রমান করতে পারিনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে এফ১৬ দিয়েছিল, ওদের একটা শর্ত ছিল যে ওরা যত এফ১৬ নিয়েছে, সেই হিসেব রাখতে হবে এবং ওদের জানাতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে যে কোন এফ১৬ ধ্বংস হয়নি। পাকিস্তানও বলছে যে ওরা আরেকটা ভারতের বিমান গুলি করে নামিয়েছে, যেটা ওরা প্রমাণ করতে পারবে না।
Comments :0