অরিজিৎ মণ্ডল
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভেতরেই ধর্ষণ করে খুন চিকিৎসক ছাত্রীকে। রাজ্য কেবল নয়, তোলপাড় হয়েছিল দেশ, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে হয়েছিল প্রতিবাদ। সহকর্মী চিকিৎসকরা আজও বলছেন প্রাতিষ্ঠানিক খুন। বলছে সামাজিক আন্দোলন। অথচ তদন্তে দোষী বলা হলো, শাস্তিও হলো একজনের। সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায় কেবল সাজাপ্রাপ্ত। অপরাধের মাথাদের কারও শাস্তি হয়নি।
রাজ্যের পুলিশ আর কেন্দ্রের সিবিআই’র চালানো তদন্তের নামে প্রহসনের বিরুদ্ধে ঘটনার ঠিক এক বছরের মাথায় ফের রাস্তায় রাস্তায় বিক্ষোভ। এসএফআই, ডিওয়াইএফআই, সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি কলকাতায় মিছিল করেছে কলেজ স্ট্রিট থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত।
মিছিলেই মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদক কনীনিকা ঘোষ বলেছেন, ‘‘বিচার ছিনিয়ে আনতে অনেক সময়েই রাস্তায় বারবার নামতে হয় জনতাকে। বিশ্বজুড়ে এমন বহু নজির আছে। বিচার না পাওয়া পর্যন্ত চলবে আন্দোলন।’’
এসএফআই রাজ্য সভাপতি প্রণয় কার্য্যী বলেছেন, ‘‘কোনও কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করতে দেয় না সরকার। তৃণমূলের দুর্নীতি-দুষ্কৃতী রাজ চলছে সর্বত্র। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ধর্ষণ-খুনের পর সেই ‘থ্রেট কালচার’ কাঠগড়ায় উঠেছে।’’
ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক ধ্রুবজ্যোতি সাহা বলেছেন, ‘‘রাজ্যের সরকার অপরাধীদের আড়াল করেছে আর প্রতিবাদীদের নামে মামলা করেছে। পুলিশ পাঠিয়েছে। তার বিরুদ্ধে আন্দোলন জারি থাকবে। তৃণমূল সরকারের এক মুহূর্ত শাসন চালানোর অধিকার নেই। ন্যায় বিচার পেতে হলে এই সরকারকে হটাতে হবে।’’
শনিবার, ৯ আগস্ট, ‘কালীঘাট চলো’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে নাগরিকদের ‘অভয়া মঞ্চ’। সেই কর্মসূচি আটকাতে ব্যবসায়ীদের দিয়ে মামলা করানো হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। এদিন আদালত জমায়েত কর্মসূচিতে হস্তক্ষেপ করেনি। আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন যে জমায়েতে বাধা দেয়নি হাইকোর্ট। আইন অমান্য হলে পুলিশ পুলিশের দায়িত্ব পালন করবে।
আন্দোলনে শামিল জুনিয়র চিকিৎসক মঞ্চ ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট, শামিল চিকিৎসক সংগঠন সমূহের মঞ্চ জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টর্স। বিচারহীন এক বছর, বিচার চাই- এই দাবিতে রাস্তায় শামিল এমন বহু অংশই। (জুনিয়র চিকিৎসক আন্দোলনের মুখ আসফাকুল্লা নাইয়া কী বলছেন দেখুন এই লিঙ্কে ক্লিক করে)
প্রশ্ন উঠেছে তদন্ত প্রক্রিয়ায়। শিয়ালদহ আদালতে হয়েছে বিচার। সেখানেই বিচারপতি একের পর এক প্রশ্নে বিদ্ধ করেন সিবিআই এবং কলকাতা পুলিশকে। প্রতিবাদীরা প্রশ্ন তুলছেন, বাবা-মা’কে হাসপাতাল থেকে অনেক পরে খবর দেওয়া হলো। বলা হলো আত্মহত্যা। কেন?
পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে দেখা গিয়েছিল ভয়াবহ নির্যাতনের চিহ্ন। কোনও একজনের পক্ষে তা সম্ভব নয়। তা’হলে কেবল একজনকেই দোষী করা হলো না কেন?
প্রথম চার্জশিটে সিবিআই বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের তথ্য জানিয়েছিল। প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ তোলা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টে বলেছিল যে খুনের ঘটনাস্থল বদলানো হয়েছে। অর্থাৎ যেখানে দেহ মিলেছে সেখানেই খুন না-ও হয়ে থাকতে পারে। প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার ওসি-কে গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল। তা’হলে কোন বোঝাপড়ায় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে এদের দু’জনের কারও নাম রাখা হলো না। ফলে বিচার পায়নি ‘অভয়া’। ফলে চলবে বিচারের দাবিতে লড়াই।
শুক্রবার রাজ্যজুড়ে চলেছে মিছিল। শনিবারও চলবে অবস্থান।
Comments :0