CPIM Rally in Sandeshkhali

সন্দেশখালির পাশে আছি বার্তা দিলেন সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ

রাজ্য জেলা

প্রবীর দাস- সন্দেশখালি

তেভাগার মাটি শেখ শাহজাহান, শিবু হাজরা, উত্তম সর্দারের মতো দুর্বৃত্তদের নয়। তেভাগার মাটি খেটে খাওয়া গরীব মেহনতি মানুষের মাটি। বুক ঠুকে বললেন আমাদের মাটি। সোমবার সন্দেশখালি থানার অদূরে সভাস্থলে বসে দীপ্ত কন্ঠে এ কথা জানিয়ে দিলেন নতুন পাড়ার আরতি সর্দার, মাঝেরপাড়া উর্মিলা সরকার ,পাত্রপাড়ার সুমিত্রা পাত্ররা। লালঝান্ডা জমির পাট্টা, বর্গা দিয়েছিল। কর্ণখালি, পেত্নীঘোলা, ঝুপখালি, কাছারিপাড়া, হালদারপাড়া, লস্করপাড়া জানিয়ে দিল জমি আর লুট করতে দেব না। ধানের জমিতে নোনা জল ঢোকাতে দেব না। গতরে খাটবো কিন্তু গতর লুটতে দেব না। বসন্তের তপ্ত দুপুরে সন্দেশখালির অহল্যা, মাতঙ্গিনীদের গলা থেকে ঝরে পড়লো জেদি মনোভাব। কী সেই মনোভাব? বললেন সন্দেশখালির নোনা মাটিকে লালমাটিতে পরিণত করতে যে লড়াই শুরু করেছি শেষতক সে লড়াই চলবে। সেই লড়াইকে সংহতি জানিয়ে সোমবার সন্দেশখালির জনসভা থেকে পাশে আছি পাশে থাকার বার্তা দিলেন সিপিআই(এম) নেতা সুজন চক্রবর্তী, দেবলীনা হেমব্রম, মৃণাল চক্রবর্তী, নিরাপদ সর্দার, বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, রঞ্জিত নাথ, সুভাষ সর্দাররা। সভাপতিত্ব করেন প্রাক্তন জেলা পরিষদ সদস্য রেনুকা সর্দার। 

সিপিআই(এম) করার অপরাধে অত্যাচারের মাত্রার তীব্রতা কতটা হতে পারে সদ্য স্বামী হারোনো ভারতী সিং তাঁর বিস্তারিত তুলে ধরে সভায় আসা মানুষের উদ্দেশ্যে বলেন, হাল ছাড়িনি হাল ছাড়বো না। যতক্ষন দেহে আছে প্রাণ আর বিসর্জন দেব না আত্মসম্মান।
একতাই মূল মন্ত্র। দেখিয়ে দিয়েছে সন্দেশখালির মা বোনেরা। তাদের হক ছিনিয়ে নিতে হাতে লাঠি, ঝাটা পুলিশের নাকের ডগায় রেখে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিল এতদিন আইন কোথায় ছিল? যখন রাতের অন্ধকারে পিঠে বানানোর নাম করে আমাদের গতর নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছিল শিবু উত্তমরা। তখন তোমরা কোথায় ছিলে? এই প্রশ্ন গত ৩১ জানুয়ারি তুলেছিল সন্দেশখালি। সেই প্রশ্নের অনুরনন শোনা গেল এদিনের সভাস্থল থেকে। যেমন তুললেন নেতৃবৃন্দ। তেমনি তুললেন সভায় আসা নির্যাতিতারা। ব্রিগেডে তৃণমূলের জনগর্জনসভাকে এদিন ছাপিয়ে গেল সন্দেশখালির সভায় আসা মানুষের গর্জন। কখনো মিছিল থেকে কখনো সভাস্থল থেকে মূহূর্মূহূ আওয়াজ ওঠে লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করেই বাঁচতে চাই।


পার্টির রাজ্য কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজ্য জুড়ে ১১টি সভার একটি সভা সোমবার হয় সন্দেশখালিতে। সভা শুরুর প্রাক মূহুর্তে ভোলাখালি ফেরিঘাট, সন্দেশখালি ফেরিঘাট, খুলনা ফেরিঘাট থেকে মিছিল আসে সামাজিক শিক্ষা কেন্দ্র ময়দানে। মিছিলে নেতৃত্ব দেন রাজ্য ও জেলা নেতৃবৃন্দ। 
গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন অসীম ব্যানার্জি, বাপ্পাদিত্য চক্রবর্তী, সুজিত চক্রবর্তী, রাহুল ভট্টাচার্য। সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, তেভাগার পূণ্যভূমিতে মা বোনদের চোখের জল ফেলেছে তৃণমূল। তারা সন্দেশখালির মাটিতে পাট্টা বর্গার অতীত ইতিহাস তুলে ধরেন। তুলে ধরেন হেমন্ত ঘোষাল, ক্ষুদিরাম ভট্টাচার্যদের কৃষক আন্দোলনের কথা। প্রাকৃতিক বিপর্যয় সহ নানা প্রতিবন্ধকতার মোকাবিলা করে মানুষ তার জীবনজীবিকা গড়ে তুলেছিল। বামফ্রন্টের সময়ে সাফল্যগুলি তুলে ধরে নেতৃবৃন্দ প্রশ্ন তোলেন কেন শান্তির সন্দেশখালিতে অশান্তির আগুন জ্বললো। শিবু হাজরার করা এফআইআর-এ নাম ছিল না বিজেপি নেতা বিকাশ সিংহের। কার নির্দেশে কেন তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলো? আসলে সন্দেশখালির মাটিতে পদ্ম ফোটাতে মমতা ব্যানার্জি এই কাজটি করলেন। কেন করলেন? বিভাজন। হিন্দু মুসলিমদের মধ্যে ভাগ করে দাও। সন্দেশখালিতে হক আদায় করতে মা বোনেরা যে লড়াই শুরু করেছেন তাকে ভেঙে দিতে শুভেন্দু অধিকারীকে মমতা ব্যানার্জি সন্দেশখালিতে ঢোকার সুযোগ করেদিলেন। এই বিভাজনের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই। পরবর্তী প্রজন্মকে বাঁচানোর লড়াই। মোদী মমতাকে বিশ্বাস করে মানুষ ডবল ঠকা ঠকে গিয়েছে। মোদী-মমতা গ্যারান্টি দিতে পারবেন না। গ্যারান্টি দিতে পারে লালঝান্ডা। মানুষ তার অভিজ্ঞতায় মিলিয়ে নিতে শুরু করেছেন। নেতৃবৃন্দ বলেন সামনে বড় লড়াই। লোকসভার নির্বাচন। দেশ বাঁচানোর লড়াই। তিলতিল করে গড়ে তোলা রাজ্যটাকে বাঁচানোর লড়াই। এই লড়াইয়ে জিততে হবে। সন্দেশখালির মা বোনেরা সেই পথ সূচিত করেছে। ঝপাং ঝপাং শুরু হয়েছে। তৃণমূল ৪২জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। যার মধ্যে ৫জন আসলে বিজেপির। ২জন সাংসদ আছেন। আছেন ৩ জন বিধায়ক। এই সেটিং ভেঙে দিতে হবে। সভায় আসা মানুষের উদ্দেশ্যে নেতৃবৃন্দ বলেন মনে রাখবেন আগাছা থাকলে গরু আসবে। আমাদের কাজ আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। তৃণমূল বিজেপিকে ঠেকাতে পারে না। পারে একমাত্র লালঝান্ডা। অনেক অন্যায় অত্যাচার সহ্য করেছেন। আর না। ঘট সহ ঠাকুর বিসর্জনের প্রস্তুতি নিন। বুথে বুথে তুলুন সেই আওয়াজ।

Comments :0

Login to leave a comment