তিন দফায় জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ২৪ আসনে ভোট গ্রহণ হচ্ছে বুধবার। জাতীয় দল হিসাবে বিজেপি এবং কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা ইতিমধ্যেই প্রচারে অংশ নিয়েছেন। প্রধান রাজ্য দল হিসাবে পিডিপি এবং ন্যাশনাল কনফারেন্সও জোরদার প্রচার চালাচ্ছে। এছাড়া আছে বহু ছোট ছোট আঞ্চলিক দল এবং বিপুল সংখ্যক নির্দল প্রার্থী। মূল প্রতিদ্বন্দ্বীদের বাইরে এত বেশি প্রার্থী অতীতে বিশেষ দেখা যায়নি। ২৪টি আসনে প্রার্থী সংখ্যা প্রায় হাজারের কাছাকাছি। এটা ঠিক তুলনামূলকভাবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং ভোটে মানুষের উৎসাহ প্রার্থীরা সংখ্যা বৃদ্ধির একটা কারণ হতে পারে। কিন্তু প্রধান কারণ নয়। এর পেছনে বৃহত্তর রাজনৈতিক হিসাব নিকাশ।
প্রচারে গিয়ে তাৎপর্যপূর্ণভাবে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ জম্মু পেরিয়ে কাশ্মীরে পা রাখেননি। অবশ্য কাশ্মীরে তাদের কোনও প্রার্থীও। উপত্যকায় জেতার ন্যূনতম সম্ভাবনাও না থাকায় বিজেপি শুধু জম্মু অঞ্চলেই প্রার্থী দিয়েছে। প্রচারে গিয়ে মোদী বলেছেন কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদীরা শেষ নিঃশ্বাস ফেলছে। আর শাহ বললেন জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদকে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে। ৩৭০ ধারা আর সন্ত্রাসবাদ কোনোদিন ফিরে আসবে না। অবশ্য মোদীর ভাষণের ২৪ ঘণ্টা আগে তাঁর সভার কাছেই জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষে দুই জওয়ান প্রাণ হারায়। আরও ২জন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। গত দু’মাসে জঙ্গি হামলায় সামরিক অসামরিক মিলিয়ে এক ডজনের বেশি মৃত্যু হয়েছে। বোঝা যাচ্ছে শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতেও জঙ্গি জওয়ানদের মারতে সক্ষম। মাটিতে পুঁতে ফেলার পরও তারা গুলি চালাতে পারে। অমিত শাহ এটাও বলেছেন মোদী যতদিন ক্ষমতায় থাকবেন দেশে কোথাও সন্ত্রাসবাদীরা মাথা তুলতে পারবে না। ভাষণ দেবার সময় দু’জনেরই মণিপুরের কথা সম্ভবত মনে ছিল না। মণিপুর তো শান্ত-স্বাভাবিকই ছিল। মোদী জমানায় ডাবল ইঞ্জিনের গুঁতোয় অশান্ত হয়ে জাতি দাঙ্গার মধ্য দিয়ে এখন সন্ত্রাসবাদের দিকে বাঁক নিচ্ছে। অর্থাৎ মোদী থকলে থাকলে একটি শান্তিপূর্ণ রাজ্যে সন্ত্রাসবাদের ঘাঁটি হয়ে ওঠার আশঙ্কা থাকে।
বাস্তবের মাটির সঙ্গে যার কোনও মিল নেই সেসব নিয়ে লম্বা চওড়া ভাষণ না দেওয়াই ভালো। অনর্থক হাসির খোরাক হয়ে যায়। মনে রাখতে হবে ক্ষমতায় আসার পর কাশ্মীরে কার্যত সেনা শাসন চালু করে দমন-পীড়ন, অত্যাচার, নৃশংতার, বর্বরতা বুলডোজার চালানো হলেও সন্ত্রাসবাদ দমন করা যায়নি। সন্ত্রাসবাদীদের তৎপরতা বা সক্রিয়তা সাময়িকভাবে কোথাও কোথাও কমেছে ঠিকই কিন্তু তা নির্মূল হয়ে গেছে বলা যাবে না। বরং বলা যাবে তা প্রসারিত হয়েছে। আগে কাশ্মীর অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন ছড়িয়েছে জম্মু সেক্টরে। গত কয়েক বছর ধরে জম্মু এলাকা সন্ত্রাসবাদীদের নতুন ঘাঁটি হয়ে উঠেছে। তাই সন্ত্রাসবাদ শেষ নিঃশ্বাস ফেলছে বলা যাবে না। বরং জোরে জোরেই ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে।
আরএসএস-বিজেপি’র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির স্বার্থে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে থাকা জরুরি। বস্তুত সেই ২০১৪ সাল থেকেই কাশ্মীর শাসন করছে তারা। প্রথমে পিডিপি’র সঙ্গে জোট সরকার গড়ে। তারপর রাজ্যকে ভেঙে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করে। এখন নির্বাচন করতে হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের চাপে। এটা ঠিক ভোটে জিতে এককভাবে কাশ্মীরে সরকার গড়া বিজেপি’র পক্ষে অসম্ভব। তাই নানা কৌশলে নানা ছক কষে যেভাবেই হোক ক্ষমতা হাতে রাখার চেষ্টা করছে। বিজেপি’র শক্তি জম্মুতে সীমাবদ্ধ। সেখানে যথাসম্ভব বেশি আসন জেতার চেষ্টা চলছে। কাশ্মীরে তারা কোনও প্রার্থী দেয়নি। তবে তিন দশক ধরে নিষিদ্ধ জামাত-ই-ইসলামি রশ্মি ইঞ্জিনিয়ারের আওয়ামি ইত্তেহাদ পার্টি, আপনা পার্টি সহ বিভিন্ন স্থানীয় দল ও নির্দলদের নানাভাবে মদত জোগাচ্ছে বিজেপি। লক্ষ্য কাশ্মীরে ভোট ভাগ করে কংগ্রেস-এনসিপি জোট প্রার্থীদের জয়ের রাস্তা দুর্গম করা। বিজেপি চায় ছোট ছোট দল ও নির্দল প্রার্থীদের যথাসম্ভব জিতিয়ে আনতে। অতঃপর তাদের সমর্থন দিয়ে ক্ষমতা দখল করবে। সন্ত্রাসবাদের মদতদাতা রশিদকে কয়েকদিনের জন্য জামিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে ভোটে প্রচারের জন্য। রশিদ আবার জোট বেঁধেছে জামাতের সঙ্গে। পেছনে আসল কারিগর বিজেপি। কাশ্মীরকে নতুন করে বিপজ্জনক দিকে ঠেলে দেবার চেষ্টা চলছে।
Kashmir Election
কাশ্মীরে শাসকের বিপজ্জনক খেলা
×
Comments :0