interest rates to going down

সরকার চায় তাই সুদের হার কমবে?

সম্পাদকীয় বিভাগ

দেশের অর্থনীতির বর্তমান দুরবস্থার জন্য বিশেষ করে চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২৪) জিডিপি বৃদ্ধির হার গত দু’বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ৫-৪ শতাং‍‌শে নেমে যাবার যাবতীয় দায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঘাড়ে চাপিয়ে নিজের হাত ধুয়ে ফেলতে চা‍‌ইছেন অর্থ মন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের মাসিক রিপোর্টে সেই দিকেই সরাসরি ইঙ্গিত করা হয়েছে। সরাসরিই বলা হয়েছে শহরাঞ্চলে চাহিদা হ্রাস এবং বিনিয়োগে নিরুৎসাহের মূলে রয়েছে উচ্চ সুদের হার। গত ২২মাস ধরে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের ৬.৫ শতাংশে স্থির রেখেছে। কর্পোরেট মহল এমনকি সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে ক্রমাগত চাপ দেওয়া সত্ত্বেও শক্তিকান্ত দাসের নেতৃত্বে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তাদের অবস্থান বদলায়নি। উচ্চ মূল্যবৃদ্ধির হারের কারণে তারা সুদের হার কমানোর কোনও ঝুঁকি নেয়নি। কারণ তাতে বাজারে সস্তার নগদের জোগান বেড়ে গিয়ে মূল্যবৃদ্ধির হার আরও বেড়ে যাবার আশঙ্কা আছে। সেক্ষেত্রে বাজারে চাহিদার অনটন আরও বেড়ে যাবে। আখেরে অর্থনীতির গতি আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।
বিশ্বের সব দেশেরই কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি সুদের হার নির্ধারণে অন্যান্য অনেক বিষয়ের সঙ্গে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয় মূল্যবৃদ্ধির হারকে। ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্কও সেই পথেরই অনুসারী। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারতের বর্তমান শাসক অর্থনীতির এই তত্ত্বগত ও পরীক্ষিত ধারণাকে মেনে চলতে রাজি নয়। তারা কোনও মতেই চায় না রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার নির্ধারণে মূল্যবৃদ্ধিকে এত বেশি গুরুত্ব দিক। বরং মোদী সরকার চায় দেশের কর্পোরেট মহলের চাহিদা অনুযায়ী সুদের হার যতটা সম্ভব কম রাখার চেষ্টা করুক রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কর্পোরেট চায় অতি সস্তায় অঢেল ব্যাঙ্ক ঋণ পেতে। সেই সস্তার পুঁজি বিনিয়োগ করে বা অন্যভাবে সরিয়ে মোটা মুনাফা করতে। তেমন হলে সরকারে পের চাপ দিয়ে ঋণ মকুব করিয়ে সবটাই হজম করতে।
এই জায়গাতেই মোদী সরকারে দ্বন্দ্ব সেই গোড়া থেকে। মোদী যখন ক্ষমতায় আসেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর ছিলেন রঘুরাম রাজন। সুদের কমানোর প্রশ্নে বিরোধ বাধে রাজনের সঙ্গে। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রাজনৈতিক চাপের কাছে অর্থনীতির জ্ঞান বিসর্জন দিতে চাননি বলে তাঁকে সরে যেতে হয়। সেই জায়গায় আনা মোদীর পছন্দের অর্থনীতিবিদ উর্জিত প্যাটেলকে। নোট বাতিল প্রশ্নে রঘুরাম রাজনের মতো ঘোরতর আপত্তি ছিল উর্জিত প্যাটেলেরও। তাছাড়া সুদের হার নিয়ে দ্বন্দ্ব তো ছিলই।
আসলে প্রথাগত অর্থনীতির বিশেষজ্ঞরা সবসময়ই চেষ্টা করেন দেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতার নিরিখে দেশের ও মানুষের স্বার্থকে পুরোপুরি জলাঞ্জলি দিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক পরিচালনা করতে চান না। অর্থনীতির বিজ্ঞানকে অস্বীকার করে কর্পোরেটের স্বার্থে এক পেশে সিদ্ধান্ত নেওয়া তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। অথচ মোদী সরকার সেটাই চায়। অর্থনীতি চুলোয় যাক, তাদের কাছে কর্পোরেট স্বার্থই আগে। ফলে উর্জিতকেও বিদায় নিতে হয়। তারপর মোদীরা অর্থনীতিবিদকে গভর্নর করার পথে হাঁটেনি। ইতিহাসের এমএ এক আমলা শক্তিকান্ত দাসকে গভর্নর করা হয়। মোদীর কাছের মানুষ শক্তিকান্তও শেষ পর্যন্ত মোদীদের মন জুগিয়ে চলতে পারেননি। তাই তাকে সরিয়ে আনা হয় আর এক আমলা সঞ্জয় মালহোত্রাকে। মোদীরা এবার নিশ্চিত ফেব্রুয়ারি মাসে সুদের হার কমবেই।

Comments :0

Login to leave a comment