Mamata Banerjee

বর্ধমানে আত্মপ্রশংসায় মুখর মুখ্যমন্ত্রী

রাজ্য জেলা

ক্যাপসন— মুখ্যমন্ত্রীর সভা শেষে বৃষ্টি ও ঠান্ডার মধ্যে চরম কষ্ট পেয়ে বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় ছাত্র ছাত্রীরা।

বুধবার যখন মুখ্যমন্ত্রী গোদায় প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিয়ে তার গর্বের কন্যাশ্রী ও লক্ষ্মীর ভান্ডার সহ একগুচ্ছ প্রকল্পের জন্য সরকারের তারিফ করছেন তার একেবারে কাছে মঙ্গলবার এক কন্যার উপর যৌন নির্যাতনের জন্য মা-বাবা ডুগরে ডুগরে কাঁদছেন। বর্ধমান সদর থানা এলাকায় ৫ বছরের শিশু কন্যার উপর জঘন্যভাবে যৌন নির্যাতন করে তৃণমূল কর্মী রফিক শেখ। বিকাল সাড়ে পাঁচটার ঘটনা, পুলিশ আসে রাত দশটা নাগাদ কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী আসবেন তাই পুলিশ বিষয়টিকে ধামাচাপা দেবার চেষ্টা করেছে। তৃণমূলের মাতব্বর’রা বাড়িতে এসে শাসিয়ে গেছে গ্রামে শালিসী সভা ডেকে তারা মিটিয়ে দেবে, পুলিশ ডাকার প্রয়োজন নেই। শুধু এই একটি ঘটনা নয় ২০১৩ সালে ১২ ক্লাসের এক স্কুল ছাত্রীকে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা দলবেঁধে ধর্ষণ করে খুন করে। মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া সবুজ সাথী’র সাইকেল চালিয়ে রাতে টিউশন পড়ে বাড়ি ফিরছিল এই স্কুল ছাত্রী। কন্যাশ্রী বা সবুজ সাথী মুখ্যমন্ত্রীর ভাষায় যাই হোক সেই ধর্ষিতার পরিবার আজও বিচার পায়নি। তাঁর বাবা-মা চোখের জলে এখনো আর্তনাদ করেন। অপরাধীরা সকলেই তৃণমূলের কর্মী তাই পুলিশের মদতে ধর্ষকরা বেকসুর খালাস পেয়ে যায়। মুখ্যমন্ত্রীর সভাস্থল থেকে কিছুটা দূরের ঘটনা স্থানীয় মানুষকে ‘কন্যাশ্রী’রা এই রাজ্যে কতটা নিরাপদ তা ফের স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। 
এদিন মুখ্যমন্ত্রী কলকাতা থেকে হেলিকপ্টার চড়ে গোদায় প্রশাসনিক সভায় যোগ দিতে আসেন কিন্তু আবহাওয়া খারাপ থাকায় সড়ক পথেই সভা শেষে তাঁকে ফিরতে হয়েছে। ফেরার সময় গাড়িতে সামান্য আঘাত পান কিন্তু কলকাতায় ফিরে গেছেন নির্বিঘ্নে সে খবরও পাওয়া গেছে। এদিন মুখ্যমন্ত্রী সভা ভরাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশ পাঠানো হয় প্রত্যেক স্কুল থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যা ধার্য্য করে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠাতে হবে। ফলে শহরের সমস্ত স্কুলে পঠন-পাঠনে ব্যাঘাত ঘটে। অনেক স্কুলে এদিন মাধ্যমিকে পরীক্ষার এডমিড কার্ড দেবার কথা ছিল কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সভায় যোগ দেবার ফরমান পেয়ে স্কুলগুলি এডমিড কার্ড দেবার কাজ পিছিয়ে দেয়। মুখ্যমন্ত্রীর সভা সরকারী পরিষেবা প্রদানের অনুষ্ঠান হলেও কার্যত তা রাজনৈতিকসভাতে পরিণত হয়। সভা চলাকালীন শুরু হয় বৃষ্টি বিশাল তাঁবু খাটানো’র খরচ প্রশাসনিক হলেও সেখানে একাধিক স্টেজ তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে মূল মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী কচুরিপানা থেকে হস্তশিল্প সহ একাধিক বেনিফিসিয়ারিদের হাতে প্রকল্পের অর্থ তুলে দেন। তিনি এদিন পূর্ব ও পশ্চিম দুই জেলার ১০৮২টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন, শিলান্যাস করেন ৫৪৪টি প্রকল্পের। দীর্ঘ উন্নয়নের ফর্দ যখন তিনি পড়ছিলেন তার স্রোতা ছিল বেশিরভাগ স্কুলের কচিকাঁচারা। সভায় ভীড় কম ছিল। দলীয় পতাকা নিয়ে সরকারী খরচে বাসে তৃণমূল কর্মীদের নিয়ে আসে পুলিশ ও প্রশাসন। প্রচন্ড ঠান্ডা, তার মধ্যে বৃষ্টিতে আপ্লুত মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা গেছে দার্জিলিং’র ঠান্ডার স্বাদ যেন কলকাতা ও জেলায় জেলায় চলছে। পায়েশ, পিঠেপুলি, খিচুরিতে মানুষ নাকি এই শীত খুব উপভোগ করছেন! মুখ্যমন্ত্রী এই অকাল বৃষ্টি ও শীতে আপ্লুত হলেও এদিন তার সভা ভরাতে যে ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুল ছুটি করিয়ে তুলে আনা হয়েছিল তাঁদের অবস্থা ঠান্ডায় করুন পরিনতি হয়েছে। দলে দলে ছাত্রদের রাস্তার ধারে বৃষ্টিতে ভিজে কাঁপতে দেখা গেছে। বাস তাদের স্কুল থেকে তুলে আনলেও ফেরার জন্য দীর্ঘ সময় তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে বৃষ্টিতে ভিজে। 
এদিন মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে একাধিক শিল্প আসার গল্প শুনিয়েছেন, সেখানে লক্ষ লক্ষ কাজের গল্পও তুলে ধরেন। তবে রাজ্যে স্কুলে চাকরি নিয়োগে নাকি বড় বাঁধা সিপিআই(এম), কংগ্রেস। আদালতে মামলা করে নতুন চাকরীতে বাধা দিচ্ছে সিপিএম। পূর্ব বর্ধমানকে মুখ্যমন্ত্রী শষ্য ভান্ডার বলে চিহ্নিত করে কৃষকদের বন্ধু বলে দাবি করেন। তারা যেন তাঁকে ভুল না বোঝেন। তিনি ১ লক্ষ ১ হাজার কৃষককে নাকি ২লক্ষ টাকা করে তাঁদের মৃত্যুর পর সাহায্য করেছেন। এই বিপুল কৃষকের মৃত্যু ১৩ বছরে তার মধ্যে আত্মহত্যা কত তা তিনি সংখ্যা ভেঙ্গে স্পষ্ট করেননি। মুখ্যমন্ত্রী জেলায় তার উন্নয়নের ফিরিস্তি দিতে গিয়ে দীর্ঘদিন বন্ধ হয়ে থাকায় মিষ্টি হাবের কথা উল্লেখ করেন। এখানকার মিষ্টি ছাড়াও  ল্যাংচা, সীতাভোগ, মিহিদানা কথা তুলে ধরেন। মিষ্টি হাব মুখ্যমন্ত্রী কল্পনা প্রসূত কিন্তু এই মিষ্টি হাব অলাভজনক হবার কারণে বন্ধ হয়ে যায়। সেই বন্ধ মিষ্টি হাব’কে তার সাফল্য বলে চালানোর চেষ্টা করেছেন। এদিন কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার যে তথ্য দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তা যে বাস্তবে সত্য নয় তা কৃষকরা বাস্তবে অনুধাবন করছেন। তার সময়ে ফড়ে ও মিল মালিকরা লাভবান হয়েছে কৃষক ফসলের লাভজনক দর না পেয়ে আত্মঘাতী হতে বাধ্য হয়েছেন। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সভাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই যান বাহন নিয়ন্ত্রণ করে রাস্তা বন্ধ করে দেয়। মমতা ব্যানার্জির সভায় লোক আনার জন্য অধিকাংশ বাস তুলে নেওয়া হয় ফলে মানুষের হয়রানির সীমা ছিল না। 
 

Comments :0

Login to leave a comment